করোনার প্রভাব কমাতে ‘জোরালো বৈশ্বিক পদক্ষেপের’ আহ্বান

S M Ashraful Azom
0
করোনার প্রভাব কমাতে ‘জোরালো বৈশ্বিক পদক্ষেপের’ আহ্বান

সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিবাসীদের ওপর করোনাভাইরাস  (কোভিড-১৯) মহামারীর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সব দেশের অংশগ্রহণে একটি ‘জোরালো বৈশ্বিক পদক্ষেপের’ আহ্বান জানিয়ে এ লক্ষ্যে তিন দফা পরামর্শ উপস্থাপন করেছেন।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ভার্চুয়াল গ্লোবাল শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভাইরাসটি বৈষম্যমূলক আচরণ করে না, তবে এর প্রতিকূল প্রভাবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন বিশেষত অভিবাসী ও মহিলা শ্রমিকদের ওপর মারাত্মক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে।’

শেখ হাসিনা অরো বলেন,‘আমাকে অবশ্যই বলতে হবে যে, এখন সব দেশ, সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা, সুশীল সমাজ সংগঠনএবং বেসরকারী খাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি জোরালো ও সুসংহত বৈশ্বিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।’

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ‘বৈশ্বিক নেতাদের দিবস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থাপন করা তিন দফা প্রস্তাব হল:

প্রথমত: এই সংকটের সময়বিদেশের বাজারগুলোতে অভিবাসী কর্মীদের চাকরি বজায় রাখতে হবে;



দ্বিতীয়ত: প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষেত্রে, ক্ষতিপূরণ এবং অন্যান্য সুবিধাপুরোপুরি প্রদান করার পাশাপাশি তাদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যসুবিধা নিশ্চিত করতে হবে;

এবং তৃতীয়ত: মহামারীর পরে, অর্থনীতি পুনরায় সক্রিয় করার জন্য এই শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে হবে।

বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এবং সংকট মোকাবেলায় গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গভীরভাবে আইএলওর সকল প্রচেষ্টার প্রশংসা করে।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীতে আইএলও’র গ্লোবাল লিডারস দিবসে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এ মহামারী আমাদের দেশসমূহ, বিশেষত আমাদের শ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী এই বিপর্যয় এখন বিশ্বায়ন ও যোগাযোগেরমূলভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যা আমরা সুদীর্ঘ সময় ধরে অনেক যত্নে গড়ে তুলেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি এখন কেবল স্বাস্থ্য সমস্যা নয় বরং একটি পূর্ণাঙ্গ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কটে পরিণত হয়েছে।’

তিনি বলেন, অন্যান্য সঙ্কটের মতো, এলডিসি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোই কোভিড মহামারীর মূল বোঝার মুখোমুখি হচ্ছে যদিও এই সংকট তাদের দিয়ে শুরু হয়নি।

তিনি বলেন, ‘এই মহামারীর কারণে আমাদের দেশীয় ও বৈদেশিক সরবরাহ চেইনগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আমরা কয়েক বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ হারিয়েছি, আমাদের অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ক্ষুদ্রশিল্প তাদের বেশিরভাগ সম্পদ ও বাজার হারিয়েছে এবং সর্বোপরি সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার কারণে কৃষি ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এর ওপর, আমরা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ সঙ্কট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার দেশের অর্থনীতির বিভিন্নখাতের জন্য ১২.১বিলিয়ন ডলার উদ্দীপনা প্যাকেজ এবং পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন অংশের জন্য সহায়তা ঘোষণা করে।

তিনি বলেন, ‘এই সহায়তা প্যাকেজ আমাদের জিডিপির ৩.৭%-এর সমান। রফতানি শিল্পে আমাদের শ্রমিকদের সহায়কা দিতে আমরা শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তার সরকার পোশাক শ্রমিকদের মজুরি প্রায় ৫০০ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের মজুরি গড়ে ৩৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ এই মহামারী চলাকালীন দৈনিক আয় হারিয়েছে এমন ৫০ মিলিয়নের বেশি লোককে আমরা সরাসরি নগদ অর্থ এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করেছি।’

বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মীদের ব্যাপকহারে চাকরি হারানো এবং এর ফলে রেমিটেন্সহ্রাস পাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এসডিজি অর্জনে রেমিট্যান্স একটি মূল উপাদান হওয়ায় এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে এই চাকরিবিহীন শ্রমিকদের প্রত্যাবাসন এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসাবে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, আমরা ২০ শতাংশের বেশি রেমিট্যান্স আয় হারাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমরা আইএলওর শতবর্ষের ঘোষণার কথা স্মরণ করতে পারি, যেখানে আমরা সকলেই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, জনসংখ্যা স্থানান্তর, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বায়নের মাধ্যমে আমাদের বিশ্বকে রূপান্তরিত করার প্রয়াসকে স্বীকৃতি দিয়েছিলাম।’

শেখ হাসিনা বলেন, জি-৭, জি -২০, ওইসিডি ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর সমর্থিত সকল পুনরুদ্ধার ব্যবস্থার কেন্দ্রে থাকবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

তিনি বলেন, ‘আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটছে, তা দেখেমনে হচ্ছে সবার জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি এককভাবে পূরণ করা কঠিন হবে। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমরা একযোগে এটি করতে পারবো।’

আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানোম গেব্রেয়েসাস,এবং সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড, ফিজি, থাইল্যান্ড, নেপাল, সামোয়া, পাকিস্তান, মিয়ানমার সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ, এবং ডব্লিউটিও’র ডিজি ও আইএমএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অন্যান্যের মধ্যে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top