শফিকুল ইসলাম : সংবাদ প্রকাশের জেরে রৌমারীতে‘বাংলাদেশ প্রেসক্লাব’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন রৌমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমান আলী।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) উপজেলা পরিষদের স্মারক ও নিজ স্বাক্ষরে পাঠানো এক নোটিশে প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে উপস্থিত হয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার কথাও নোটিশে বলা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ প্রেসক্লাব’ রৌমারীর সভাপতি শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম বলেন, গত রবিবার একটি চক্রের ইন্ধনে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার দাবি জানিয়ে উপজেলা প্রশাসন চত্বরে স্মারকলিপি দিতে আসলে উপজেলা চেয়ারম্যান ইমান আলী তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলার কয়েকজন সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করেন। ‘রৌমারীতে অবৈধ ড্রেজার চালুর আশ্বাস দিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান’ শিরোনামে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। এই সংবাদ প্রকাশের জেরে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব রৌমারীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন চেয়ারম্যান।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের না ডেকে তিনি ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নোটিশ দিয়েছেন। একজন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সাংবাদিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার এখতিয়ার তার নেই। সুতরাং তার নোটিশের জবাব কিংবা তার অফিসে উপস্থিত হতেও আমরা বাধ্য নই। আমরা তার এমন কান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।’
চেয়ারম্যান মো. ইমান আলী কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা কোনও সাংবাদিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তাকে এ ধরণের প্রশ্ন করায় তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ আপনি প্রশ্ন করার কে? আমি উপজেলার অভিভাবক হিসেবে এটা করতে পারি। ’
রৌমারীতে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন হচ্ছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাংবাদিকরা এসব নিয়ে নিউজ করেন না।’ তার বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ প্রকাশ করা হয়ছে দাবি করে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘তারা প্রকৃত সাংবাদিক কি না তা জানতে আমি তাদের ডেকেছি। তারা প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিব বলে জানিয়েছি।’
তবে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে সাংবাদিকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারেন কিনা তার কোনও সদুত্তোর দেননি ইমান আলী। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সাংবাদিকরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাছুম ইকবাল বলেন, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে একজন জনপ্রতিনিধি আইনগতভাবে গণমাধ্যমকর্মীকে কোনক্রমেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যহত করার চেষ্টা করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ইমান আলী। তিনি সংক্ষুদ্ধ হয়ে থাকলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।