শফিকুল ইসলাম: ভারতের আসাম, মেঘালয় প্রদেশের বন্যার পানি ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ ও গত কয়েক দিনে ভারী বর্ষণ হওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদ, জিঞ্জিরাম, ধরনী, সোনাভরি ও হলহলি নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চতুর্থ বার বন্যায় উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অপর দিকে রোপা আমন, মাসকলাই ও শাকসবজিসহ প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে নি¤œজিত হয়েছে।
বন্যায় প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি ও গবাদি পশুর খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে । শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রৌমারী উপজেলার ৬ ইউনিয়নের জহনিরকুড়া, আমবাড়ী, বড়াইবাড়ী, চুলিয়ারচর, ওকড়াকান্দা, চান্দারচর, চরইজলামারী, ঝাউবাড়ি, ভুন্দুরচর, বেহুলারচর, মোল্লারচর, কাউনিয়ারচর, খনজনমারা, বাঞ্ছারচর, মিয়ারচরসহ কয়েকটি গ্রামে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়। পশু খাদ্যের জন্য হাহাকার অবস্থায় পড়েছে বন্যা কবলিত পানিবন্দি পরিবারগুলো।
গত বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন জেলা থেকে চড়া দামে চারা ধান কিনে ক্ষেতে রোপন করে ঘুরে দাড়ানোর প্রচেষ্ট ছিল রৌমারীর কৃষকের। সে আশায় গুড়েবালী ঢেলে দিল অসময়ের আশ্বিনের বন্যা। তার আগের বন্যায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এই ক্ষতি থেকে পুষিয়ে নিতে সরকারের প্রণোদনা হিসেবে বিনা মুল্যে ধানের চারা, ধান বীজ, মাসকলাই ও শাকসবজির বীজ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিতরন করা হয়েছে। চতুর্থ বারের বন্যা এসে আবারো কৃষককে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। উপজেলা কৃষ্ িঅফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারে রোপা আমনের লক্ষমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪০ হেক্টর, মাসকলাই ৪০ হেক্টর ও শাকসবজি ৩০ হেক্টর।
দ্বিতীয় দফা বন্যায় শহর রক্ষা বাঁধ জলিলের বাড়ী নামকস্থানে ভেঙ্গে যায়। এছাড়াও খনজনমারা বেড়িবাঁধের তিনটি, ঝগড়ারচর বেড়িবাঁধের দুইটি, সাহেবের আলগা বেড়িবাঁধের দুইটি স্থানে গত বছর বন্যা ভেঙ্গে যায়। চতুর্থ দফায় বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ও বেরি বাঁধগুলো মেরামত না করায় সহজে বন্যার পানিতে প্রবেশ করছে নি¤œঞ্চল এলাকায়।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষ করেছি। সার পানি দেওয়ায় ফসলও ভালোই হয়েছে। তবে ভারতের সাথে বাংলাদেশের নদীগুলো সংযোগ থাকায় পাহাড়ী ঢলে ও অল্প বৃষ্টিতেই আমাদের জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
খনজনমারা গ্রামের মজাহারুল ইসলাম বলেন, খুব কষ্ট করে আমন ধান লাগাইছি। তাও আবার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গরু বাছুর নিয়া বিপাতে আছি।
রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু জানান, দফায় দফায় বন্যা আসায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পানিবন্দি ও ক্ষতি গ্রস্থ কৃষকের তালিকা করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন জানান, নতুন করে বন্যা আসায় ৫’শ ৫০ হেক্টর রোপা আমন, মাসকলাই ৪০ হেক্টর ও শাকসবজি ২০ হেক্টর জমির ফসল নি¤œজিত হয়েছে। তাড়াতাড়ি পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান বলেন, দফায় দফায় বন্যায় রৌমারীতে রাস্তাঘাট ও কৃষকের ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতির তালিকা করে বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছি।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।