সেবা ডেস্ক: প্রাণঘাতি নভেল করোনা ভাইরাসের ছোবলে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। প্রভাব ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশ লকডাউন করা হয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও তৈরি হয়েছে অঘোষিত লকডাউন পরিস্থিতি। মহামারি ঝুঁকি এড়াতে গৃহবন্দী থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। সমাজের সব বিত্তের মানুষরা বিপাকে পড়লেও দিন আনা দিন খাওয়া মানুষেরা পড়েছে সীমাহীন দুর্ভোগে। দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এমন অবস্থায় খুলনার জনপ্রতিনিধি, বিত্তবানরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। তবে অনেকে কর্মের চেয়ে প্রচারণাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে লোক মুখে চাউর রয়েছে।
এই মহামারিকালে মানুষ যখন জীবিকা নির্বাহে চিন্তিত তখন খুলনার এক শ্রেণির মানুষ করোনা ভাইরাস মোকাবেলার নামে নির্ভার কার্যক্রমকে ফেইসবুকসহ স্যোশাল মিডিয়ায় ভারী করে আত্মপ্রচারে মগ্ন রয়েছেন। এদেরকে ইঙ্গিত করে সমাজ সচেতনরা বলছেন- করোনা মোকাবেলার কার্যক্রমে যে বা যারা অংশ নিচ্ছেন তারা কতটুকু সচেতন, তারা কি? সচেতনতার সজ্ঞা জানেন। ভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনাকালে তাদেরকে অবাধে জমায়েত হতে দেখা যাচ্ছে। এরমধ্যে সেল্ফি ভাইরাসে আক্রান্ত বিশেষ এক শ্রেণির কথিপয় নামধারী ব্যক্তিগণ নিজেদের সচেতনতা জাহির করার হীন মানসিকতায় স্থা-কাল কিছু না বুঝেই অতি উৎসাহী হয়ে ফটোসেশনও করতে দেখা গেছে।
বিগত কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, খুলনায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একাধিক সংগঠন, বিত্তবান, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকটি সংস্থা ফেসবুকের মাধ্যেমে ত্রাণ বিতরণের প্রচারণা চালাচ্ছে। অনেকে ত্রাণ বিতরণ কালে ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করছে। আবার অনেক নিম্ন আয়ের মানুষের বাসা বা বাড়িতে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন।
এমন বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, নিজেরা দান করে অন্যকে উৎসাহী করতে তারা ফেসবুকে ছবি আপলোড করছেন। এতে লোকের সম্মান হানি হতে পারে কিনা? – এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি তাদের কাছ থেকে।
তবে অনেক সংগঠন বা ব্যক্তি পর্যায়ের অনেকে গোপনে ত্রাণ বিতরণ করছেন। তারা বলেছেন, এই সময়ে বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে অনকে খাদ্য সহায়তা নিতে নারাজ। অনেকে উপায় না পেয়ে সহায়তা গ্রহন করছে। আমরা যদি তাদের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করি তাহলে তাদের অসম্মান করা হবে।
এ বিষয়ে ইসলামেও রয়েছে কঠোর নির্দেশনা বলে জানিয়েছেন আল হেরা জামে মসজিদের ইমাম মুফতি রিয়াদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আল্লাহর রাস্তায় দান একটি মহৎ কাজ। মানুষের কল্যাণে করা দানগুলোকেই আল্লাহর রাস্তায় দান হিসেবে গণ্য করা হয়। দরিদ্র মানুষের উপকারে যে দান হয় তা অতুলনীয়। তবে দানের পেছনে মূল উদ্দেশ্য থাকতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। মানুষকে দেখানো বা নিজের প্রচারের জন্য কোনো দানের মূল্য নেই আল্লাহর দরবারে। তবে মানুষকে দানে উৎসাহিত করতে প্রচার করে দান করা যেতে পারে। গোপনে দান করা হলে তার মর্যাদা অনেক বেশি, যেখানে বর্তমানে বেশিরভাগ দানেই দেখা যাচ্ছে আত্মপ্রচারই মূল উদ্দেশ্য। তবে যে দান লোক দেখানোর জন্য করা হয় বা মানুষের প্রশংসা/বাহবা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়, তা সৎ দান নয়।