রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : নদ-নদীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে সরকারের ও উচ্চ আদালতের কড়া নিদের্শনা থাকলেও কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় এক শ্রেণীর বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ড্রেজার, কাকড়া (ট্রাক্টর) ও ভেকু মেশিন দিয়ে ধুমধামে ফসলি জমি থেকে বালু কেটে সাবার করছে।
প্রভাবশালীদের অনুমতি ও তাদের ছত্রছায়ায় বালুমাটি কাটা চলমান রয়েছে। এসব নিয়ে প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসি বারবার অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থ নিচ্ছেন না। তবে মাঝে মাঝে নাম মাত্র অভিযানও দিচ্ছেন প্রশাসন।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার সাথে সাথে ব্রহ্মপুত্র নদ, সোনাভরী, হলহলি, জিঞ্জিরামসহ ছোট নদীর তীব্র ¯্রােত বেড়ে যাওয়ায় ভাঙ্গন শুরু হয়। এতে হুমকির মুখে পড়ে চরশৌলমারী, বন্দবেড়, রৌমারী ও যাদুরচর ইউনিয়নের খেরুয়ারচর, ঘুঘুমারী, খেদাইমারী, বলদমারা, বাগুয়ারচর, পশ্চিম খনজনমারা, ফলুয়ারচর, পালেরচর, কুটিরচর, বাঘমারা, মিয়ারচর মুখতোলা, দিগলাপাড়া, ধনারচর, বকবান্দা, খেওয়ারচর, শ্মসানঘাট, আলগারচর বাগেরহাটসহ ১৯ টি গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন।
জানা যায় দীর্ঘদিন থেকে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে একটি বালু উত্তোলন চক্র ব্রহ্মপুত্র নদের ঘুঘুমারী থেকে বলদমারা হয়ে ফলুয়ারচর নৌকাঘাট পযর্ন্ত প্রতিদিন অবৈধ ড্রেজার ও কাকড়ার মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছেন। এছাড়াও ভেকু মেশিন দিয়ে পাখীউড়া ব্রীজসহ বিভিন্নস্থানে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত ব্রীজ হুমকির মুখে পড়ছে। উত্তোলনকৃত বালু মাটি উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন করে বিক্রয় করে। বর্তমানে ফলুয়ারচর নৌকা ঘাটে বালু উত্তোলন নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে তিনটি পক্ষের মধ্যে। অপরদিকে ট্রাক্টর চলাচলে রাস্তা গুলি ভেঙ্গে যাওয়ায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্র ছাঁয়ায় জমজমাট ভাবে বালু ব্যবসায়ীরা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। বালু ব্যবসায়ী চক্রে জড়িত কুটিরচর গ্রামের বালু মামলার হাজতবাস অন্যতম বাবলু মিয়া, প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে সর্বক্ষণ বালু উত্তোলন করেন বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।
এদিকে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত কবির হোসেন, বাগুয়ারচর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, হায়দার আলী, রফিকুল ইসলাম, জয়াউর রহমান. বাইটকামারী গ্রামের আমজাদ হোসেন, আফসার আলী, দিগলাপাড়া গ্রামের কামাল উদ্দিন, ধনারচর গ্রামের আজিবর রহমান, দুবলাবাড়ী গ্রামের ইব্রাহীম, জন্তির কান্দা গ্রামের বাবু মিয়া, বোল্লাপাড়া গ্রামের নুরনবী, হাসান আলী, আব্দুর রাজ্জাক, শাহা আলম, তারিকুল্যাহ, কালাম, নাসির উদ্দিন, কাশেম, মাজম আলী, কুটিরচর খানপাড়া এলাকার ছবির খান, ছোরমান খান, রিয়াজুল হক, ফলুয়ারচর গ্রামের আবু সাইদ মিয়াসহ আরও অনেকে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ধনারচর গ্রামের সামছুল আলম, লিয়াকত হোসেন, কুটিরচর গ্রামের জিয়ারুল ইসলাম, বাগুয়ারচর গ্রামের আমজাদ হোসেন, আব্দুস সবুর, বলদমারা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান, হাফেজ আলী, চরখেদাইমারী গ্রামের আলমেজ আলী, আব্দুর রশিদসহ অনেকেই জানান, ফলুয়ারচর নৌকা ঘাট থেকে ঘুঘুমারী নৌকাঘাট পর্যন্ত নদী থেকে যেভাবে ড্রেজার. কাকড়া (ট্রাক্টর) ও ভেকু দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে, এভাবে অব্যাহত থাকলে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত গ্রামগুলো নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বালু ব্যবসায়ী চক্রদের গ্রামবাসীরা বাধা দিলে তাদেরকেও নানা ভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়।
এবিষয়ে অভিযোগকারী জিয়ারুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ফলুয়ারচর ঘাট আমার জমি সংলগ্ন ঘাটের কিনারা ভেঙ্গে অবৈধ কাকড়ার মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে আর কয়েকদিন উত্তোলন করলে ফলুয়ারচর নৌকাঘাট বিলিন হবে। অন্যদিকে পানি বাড়ার সাথে সাথে নদের পারের মানুষ ভাঙ্গন কবলে পরবে। বালু উত্তোলনে বাধা দিলে আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখায় ও মারার হুমকি দেয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূবন আখতারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করার সংবাদ পেয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখার পর বন্ধ করা হয়েছে। তবে পরে কেউ নির্দেশনা অমান্য করে বালু উত্তোলন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।