শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী প্রতিনিধি (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা বৃহত্তম জনগোষ্টির একটি জনপদ। সভ্যতার চরম উৎকর্ষতায় এসেও বাঁশখালীতে সভ্যতার চাকা খ্যাত বিদ্যুতের লুকোচুরিতে অতিষ্ট এ অঞ্চলের লোকজন।
কয়েকযুগ অতিবাহিত হয়ে গেলেও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনো স্বপ্নের মতো অধরা। কখনো বিদ্যুতের ভেলকিবাজি, কখনো গাছ কাঁটার নামে দীর্ঘ বিরতী এ যেন জবাবদিহীতা ছাড়া খামখেয়ালি বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের সেবার মান।
এমনিতেই গ্রীষ্মের প্রখরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাঁশখালীতে লোডশেডিং বেড়ে যায় চরমাকারে।
এখন সারাবছর জুড়ে পল্লীবিদ্যুতের ভেলকিবাজি যেন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকলেও কমেনি লোডশেডিং। ইদানিং পল্লীবিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রায় ৯৮ হাজার গ্রাহক।
এ অঞ্চলের মানুষ নিত্য লোডশেডিং এ ভোগছে। প্রতিদিনই বিদ্যুৎতের লুকোচুরি খেলায় জনজীবন চরমভাবে অতিষ্ট।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সারাদেশে টানাবৃষ্টি হয়েছিল। এ সময় বিদ্যুৎ না থাকাটাই পুরানো ট্রাডিশন। এমনিতে হালকা বৃষ্টি হলেই এ অঞ্চলের লোকজন আগে থেকেই ধারণা করে থাকে সারাদিন আর বিদ্যুতের দেখা পাবে না।
ঝড়-বৃষ্টির দিনে বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ ঐতিহ্যগতভাবেই উধাও হয়ে যায়। রাত আর দিন বলে নেই কোন তফাৎ, বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকেনা।
পুরো বছর জুড়েই বিদ্যুতের লুকোচুরি থাকে অস্বাভাবিকভাবে। বিদ্যুৎতের এহেন লুকোচুরি খেলায় মারাত্মকভাবে অস্বস্তিতে আছেন বাঁশখালীর লোকজন। দিনের অধিকাংশ সময় থাকে না বিদ্যুৎ। একটু বাতাস আর বৃষ্টি হলেই ঘন্টার পর ঘন্টা দেখা নেই বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের।
শীত মৌসুমে এসেও বিদ্যুতের ভেলকিবাজির কোন পরিবর্তন হয়নি। কেন অস্বভাবিকহারে লোডশেডিং জানতে চাইলে বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সারাদিন গাছ কাঁটার অভিযোগ তুলেন।
লাইনের সমস্যার দোহাই দিয়ে টানা ৭-৮ ঘন্টার বেশী সময় ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে অতিষ্ট করে রাখে জনপদের লোকজনদের।
এমনকী গভীর রাতেও বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না বলেই চলে। কখনো নোটিশ দিয়ে, কখনো নোটিশ ছাড়া গাছ কাঁটার অভিযোগে পুরোদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখে কতৃপক্ষ।
পল্লীবিদ্যুৎ অফিসসূত্রে জানা যায়, আবাসিক-অনাবাসিক সহ প্রায় ৯৮ হাজারের অধিক গ্রাহকদের সেবা দিতে চট্টগ্রাম পল্লীবিদ্যুৎ সমিটি-১ জোনাল অফিস সহ উপজেলার নাপোড়া, জলদী, বৈলছড়ি, গুনাগরি ৪ টি সাবস্টেশন রয়েছে।
লোকবল কম থাকায় অনেক সময় বিচ্ছিন্ন সংযোগ চালু করতে সময় লাগে। তাই বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতে একটু দেরী হয়।
তাছাড়া দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া হয়ে দীর্ঘ ৪৬ কি.মি অতিক্রম করে বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ আসে। সড়কে গাছপালা থাকার কারণে অব্যবস্থাপনার ফলে বৃষ্টি-বাদলের সময় সাময়িক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে।
বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের ভেলকিবাজির দরুণ বিদ্যুৎ নির্ভর সরকারি, বেসরকারি দপ্তরের সেবা পেতে হিমশিম খাচ্ছে লোকজন। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও নিস্তার নেই।
এই মাত্র বিদ্যুৎ আসে, এই মাত্র চলে যায়। বছর যেতে না যেতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ব্যবহারের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি।
সরকারী-বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বিরতিহীন সেবা দিতে গিয়ে লোডশেডিংয়ের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিশেষ করে বিদ্যুৎ নির্ভর মোটরচালিত যন্ত্রের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি উত্তোন করা পরিবারগুলো পড়ে যায় চরম ভোগান্তিতে।
পল্লীবিদ্যুতের এ স্বেচ্ছাচারিতাকে অনেকেই নিরীহভাবে মেনে নিয়েছেন। তারা সংশ্লীষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি বার বার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও মিলছেনা কোন সমাধান।
অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পল্লীবিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে আশুপ্রতিকার চান আবার অনেকে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে দেখা গেছে।
বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, আমাদের বিদ্যুতের লাইনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে টানানো।
এখানে গাছপালা থাকার কারণে ঝড়-বৃষ্টি হলে লাইনের সমস্যা হয়। তাই বর্ধিত গাছের ডালপালা কাটতে গিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে বিঘ্ন ঘটেছে। অপ্রতুল জনবলের কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সংযোগ চালু করতে সময় লাগায় লোডশেডিং হচ্ছে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।