কাজিপুর(সিরাজগঞ্জ)প্রতিনিধি : বিদ্যাললের নাম ‘১৫ নম্বর চোরমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়’। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার শুভগাছা ইউনিয়নের ওয়াপদা বাধের ঢালে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সনাক্ত করা মুস্কিল।
নিয়মানুযায়ী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড এবং মূল রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিদ্যালয়ের দুরত্ব ও যাবার রাস্তার নির্দেশনামূলক চিহ্ন থাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই বিদ্যালয়ের কোনটিই নেই। নেই ক্লাস রুটিন। গত শনিবার(১১জুন) সরেজমিন ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা মিলেছে নানা অব্যবস্থাপনা আর শিক্ষার্থী ও শিক্ষার দৈন্যদশার চিত্র।
কাজিপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসসূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে বিদ্যালয়টিতে যোগদান করেন মাজেদা খাতুন।যোগদানের পর থেকেই বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ নিম্নমুখী। ওই বিদ্যালয়ে সহকারী চারজন শিক্ষকের সাথে প্রধান শিক্ষিকা প্রায়ই অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন।প্রতি বছর বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দকৃত টাকাও তিনি বিদ্যালয়ের কাজে ব্যবহার করেন না। কাজিপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত বিদ্যালয়টিতে শনিবার বেলা পৌণে একটার গিয়ে দেখা মেলেনি কোন সাইনবোর্ডের। এবছর ওই বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দকৃত রুটিন মেরামতের চল্লিশ হাজার টাকায় ওই প্রধান শিক্ষিকা ক্রয় করেছেন দুটি কাঠের জানালা ও একটি কাঠের দরোজা।যার বাজারমূল্য পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। আর টিনশেড বিদ্যালয় ঘরের সামনে সামান্য মাটি ফেলা হয়েছে।ক্রয়কৃত দরোজা জানালাগুলোও ঘরে না লাগিয়ে একটি পরিত্যক্ত কক্ষে মাটিতে ফেলে রেখেছেন। বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ডটিও একটি কক্ষে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে মাত্র তিন জন করে ছাত্র আর পঞ্চম শ্রেণিতে রয়েছে চারজন শিক্ষার্থী।এছাড়া শিশু , প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে যথাক্রমে তেইশ, বারো ও ছয়জন ছাত্র খাতায় থাকলেও বাস্তবে পাওয়া যায়নি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা মাজেদা খাতুন জানান, ভাঙনের কারণে ২০১৭ সালে এই বিদ্যালয়টি বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয়।এ কারণে ছাত্র কম। দরোজা জানালা দুই এক দিনের মধ্যে লাগানো হবে। আর সিমেন্টের খুঁটি না পাওয়ায় সাইনবোর্ড লাগানো যায়নি। ক্লাস রুটিন বিষয়ে তিনি জানান, সদ্যই রুটিন তৈরি করে শিক্ষা অফিস থেকে অনুমোদন নেয়া হয়েছে ”
ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হানজালা বলেন, “আমি গত মাসের ২৪ তারিখে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছি। আমাকে কাজিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী ওই প্রধান শিক্ষিকার সম্পর্কে আমাকে সতর্ক করে বলেছেন সবকিছু ঠিকঠাক মতো দেখতে। তার(প্রধান শিক্ষকের) বিষয়ে আরও নানা অনিয়মের অভিযোগ শুনেছি।সহকর্মিদের সাথেও তিনি খারাপ আচরণ করেন শুনেছি। সবকিছুই খতিয়ে দেখা হবে।”
কাজিপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, “রুটিন ছিলোনা। আমি সতর্ক করার পরে এখন তৈরি করেছে।আরও নানা অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখছি। অফিসের লোকবল একেবারেই কম হওয়ায় আমার পক্ষে খোঁজ নেয়াও হয়ে ওঠে না” ।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।