সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে’র (বারি) বিজ্ঞানীরা কাঁঠালে’র পাল্প দিয়ে উন্নতমান, দারুণ স্বাদ ও বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ দই, চকোলেট, আইসক্রিম ও চিজ তৈরি’র উপক’রণ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যা সারা বছ’র অতি সহজেই যে কেউ তৈরি ক’রতে পা’রবে।
সম্প্রতি কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনে’র সহায়তায় পোস্টহা’রভেস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রসেসিং অ্যান্ড মার্কেটিং অব জ্যাকফ্রুট প্রকল্পে’র মাধ্যমে এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়।
বারি’র পোস্টহা’রভেস্ট টেকনোলজি বিভাগে’র ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্পে’র প্রধান গবেষক ড. মো: গোলাম ফে’রদৌস চৌধুরী’র তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামে’র ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সাইন্স ইউনিভার্সিটি’র ফুড সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে’র চা’রজন ছাত্র এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তাকে সহায়তা করেন।
গোলাম ফে’রদৌস চৌধুরী জানান, কাঁঠালে’র বহুমুখী ব্যবহারে’র প্রযুক্তি উদ্ভাবনে’র ধারাবাহিকতায় এ বছ’র আমরা দই, পুষ্টিক’র আইসক্রিম, চকোলেট ও চিজ তৈরি’র প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এগুলো তৈরি ক’রতে দুধে’র সাথে শুধু কাঁঠালে’র পাল্প প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো উদ্যোক্তা কাঁঠালে’র পাল্প সং’রক্ষণ করেন, তবে সেগুলো দিয়ে সারা বছ’রই এসব পণ্য উৎপাদন ক’রতে পা’রবেন।
কাঁঠাল যেহেতু নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল, কাজেই পাল্প দিয়ে তৈরি করা পণ্যও সাধা’রণ বাজারে’র পণ্য থেকে বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যসম্মত হবে।
এখানে কোনো অতিরিক্ত বা কৃত্রিম ‘রঙ বা ফ্লেভা’র ব্যবহা’র করা হয় না। পণ্যগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এবং দেখতেও খুবই সুন্দ’র। তিনি জানান, দই তৈরিতে শতকরা তিন-পাঁচ ভাগ পাল্প ব্যবহা’র করা হয়।
আইসক্রিম তৈরিতে ব্যবহা’র করা হয় পাঁচ-আট ভাগ পাল্প। আ’র চিজ তৈরিতে ৫০-৬০ ভাগ পাল্প ব্যবহা’র ক’রতে হয়।
ফলে ক্ষুধা
নিবা’রণ ও পুষ্টি চাহিদা
পূ’রণে এসব পণ্য আদর্শ
পণ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে নিঃসন্দেহে।
তৈরিকৃত খাদ্যগুলো থেকে অনেক ক্যালরি
পাওয়া যাবে।
ড. চৌধুরী আরো জানান, যে কেউ স্বল্প টাকা বিনিয়োগ করে এগুলো তৈরি ক’রতে পা’রবেন। এসব তৈরি ক’রতে তেমন বড় ধ’রনে’র কোনো যন্ত্রপাতি’র দ’রকা’র নেই।
একটি ডিপ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেট’র বা ছোটখাটো কিছু হোম মেড যন্ত্রপাতি দিয়েই এসব পণ্য খুব সহজেই তৈরি করা যাবে।
যদি কোনো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ৮০০ টাকা’র কাঁচামাল ব্যবহা’র করেন, তাহলে তিনি খুব সহজেই ১৫০০ টাকা’র পণ্য তৈরি ক’রতে পা’রবেন। অর্থাৎ বিনিয়োগে’র দ্বিগুণ লাভ ক’রতে পা’রবেন।
আ’র দেশে’র বড় বড় শিল্প
প্রতিষ্ঠান যদি ব্যাপক পরিসরে
আমাদে’র প্রযুক্তি ব্যবহা’র করে এসব পণ্য
তৈরি করেন, তাহলেও দেশে এ সব
পণ্যে’র ব্যাপক বাজা’র সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি বিদেশেও
‘রফতানি করা’র সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ড. ফে’রদৌস জানান, কাঁঠাল দিয়ে বিভিন্ন প্রযুক্তি
উদ্ভাবনে’র প’র এ’র পাল্প
দিয়ে সারা বছ’র ব্যবহা’র
করা যায় এমন কি
পণ্য উৎপন্ন করা যায়, তা
নিয়ে ভাবতে থাকি। যেহেতু প্রতি বছ’র পাকা কাঁঠালই
বেশি নষ্ট হয়, কাজেই
পাকা কাঁঠাল থেকে পাল্প সংগ্রহ
করে তা সহজেই সারা
বছ’র সং’রক্ষণ করা যায়। এ
চিন্তা থেকেই দই, আইসক্রিম, চকোলেট
ও চিজ তৈরি’র পরিকল্পনা
নেয়া হয় এবং সফলতাও
আসে। ইতোমধ্যে আমাদে’র এখানে চট্টগ্রামে’র ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সাইন্স ইউনিভার্সিটি’র ফুড সাইন্স অ্যান্ড
টেকনোলজি বিভাগে’র চা’রজন ছাত্রÑ সমীক ক’র প্রান্ত,
আবি’র হাসান রিজন, অভিক চাকমা ও
আসম রাফসানজানি, তাদে’র অ্যাকাডেমিক কোর্স শেষ করে ট্রেনিং
ক’রতে আসে। তাদে’রকে এ
কাজে সম্পৃক্ত করি এবং সফলভাবে
আমরা প্রযুক্তি উদ্ভাবন ক’রতে সক্ষম হই। যেহেতু পার্বত্য
চট্টগ্রামে অনেক কাঁঠাল উৎপন্ন
হয়, কাজেই তারা যদি এসব
প্রযুক্তি ওই এলাকায় ছড়িয়ে
দিতে পারেন, তাহলে সেখান থেকেও কাঁঠাল চাষি, উদ্যোক্তা বা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা
লাভবান হতে পা’রবে বলে
আমরা বিশ্বাস করি।
বারি’র
পোস্ট হা’রভেস্ট টেকনোলজি বিভাগে’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান
কৃষিবিদ হাফিজুল হক খান জানান,
প্রতি বছ’র আমাদে’র দেশে
বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল নষ্ট হয়। অপচয়ে’র
হাত থেকে ‘রক্ষা ক’রতে
কাঁঠালে’র বহুবিধ ব্যবহারে’র এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে’র
ফলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান
হতে পা’রব। দই, আইসক্রিমসহ যেসব
পণ্য উৎপন্ন করা হয়েছে, তা
পুষ্টিক’র, স্বাস্থ্যসম্মত ও লাভজনক হবে।
আমরা যদি এ সেক্টরে
প্রশিক্ষিত লোকবল তৈরি ক’রতে পারি,
তাহলে এ’র ব্যাপক বাণিজ্যিক
সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে, যা কাঁঠালে’র
ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ক’রতেও বিরাট অবদান রাখবে এবং টেকসই উন্নয়ন
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে’র পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ক’রবে বলে
আশা করা যায়।
এ’র
আগে পোস্টহা’রভেস্ট টেকনোলজি বিভাগে’র বিজ্ঞানীরা কাঁঠাল দিয়ে চিপস্, আচা’র,
কাটলেট, জ্যাম, জেলিসহ প্রায় ২০টি পণ্যে’র উপক’রণ
ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিল, যা তরুণ উদ্যোক্তাদে’র
মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও সাড়া জেগেছিল।
এসব পণ্য উৎপাদন ও
বাজা’রজাত করে অনেক উদ্যোক্তাই
ইতোমধ্যে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে শুরু
করেছে। শুধু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাই
নয়, বড় বড় শিল্প
প্রতিষ্ঠানও এসব পণ্য উৎপাদন
এবং বাজা’রজাতক’রণ বা দেশে’র বাইরে
‘রফতানি ক’রতে আগ্রহী হয়ে উঠে বলে
জানা যায়।
বারি’র
পোস্টহা’রভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ জানায়, প্রতি বছ’র দেশে উৎপাদিত
মোট কাঁঠালে’র ৪৩-৪৫ ভাগ
শুধু প্রক্রিয়াজাতক’রণ ও সং’রক্ষণে’র অভাবে
নষ্ট হয়ে যায়। দেশে’র
জাতীয় ফলে’র এ অপচয় রোধে
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন হাতে নেয় পোস্টহা’রভেস্ট
ম্যানেজমেন্ট, প্রসেসিং অ্যান্ড মার্কেটিং অব জ্যাকফ্রুট নামে
একটি গবেষণা প্রকল্প। এ প্রকল্পে’র মাধ্যমে
বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন ক’রতে থাকেন কাঁঠালে’র বহুমুখী ব্যবহারে’র নানা উপক’রণ ও
প্রযুক্তি যাতে উদ্যোক্তারা সারা
বছ’রই বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে কাঁঠালকে
ব্যবহা’র ক’রতে পারে। কাঁঠালে’র অপচয় রোধ, কৃষকদে’র
ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতক’রণ, উদ্যোক্তা তৈরি, বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানে’র
মাধ্যমে কাঁঠালে’র পণ্যে’র বড় ধ’রনে’র উৎপাদন
কর্মে’র মাধ্যমে এটাকে শিল্পে’র মর্যাদা প্রদান, ব্যাপক কর্মক্ষেত্রে’র ব্যবস্থা, সর্বোপরি কাঁঠালে’র প্রক্রিয়াজাতক’রণ পণ্য বিদেশে ‘রফতানি
করে বৈদেশীক মুদ্রা অর্জনে’র মাধ্যমে দেশে’র অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা’র উদ্দেশ্যে ওই প্রকল্পে’র মাধ্যমে
একে’র প’র এক প্রযুক্তি
উদ্ভাবন করেন ড. গোলাম
ফে’রদৌস চৌধুরী’র নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। তারা কাঁচা কাঁঠাল
ও পাকা কাঁঠালে’র যেসব
প্রক্রিয়াজাতক’রণ পণ্য উদ্ভাবন করেছেন
যা দেশে’র বড় বড় সুপা’র
শপে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়
এবং ভোক্তা পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
গত বছ’র ঢাকা’র কাওলা’র আছমা বেগম মিনা বাজারে ৩-৪ লাখ টাকা’র শুধু ফ্রেশ-কাট কাঁচা কাঁঠালই বিক্রি করেন। মার্কেটে ব্যাপক চাহিদা অনুযায়ী কোভিড-১৯ এ’র কা’রণে পুরো স’রবরাহ ক’রতে পারেননি। কাঁঠালে’র প্রযুক্তি উদ্ভাবনে’র ধারাবাহিকতায় এবা’র তারা পাকা কাঁঠালে’র পাল্প দিয়ে মুখরোচক দই, পুষ্টিক’র আইসক্রিম, চকোলেট এবং চিজ তৈরি’র উপক’রণ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদে’র ধা’রণা, খুব স্বল্প মূলধন বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা এসব পণ্য নিয়ে কাজ ক’রলে তারা সহজেই খুব বেশি লাভবান হতে পা’রবে এবং সারা বছ’রই তৈরি ক’রতে সক্ষম হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।