জুনকো ফুরুতা: যিনি ৪৪ দিনে ৫০০ বার ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন

S M Ashraful Azom
0
জুনকো ফুরুতা: যিনি ৪৪ দিনে ৫০০ বার ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন

সেবা ডেস্ক: সুন্দর এই পৃথিবীর প্রেম-ভালোবাসার অনেক গল্পই আমরা শুনেছি। অনেকেই দেখেছিও। কিছু ব্যর্থতা আবার কিছু প্রাপ্তি এই নিয়েই গড়ে ওঠে ভালোবাসার সম্পর্কগুলো। একজন পুরুষের অন্য একজন নারীকে ভালো লাগটাই স্বাভাবিক। তার মানে এই নয় যে, সেই নারীরও তাকে ভালো লাগতে হবে। এমনটা একজন নারীর পছন্দের ক্ষেত্রেও হতে পারে।

তবে আজ আমাদের প্রতিবেদনটি এমন একজন নারীর গল্প নিয়ে সাজানো যার মর্মান্তিক মৃত্যুর গল্প আজো মানুষের চোখে জল এনে দেয়। শুধুমাত্র প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাকে সইতে হয়েছিলো অমানবিক অত্যাচার।

আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগের কথা। জাপানের সাইতামা প্রিফেকচারের ইয়াশিও-মিনামি হাই স্কুলে পড়তো এক মেয়ে, নাম তার জুনকো ফুরুতা। সমবয়সী আর আট-দশটি ছেলেমেয়ের মতো ফুরুতার চোখ জুড়েও খেলা করতো হরেক রকম রঙিন স্বপ্ন। জীবনকে এক সুন্দর ছাঁচে ফেলে গড়ে নেয়ার আকাঙ্ক্ষা তার মনের কোণেও উঁকি দিয়ে যেতো। এভাবে স্বপ্ন দেখতে দেখতেই একসময় ১৭ বছর বয়সে পা রাখে মেয়েটি।

জুনকো ফুরুতা জাপানের সায়তামা প্রদেশের মিসটোর এর এক উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তেন। তিনি বেশ সুন্দরী ছিলেন আর এজন্য মানুষ তার প্রতি যে আগ্রহ দেখাত তা তিনি উপভোগ করতেন। তিনি ধূমপান ও অ্যালকোহল পান করতেন না এমনকি সমসাময়িক অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীদের মত ড্রাগও নিতেন না। বরং এগুলো যারা করতো তাদেরকে তিনি পাত্তাও দিতেন না। এমন ধরনের এক ছেলে হিরোশি মিয়ানো তাকে পছন্দ করত এবং তাকে ভালোবাসার কথা জানায়। তবে জুনকো হিরোশির প্রস্তাবে রাজি না হয়ে সরাসরি না করে দেয়। এতে প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় হিরোশি।

১৯৮৮ সালের ২৫ শে নভেম্বর, হিরোশিসহ ৪ জন কিশোর অপহরণ করে জুনকোকে। তারা জুনকোকে টোকিওর আতাচিতে এক অপহরণকারীর বাবা-মায়ের মালিকানাধীন গৃহে নিয়ে যায়। অপহরণকারীরা জুনকোকে বাধ্য করে তার বাবা মাকে ফোন করে বলতে যে সে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কিছুদিন থাকবে এবং সে কোনো বিপদের মধ্যে নেই।
জুনকো, চার আসামী এবং সেই বাড়ির ছবি
জুনকো, চার আসামী এবং সেই বাড়ির ছবি

এরপর শুরু হয় জুনকোর উপর অমানবিক নির্যাতন। তার উপর নির্যাতন এতটাই ভয়াবহ ছিলো যে, কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কোনোদিন চিন্তা করতে পারবে না তার স্বগোত্রীয়ের এমন নৈতিক অধঃপতনের কথা। কোনো লেখক ভুলেও তার গল্পের কোনো চরিত্রকে এমন নির্যাতনের মুখোমুখি করতে সাহস করবেন না। এমন কিছু মানুষ শুধু দুঃস্বপ্নেই দেখতে পারে, ঘোরতর দুঃস্বপ্নে।

জুনকোকে ৪৪ দিন আটকে রাখা হয় এবং তার উপর অমানষিক অত্যাচার করা হয়। তাকে সর্বক্ষণ উলঙ্গ রাখা হত এবং এই ৪৪ দিনে তাকে ১০০ জনের বেশি ব্যাক্তি ৫০০ বারের মত নানা উপায়ে ধর্ষণ করে। প্রতিদিন মানুষের কল্পনার বাইরে নানারকম নির্যাতন করা হত তার উপর। তাকে প্রতিদিন পেটানো হত এবং বোতল, কাঁচি ও লোহা সহ নানা জিনিস তার যৌনাঙ্গে ঢোকানো হত। বাধ্য করা হত জ্যান্ত তেলাপোকা ও নিজের মূত্র পান করার জন্য। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা পুড়িয়ে দেয়া হয়। তার স্তনও কেটে নেয়া হয়।

এছাড়া তাকে ঝুলিয়ে রেখে বক্সিং ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা হত। ঘন্টার পর ঘন্টা ফ্রিজে রেখে দেয়া হত। লাইটার দিয়ে চোখের মনি, যৌনাঙ্গ ও ক্লাইটোরিস পুড়িয়ে দেয়া হয়। সুঁই দিয়ে শরীরে অসংখ্য ছিদ্র করা হয়। জুনকো নিঃশ্বাস নিতে পারত না কারণ নাকে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের জন্য তার পাকস্থলী খাবার হজম করতে পারত না, ফলে বমি করে দিত। কার্পেট নোংরা করার জন্য তাকে আরো মারধর করা হত।

অপহরণের ২০ দিন পর সুযোগ পেয়ে পুলিশকে ফোন করতে গিয়ে ধরা পড়ে জুনকো। তারপর তার পা আগুন দিয়ে পুরোপুরি পুড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে সে হাঁটতে পারত না। এমনকি হাতও নাড়াতে পারত না, কেননা তার হাড় ভেঙে দেয়া হয় এবং নখ তুলে নেয়া হয়। ৩০ দিনের দিন থেকে জুনকোর মুত্রত্যাগ বন্ধ হয়ে যায় এবং কানও ড্যামেজ হওয়ার কারণে কিছু শুনতে পেত না। এক সময় জুনকো এতো অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অপহরণকারীদের কাছে নিজের মৃত্যু ভিক্ষা চায়।

৪৪ দিনের দিন জুনকো মৃত্যুবরণ করেন। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরও কোনো আসামীরই যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ডের মত শাস্তি হয়নি। কেননা তারা সবাই ছিল ১৮ বছরের নিচে।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top