চলে গেলেন আগরতলা মামলায় কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর পাহারাদার মোখলেস

S M Ashraful Azom
0
চলে গেলেন আগরতলা মামলায় কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর পাহারাদার মোখলেস


মো. শাহ্ জামাল, জামালপুর সংবাদদাতা:  আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাবন্দি, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাহারাদার মোখলেসুর রহমান মুলে বার্ধক্যজনিত কারণে ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ইন্তেকাল করেছেন ইন্নানিল্লাহি....রাজেউন। মৃত্যৃকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

মোখলেসুর রহমান জামালপুরের মেলান্দহের চরপাড়া গ্রামের মরহুম আ জব্বার মন্ডলের ছেলে ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মৃত্যুকালে তিনি একমাত্র স্ত্রী আম্বিয়া বেগমকে রেখে যান আম্বিয়া বেগম জামালপুর জেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি এডভোকেট মতিউর রহমানের ভাগ্নি।
মোখলেস মিলিটারি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেন ১৯৬৮সালে পাকিস্তানের ৯০ সিগনাল অফিসার মেসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামী করা হয়। ২৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই কোর্টের প্রধান বিচারক ছিলেন-এসএ রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের রিটায়ার জজ রিয়াজুর রহমান এবং পুর্ব পাকিস্তানের মোকসুদুল হাকিম, এমআর খান কোর্টে দাঁড়িয়ে শেখ সাব যখন বলেছিলেন-আমি এই কোর্টকে লাথি মারি আমি যা কিছু করতেছি, বাঙ্গালি জাতির জন্যই করতেছি এরপরই বঙ্গবন্ধুকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় একেক দিন একেক জেলখানায় রাখা হয় সর্বশেষ পর্যন্ত মুলতান জেলেও মোখলেস মিলিটারি শেখ সাবের পাহারাদার ছিলেন পাকিস্তানের মূলতান কারাগার এলাকায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় এজন্য বঙ্গবন্ধুর জন্য কবরও খোড়া হয়েছিল কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকসরকার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারেনি 
৭১’র সময় পূর্ব পাকিস্তানের ৯শ’ সৈনিকসহ মোখলেসুর রহমানকেও বন্দি করা হয় দেশ স্বাধীনের পর আন্তর্জাতিক বন্দিবিনিময় আইন মোতাবেক ১৯৭৪ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু মোখলেসুর রহমানসহ অপরাপর বন্দিদের মুক্ত করেন। পরে মোখলেসুর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে শিফট হন। মোখলেসুর রহমান সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ এবং জিয়াউর রহমানের সমসাময়িক সৈনিক ছিলেন।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে বিচার নামানোর জন্য ফৌজদারি দন্ডবিধি সংশোধনী এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় ঢাকার কুর্মিটোলা সেনানিবাসের সিগনাল মেসের এক কক্ষে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচার শুরু করে শত অনুচ্ছেদে মামলার চার্জশিট দেয়া হয় মামলায় পাক সরকার পক্ষে ১১জনকে রাজসাক্ষীসহ মোট ২২৭ জন সাক্ষী বানানো হয় রাজসাক্ষীদের ৪ জনকেই বৈরী ঘোষণা করে সরকার
          ১৯৬৮ সালের ৫ আগস্ট ব্রিটিশ আইনজীবী ও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট মেম্বার টমাস উইলিয়াম আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন মামলাটি পরিচালনা ও সহযোগিতা করেন-এডভোকেট আবদুস সালাম খান, আতাউর রহমান খান প্রমুখ সরকার পক্ষের আইনজীবি ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঞ্জুর কাদের ও অ্যাডভোকেট জেনারেল টি.এইচ খান ৩-সদস্যের ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিল-অবাঙালি বিচারপতি এস এ রহমান, বাঙালি এম আর খান ও মুকসুদুল হাকিম পাক সরকারের উদ্দেশ্য ছিল শেখ মুজিবকে ভারতীয় গুপ্তচর এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা তাতে শেখ মুজিবকে কঠোর শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে সরকারের জনসমর্থন বাড়াবে মামলায় দেখা গেল রাজ সাক্ষীরা কাঠগড়ায় বলেন, সরকার তাদের নির্যাতন করে এ মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছে এ মামলা সম্পর্কে তাঁরা কিছুই অবগত নন এরই মধ্যদিয়ে জনসাধারণ জানতে পারেন এ মামলাটি সরকারের গভীর ষড়যন্ত্রের বহিপ্রকাশ ওদিকে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার, শেখ মুজিবসহ সকল বন্দির মুক্তির জন্য গণআন্দোলন গড়ে ওঠে
           উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মামলার ১৭ নং আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে ঢাকা ক্যান্টমেন্টের ভিতরে গুলি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে জহুরুল হককে হত্যার খবরে বিক্ষুদ্ধ জনতা রাষ্ট্রীয় ভবন, ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান এস.এ রহমান ও সরকার পক্ষের আইনজীবি মঞ্জুর কাদেরের ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নি সংযোগ করে অবস্থা বেগতিক দেখে তারা পালিয়ে জনরোষ থেকে আত্মরক্ষা করে মামলার নথিপত্রে অগ্নি সংযোগ করা হয় গণআন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটি প্রত্যাহার করে পাক সরকার শেখ মুজিবসহ সকল বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয় ২৩ ফেব্রæয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসভায় শেখ মুজিবর রহমানসহ সকলকে  গণসম্বর্ধনা দেয়া হয় ওইদিন আপামর জনতার পক্ষে তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top