রফিকুল আলম, ধুনট (বগুড়া): আধুনিকতার সাথে তাল মেলাতে না পেরে এমনিতেই ধুঁকছিল তাঁতশিল্প। তার মাঝেই সংক্রমণের থাবা বসাল করোনা ভাইরাস। ফলে তাঁতপল্লীতে চলছে সুনশান নিরবতা। মুখ থুবড়ে পড়েছে তাঁতশিল্প। আর রুজি-রুটি হারিয়ে এখন অর্ধাহারে-অনাহারে দূর্বিষহ জীবনযাপন করছেন কর্মহীন তাঁতি পরিবারগুলো।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি ভাবে আর্থিক সহযোগীতা না পেলে ধ্বংসের মুখে পড়বে বগুড়ার ধুনট উপজেলার তাঁতশিল্প এবং বেকার হবে এ শিল্পের কারিগররা এমনটাই মনে করছেন তাঁত কারখানার মালিকেরা।
জানা গেছে, এ উপজেলার প্রায় ৬ শতাধিক তাঁত কারখানা (পাওয়ারলুম) রয়েছে। এসব কারখানার অধিকাংশ মালিক ব্যবসার আয়ের উপর নির্ভর করে ব্যাংক কিংবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। তাঁত কারখানায় উৎপাদিত কাপড় বেচে তারা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন। কিন্ত করোনা দূর্যোগে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন তাঁতি পরিবারগুলো।
এদিকে পহেলা বৈশাখ ও ঈদ উপলক্ষে আগে যেসব তাঁতপল্লী খটখট শব্দে মুখরিত ছিল। করোনার প্রভাবে সেই তাঁতীপাড়া এখন নিস্তব্ধ। সারা বছর ধরে তাঁতীরা এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এই সময়ে কাপড়ের বেশি চাহিদা থাকায় তাদের দম ফেলার সময় থাকে না। অথচ বছরের সবচেয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাঁতিরা।
কাশিয়াহাটা গ্রামের তাঁত কারখানার মালিক শাহজামাল তালুকদার জানান, করোনা দূর্যোগে নিজেরাই চলতে পারছেন না। তাঁত শ্রমিকদের দিব কি। করোনার কারণে বন্ধ ঘোষণায় লোকসানে যাচ্ছে তাঁতশিল্প। অপরদিকে ব্যবসা বন্ধ হলেও ব্যাংকের ঋণের সুদ বাড়ছে হু হু করে। এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন এলাকার তাঁতীরা। সরকার সহযোগীতা না করলে তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
তাঁত শ্রমিক ইমরান হোসেন জানান, প্রায় এক মাস ধরে কোনও কাজকর্ম নেই। মহাজন কাপড় বিক্রি না করলে টাকা দিতে পারবে না। ঘরে খাবার নেই, পরিবার পরিজনের খরচ চালাতে পারছি না। সরকারি ভাবে কোন সহায়তাও মিলছে না।
আরেক শ্রমিক আল-আমিন জানান, প্রতি সপ্তাহে যে টাকা মজুরী পেতাম তা দিয়ে কোনভাবে পরিবার নিয়ে কেটে যেত। তাঁত বন্ধ থাকায় কোন মজুরী পাই না। কোন কাজকর্ম নেই। ঘরেও কোন খাবার নেই বাজার নেই কার কাছে বলবো। কি যে কষ্টে আছি তা আল্লাহ জানেন।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিমান ত্রাণ এসেছিল তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে কর্মহীনদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তবে সবাইকে দেয়া সম্ভব হয় নাই। আবার বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেয়া হবে। তাঁত মালিকদের ঋণের সুদ মওকুফসহ আর্থিক সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশ করা হবে।