শিব্বির আহমদ রানা: বিরক্তিকর দুপুর। স্থানীয় মুদির দোকানে বসে আছি। ক্রেতার ভীড় আগের মতো নাই। সারাদেশে চলছে লকডাউন। সমাজের হতদরিদ্র, নিম্ন আয়ের মানুষ, মধ্যবিত্ত শ্রেনীর লোকদের কর্মসংস্থান বন্ধ। সকালে রিজিকের সন্ধানে বের হয়ে যাওয়া মানুষগুলো আজ ঘরকোণায় আবদ্ধ। অন্তত তিনদিন কাজে না গেলে চলবেনা সংসারের চাকা। চুলোই জ্বলবেনা অাগুন। বউ বাচ্চাদের জুটবেনা আহার। বাড়িতে মাছুম বাচ্চাদের শান্তনা দেওয়ার ভাষা ইতোমধ্যে স্তব্দ। খাদ্য, পাঁচ মৌলিক চাহিদার একটি। যাদের কাজের বিনিময়ে ছিল খাদ্য তাদের কাজ নেই।
আজ দুপুরে (৮ এপ্রিল) বুধবার স্থানীয় মুদির দোকানে এক রিকশা চালকের (ছদ্মনাম সবুজ) শেষ সম্বল কিছু ভাংতি পয়সা নিয়ে চাল কিনতে আসলো। সব মিলে ৪ শত ৯৫ টাকা। চাল কিনবে। এরই মধ্যে দোকানে বাকী পায় দেড়শত টাকা। বাড়ীতে স্ত্রী, বাবা, ভাই আছেন। চাল পাবে কতো কেজী? তেল, ডাল এগুলোর ব্যবস্থা হবে কী? কয়বেলা চলবে তাদের? রিকশার চাকা বন্ধ হওয়াতে থেমে গেল জীবনের চাকা। এদের বেশী কিছু চাইনা, দু'বেলা ডাল-ভাতই এদের জন্য মহাপ্রাপ্তি। করোনা আতংকে লকডাউনে তার মতো অসংখ্য রিকশা চালকেরর জীবন গৃহবন্ধী। চাকা ঘুরলেই, ঘুরে সংসারের জীবন চাকা। থেমে গেছে রিকশার চাকা! এর পর তাদের কথা ভাবা যায়?
কথা বলেছি বাঁশখালী উপজেলার শিলকুপের একজন রিকশা চালকের। সকালে বের হয়ে বিকেলে বাড়ি ফেরার সময় হাতের কামাই দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় সংসারের পাথেয় নিয়ে যারা চলে আসতো আপন নীড়ে। রিকশা চালক (ছদ্মনাম সবুজ) বলেন, 'আমি অাজবধি সরকারী কিংবা ব্যক্তিগত কারো উদ্যোগে দেওয়া ত্রাণ পাইনি। আমার মতে অনেকেই ত্রাণের কোন সুযোগ পায়নি। আমাদের কথা কে ভাবে? কে দেখে আমাদের দূরাবস্থা। আজ হাতের শেষ সম্বল জমিয়ে রাখা ভাংতি পয়সাটুকু দিয়ে যৎসমান্য চাল কিনেছি। দু'তিন দিন কোন রকম চলবে। এর পরে খাবো কী, যাবো কোথাই জানিনা। সরকার কী আমাদের কথা ভাবছে? আমাদের তো জমানো টাকা কড়ি নেই, নেই জমিজমা। রাস্তায় বের হলেই পুলিশের লাটিচার্জ। আবার আগের মতো লোকজনের নেই সমাগম। শুনেছি লকডাউনের সময় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আমাদের কী হবে, সরকারী ত্রাণ কী আমাদের কপালে জুটবে?'
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন উপজেলার অভ্যন্তরিণ অলি-গলিতে গাছ ফেলে, বাঁশ বেঁধে দিয়ে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে মানুষ বের হচ্ছে পায়ে হেঁটে। হু হু করে বেড়ে চলেছে পণ্যের দাম। অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। সর্বসাধারণের ক্রয় ক্ষমতা নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় রিতীমতো হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ ক্রেতাসাধারণ। প্রশাসনের দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে করোনার মতো সংকটময় সময়কে অারো অস্থির করে তুলেছে। এমতাবস্থায় হতদরিদ্র মানুষগুলো পড়েছে বিপাকে। কর্মহীন জীবনে সংসারে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।