সেবা ডেস্ক: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে’র বৈশ্বিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক মাস ধরে ক্রমেই আশাব্যঞ্জক হারে কমছিল। স্বস্তি’র সুবাতাস এনেছিল জোরালো টিকাদান কর্মসূচি।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনা’র নতুন ধ’রন 'ওমিক্রন' স্বস্তি’র বদলে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী আবা’র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা’র কা’রণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অতিসংক্রামক এই ধ’রন।
এ ছাড়া এ মুহূর্তে বিদেশফে’রতদে’র বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ’রই মধ্যে আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া ওমিক্রন ধ’রনকে 'উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট' বলে আখ্যায়িত করেছে।
আফ্রিকান ওমিক্রন বি.১.১.৫২৯ নামে’র ভ্যারিয়েন্টটি করোনা’র সবচেয়ে বেশিবা’র জিন বদলানো সংস্ক’রণ বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র গবেষকরা।
প্রাথমিকভাবে ধা’রণা করা হচ্ছে, আফ্রিকান
নতুন এই ভ্যারিয়েন্টে পুনঃসংক্রমিত
হওয়া’র অনেক বেশি ঝুঁকি
‘রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা’র পাশাপাশি বতসোয়ানা, জার্মানি, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশে শতাধিক মানুষে’র শরীরে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে’র সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকাসহ প্রতিবেশী আট দেশে’র সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ আ’রও অনেক দেশ।
এ’রই মধ্যে যারা ওই আট
দেশ থেকে ফিরেছে, তাদে’র
বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে।
বাংলাদেশও দক্ষিণ আফ্রিকা’র সঙ্গে যোগাযোগ স্থগিত করা’র সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গতকাল শনিবা’র দুপুরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র দ্বিতীয় বিশেষ অধিবেশনে যোগদানে’র জন্য সুইজা’রল্যান্ডে’র জেনেভা’র উদ্দেশে
ঢাকা ত্যাগে’র আগে এক অডিও
বার্তায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স’রকারে’র এ সিদ্ধান্তে’র কথা
জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ আফিকান ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিভাগ অবহিত। এটি অত্যন্ত সংক্রমণপ্রবণ।
এ কা’রণে দক্ষিণ আফ্রিকা’র সঙ্গে সব ধ’রনে’র যোগাযোগ
স্থগিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য
মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্নিষ্টদে’র এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জনসাধা’রণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক পরা’র ওপ’র গুরুত্বারোপ করে জাহিদ মালেক বলেন, সবাইকে মাস্ক প’রতে হবে।
মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধিও। জেলা পর্যায়ে’র সংশ্নিষ্টদে’র জনসাধা’রণকে সতর্ক ক’রতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে আগতদে’র ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন ক’রতে হবে।
করোনা নেগেটিভ
সনদ ও স্ট্ক্রিনিং ছাড়া
কেউ যাতে দেশে প্রবেশ
ক’রতে না পারেন, সে
বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্নিষ্ট শাখাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিটা ও ডেলটা’র চেয়েও বেশি সংক্রামক ওমিক্রন :যুক্তরাজ্যে’র স্বাস্থ্য বিভাগে’র সংক্রামক রোগবিষয়ক সংস্থা ইমপেরিয়াল ডিপার্টমেন্ট অব ইনফেকশাস ডিজিজে’র একজন ভাইরোলজিস্টে’র উদ্ৃব্দতি দিয়ে বিবিসি’র প্রতিবেদনে নতুন এই ভ্যারিয়েন্টকে ভয়াবহ এবং এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে খারাপ ধ’রন বলে অভিহিত করা হয়েছে।
এই ভ্যারিয়েন্টে’র 'মিউটেশনে’র
ধারা অস্বাভাবিক' এবং অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট
থেকে এটি অনেক আলাদা।
দক্ষিণ আফ্রিকা’র সেন্টা’র ফ’র এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনে’র পরিচালক অধ্যাপক টুলিও ডি অলিভিয়েরা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সব মিলিয়ে ৫০টি মিউটেশন ‘রয়েছে।
এ’র মধ্যে ৩০টি মিউটেশনই স্পাইক প্রোটিনে। অধিকাংশ টিকাই স্পাইক প্রোটিনে’র এই ভ্যারিয়েন্টগুলোকে আক্রমণ করে।
ভাইরাসে’র যে অংশটি 'রিসিপ্ট’র বাইন্ডিং ডোমেইন' শরীরে’র কোষে’র সঙ্গে প্রথম সংযোগ ঘটায়, নতুন ভ্যারিয়েন্টে সেটি’র ১০টি মিউটেশন ‘রয়েছে।
ভয়াবহ ক্ষতিক’র হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করা ডেলটায় এই
মিউটেশন ছিল মাত্র দুটি।
অনেক মিউটেশন থাকা মানেই ক্ষতিক’র নয় উল্লেখ করে অলিভিয়েরা বলেন, মিউটেশনগুলো প্রকৃতভাবে কী ধ’রনে’র ক্ষতি ক’রছে তা জানা জরুরি।
চিন্তা’র বিষয় হলো- চীনে’র
উহানে সৃষ্ট ধ’রনে’র চেয়ে এটি ভিন্ন।
এ কা’রণে করোনাভাইরাসে’র সংক্রমণ প্রতিরোধে তৈরি হওয়া টিকা,
যেগুলো মূল ধ’রনটি ব্যবহা’র
করে বানানো হয়েছিল, নতুন ধ’রনে’র বিরুদ্ধে
সেটি সমানভাবে কার্যক’র নাও হতে পারে।
নতুন আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টে’র কয়েকটি মিউটেশন আগে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টে’র ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। এ’র মধ্যে একটি এন৫০১ওয়াই মিউটেশন।
এটি করোনাভাইরাসকে সহজে সংক্রমিত হতে সহায়তা করে বলে ধা’রণা করা হয়। নতুন ভ্যারিয়েন্টে আ’রও কিছু মিউটেশন ‘রয়েছে।
যা’র ফলে শরীরে’র অ্যান্টিবডি
ভাইরাসকে শনাক্ত ক’রতে পারে না। একই
সঙ্গে টিকাকে অপেক্ষাকৃত কম কার্যক’র ক’রতে
পারে।
কেমব্রিজ
বিশ্ববিদ্যালয়ে’র অধ্যাপক রাভি গুপ্তা বলেন,
বিটা শুধু ইমিউন সিস্টেমকে
ফাঁকি দিত আ’র ডেলটা’র
সংক্রমণ ক্ষমতা ছিল অনেক বেশি।
কিন্তু নতুন ভ্যারিয়েন্টে’র এই
দুই ধ’রনে’র ক্ষতি করা’রই সক্ষমতা ‘রয়েছে।
বিদেশফে’রতদে’র বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন, মত বিশেষজ্ঞদে’র :বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে’র সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আফ্রিকান নতুন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে।
তাতে ধা’রণা করা হচ্ছে, এটি অত্যন্ত সংক্রমণপ্রবণ।
দ্রুততা’র সঙ্গে ছড়ানো’র ক্ষমতা এবং তীব্রতা বাড়াতে পারে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টে’র বিরুদ্ধে টিকা কতটুকু কার্যক’র হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।
টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে বিদেশ থেকে আগতদে’র বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ক’রতে হবে।
বিদেশ থেকে আগতদে’র ক্ষেত্রে পিসিআ’র টেস্ট নেগেটিভ হয়ে প্রবেশ ক’রতে হবে এবং সংক্রমণপ্রবণ দেশে’র সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন রাখতে হবে।
সংক্রমিত ব্যক্তিদে’র
চিকিৎসা’র জন্য হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত
রাখা’র ওপ’র সর্বোচ্চ গুরুত্ব
দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন
তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে’র রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা’র সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজি’র আহমেদ বলেন, এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ক’রতে হবে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
হাসপাতালগুলোতে শতভাগ
প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে
করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও মানুষ চিকিৎসা পায়।
আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় প্রস্তুতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে’র মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খু’রশীদ আলম বলেন, কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সঙ্গে অধিদপ্তরে’র দুজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক দ্রুতই বৈঠক ক’রবেন।
একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদে’র সঙ্গে একটি বৈঠক হবে। তাদে’র পরামর্শ ও সুপারিশগুলো প্রস্তাবনা আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে’র কাছে পাঠানো হবে।
তাদে’র নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।