শফিকুল ইসলাম : কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলায় প্রায় ১২’শ কৃষক সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। কবে নাগাদ এই সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে তাও জানে না ওই এলাকার কৃষক। কাজে আসছে না ১৪ কোটি টাকার রাবার ড্যাম। ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের স্বপ্ন।
দীর্ঘ ১৩ বছর পার হালেও উপজেলার জিঞ্জিরাম নদীতে ১৪ কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত হয়েছে খেওয়ারচর রাবার ড্যাম প্রকল্পটি। অপর দিকে বাঁধটি নির্মাণের অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকলেও তদারকির অভাবে নষ্ট হচ্ছে ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য রাবার ড্যামটি। রাবার ড্যামের দুপাশে অসহায় অনেক পরিবারের বসতবাড়ি রাবার ড্যামের ¯্রােতে নদী গর্ভে বিলিন হলেও ব্যবস্থা নেয়নি কেউ।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজলার যাদুরচর ইউনিয়নের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা খেওয়ারচর এলাকায় জিঞ্জিরাম নদীতে ২০১০ সালে রাবার ড্যাম প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। দু’দফায় এ প্রকল্পে সরকারের মোট ১৪ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। প্রথম দফায় ১২ কোটি ও দ্বিতীয় দফায় আর ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় হলেও সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে এলাকার কৃষকরা।
রবিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজলার লালকুড়া খেয়াঘাট হতে খেওয়ারচর রাবার ড্যাম এলাকাটির তিন কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। কাঁচা এই রাস্তাটির বেশিরভাগ এলাকা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের সুরক্ষা ও নদী শাসনের জন্য ২ কিলোমিটার সিসি বøক ও রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এলাকাবাসির চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৮৫ মিটার সেতু। সেতুর দু’পাশের সিসি বøক করার কথা থাকলেও নদের পূর্ব সাইটটি ছেপ দিয়ে নেপ দেওয়ায় নদীতে ধ্বসে গেছে। সেতুর নিচে থাকা রাবার ড্যামের ব্যাগটি ফোলানোর অভাবে নষ্ট হতে যাচ্ছে। তবে প্রকল্পটি দেখাশোনার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি।
ওই এলাকার কৃষক আবু তালেব, শেখ ফরিদ (সোবেক মেম্বার) ও আমির উদ্দিনসহ অনেকেই অভিযাগ করে বলেন, প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় বেশি দামে তেল কিনে (বোরো) ধানের আবাদ করতে হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে ঠিকাদার আর একটি স্বার্থ্যন্বেষি মহল। তাই সরেজমিন তদন্তপূর্বক অতি দূরুত রাবার ড্যামটি চালুর দাবি করছি।
খেওয়ারচর রাবার ড্যামের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন রিপন বলেন, এই রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় চারশ’ কৃষক সদস্য রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগেও প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এলাকার প্রায় ১২শ’ কৃষক ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন ও নলকূপ বসিয়ে চাষাবাদ করছেন। এতে করে ফসল উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। তিনি আরও জানান, সমিতির সদস্যরা প্রকল্পটির কোন সুবিধা না পাওয়ায় রাবারড্যাম পরিচালনা সমিতিটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই যত দুরত্ব সম্ভব বর্তমান সরকারের পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণসহ রাবার ড্যাম প্রকল্পটি চালুর দাবি করছি।
রৌমারী উপজলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সোমবার রাবারড্যাম প্রকল্পটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সেচ সুবিধার আওতায় আসবে ওই এলাকার আড়াই হাজার কৃষক পরিবারের ২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি। নদীতে মাছ চাষে লাভবান হবেন অনেক কৃষক। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি চালু হলে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনের সংখ্যা কমে যাবে। এতে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও অনেকটা কমে আসবে।
উপজেলা প্রকৌশলী যুবায়েদ হোসেন বলেন, রাবার ড্যাম এলাকার নদীর দু’পাশে যে পরিমাণ বাঁধ নির্মাণ করা দরকার, তা না করায় প্রকল্পটি চালু করা যাচ্ছে না। বাঁধ নির্মাণ না হলে রাবার ফুলিয়ে সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কমপক্ষে ৭ কিলামিটার পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করলে এ প্রকল্পের সুফল পাবে কৃষকরা।
সেতুর দু’পাশের সিসি বøক ধ্বসে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ওই নদে ড্র্যাজারে মাঠি তুলায় সিসি বøকের ক্ষতি হয়েছে। নতুন বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং বরাদ্দ আসলেই কাজ শুরু করা হবে। তিনি আরও বলেন রাবার ড্যামটির কাজ করা হয়েছে অনেক আগের কথা তখন আমি ছিলাম না। ফলে আমি আসার পর এবিষয় নিয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।