সেবা ডেস্ক : "সিসা দূষণ প্রতিরোধে, আমরা আছি একসাথে" এই স্লোগানের সাথে একাত্বতা রেখে প্রায় দুইশতাধিক মানুষ অংশ নিয়েছিলেন পিওর আর্থ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ আয়োজিত সিসা দূষণের প্রভাব এবং প্রতিকার বিষয়ক একটি সচেতনতামূলক জনসভায়।
৫ মার্চ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার রাজাবাড়ী গ্রামে এই জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়। জনসমাবেশটি আইসিডিডিআর,বি এবং ইউনিসেফ এর সহযোগিতায়, এবং ইউএসএইড, টাও, এবং ক্ল্যারিওস ফাউন্ডেশন-এর অর্থায়নে অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জাপুরের এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি আরও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আব্দুল মোতালেব, উপপরিচালক, এয়ার পলিউশন অ্যান্ড কন্ট্রোল, পরিবেশ অধিদপ্তর। এছাড়া ছিলেন মোহাম্মাদ লুৎফুল কবির, ফিল্ড ইনভেস্টিগেশন অফিসার, পিওর আর্থ বাংলাদেশ; ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান, লিড অ্যান্ড প্রজেক্ট কোওরডিনেটর, এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারভেনশানস ইউনিট, আইসিডিডিআর,বি; জান্নাতুল ফেরদৌস, হেলথ অফিসার, ইউনিসেফ।
পিওর আর্থ বাংলাদেশের ফিল্ড ইনভেস্টিগেশন অফিসার, মোঃ লুৎফুল কবির বলেন, “মির্জাপুরে আমরা যে অবৈধ সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি রিসাইক্লিং এর কারখানা খুঁজে পেয়েছিলাম সেখানে প্রচুর ব্যাটারির আবর্জনা ছিল এবং মাটি সিসা দূষিত ছিল। এখানে বসবাসরত প্রায় ৬০০ এলাকাবাসী এবং পরিবেশের জন্য তা মারাত্মক হুমকি কারণ হওয়ায় আমরা এই দূষিত এলাকাগুলো পরিষ্কার করার লক্ষ্যে 'সিসা দূষণ প্রতিকার' প্রকল্প হাতে নেই।”
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আব্দুল মোতালেব, উপপরিচালক, এয়ার পলিউশন অ্যান্ড কন্ট্রোল, পরিবেশ অধিদপ্তর বলেন, “আপনাদের আশেপাশে কোন ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানা থাকলে উপজেলা
অফিসারকে এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের হেল্পলাইনে বা ইমেইলে জানাতে পারেন।” তিনি আরও বলেন, “মির্জাপুর এলাকার সিসা দূষণ প্রতিরোধে পিওর আর্থ দারুণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা খুবই প্রশংসনীয়।”
ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান, লিড অ্যান্ড প্রজেক্ট কোওরডিনেটর, এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারভেনশানস ইউনিট, আইসিডিডিআর,বি বলেন, “রক্তে উচ্চ মাত্রার সিসা স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ এবং মস্তিকের ক্ষতি করে। সিসা দূষণ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় এর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।”
ইউনিসেফের হেলথ অফিসার জান্নাতুল ফেরদৌস মতবিনিময় করতে গিয়ে বলেন, “সিসা দূষণে শিশুদের হাড় এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে দারুণ ক্ষতি হয়। শিশুরা যেন পরিপূর্ন সম্ভাবনা নিয়ে, নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে, সেই অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।”
মির্জাপুরের মেম্বার জনাব কাসেম এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, “এলাকার মানুষেরাই টাকার লোভে পরে কারখানার মালিকদের কাছে অবৈধ ব্যাটারি কারখানা তৈরির জন্য তাদের জমি ভাড়া দেয়। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, এমন বিষাক্ত কাজের জন্য নিজের জমি ভাড়া দিবেন না। আমাদের এলাকার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে সিসা দূষণ প্রতিরোধে একসাথে কাজ করতে হবে।”
ঘণ্টাব্যাপী এই আয়োজনটি শেষ হয় সুন্দরবন থিয়েটারের সিসা দূষণের উপর লোকসঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু সিসা দূষণের শিকার। সিসা দূষিত দেশ হিসেবে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। পুরাতন সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি রিসাইক্লিং ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত সিসা-গলানোর ধোঁয়া সিসা দূষণের অন্যতম উৎস। পিওর আর্থ এ পর্যন্ত এরকম প্রায় ৩০০ দূষিত এবং অবৈধ সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি রিসাইক্লিং ফ্যাক্টরির সন্ধান পেয়েছে টক্সিক সাইট আইডেন্টিফিকেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।