রফিকুল আলম, ধুনট (বগুড়া) : চারিদিকে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা। মহাচিন্তায় সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। ঘরে বাইরে আলোচনা করোনা নিয়ে। ভাল নেই মানুষের মন। কোন কিছুতেই স্বস্তি মিলছে না। চাষাবাদেও পড়েছে এর প্রভাব। তবুও থেমে নেই কৃষকের জীবনযুদ্ধ। নানা প্রতিকুলতার মাঝেও গম চাষে এবার ভাল ফলন হয়েছে। বাজারে কাঙ্খিত দামও মিলছে। প্রতি বিঘায় লাভ হয়েছে কমপক্ষে ৭ হাজার টাকা। ফলে করোনায় মলিন কৃষকের মুখে সাফল্যের হাসি ফুটে উঠেছে।
বুধবার সকালের দিকে সরেজমিন বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর বিশাল চর এলাকা ঘুরে গম চাষীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যমুনাপারের মানুষ ভাঙন ও বন্যায় যেমন অসহায় হয়ে পড়েন, তেমনি তাদের জন্য আশীর্বাদও যমুনা। যমুনা যেমন প্রতি বছর ঘরবাড়ি গ্রাস করছে, তেমনি পলি জমিয়ে জেগে ওঠা চরে সোনার ফসল ফলাতেও সমান ভূমিকা রাখছে। কেননা পলি পড়া চরের জমি গম চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে যমুনা চরের জমিতে গম বীজ বপন করা হয়। গমের চাষের জমিতে বেশী সেচ দিতে হয় না। জমি চাষের সময় মাটির নিচে প্রয়োজন মোতাবেক জৈব্য সার ও গমের চারা বড় হওয়ার পর মাটির উপরের অংশে সামান্য ইউরিয়া সার প্রয়োগে ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলে গম চাষে খরচ হয় কম লাভবান হন কৃষক-কৃষাণীরা।
তাই নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা লোকসান পোষাতে মৌসুমের শুরুতে চরের জমিতে গম চাষে ঝুকে পড়েন। কৃষকের ঘামে আর শ্রমে এবার গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। চরে গম কাটা মাড়াইয়ের কাজ শেষের দিকে। গম চাষে বাম্পার ফলনে হাসির ঝিলিক ফুটেছে কৃষাণ-কৃষাণীর চোখেমুখে। এবার প্রতি বিঘায় গমের ফলন হয়েছে ১৪ মণ। প্রতি মণের দাম ১ হাজার ৬০০ টাকা। খরচ বাদে বিঘায় লাভ হয়েছে কমপক্ষে ৭ হাজার টাকা।
নিউসারিয়াকান্দি চরের মতিউর রহমান জানান, প্রায় দশ বছর আগে যমুনায় তার বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। নদী তাকে সর্বস্বান্ত করলেও তিন বছর ধরে ওই স্থানে চর জেগে উঠায় সেখানে তিনি ৫ বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন। বিঘায় প্রায় ১৪ মণ গম ফলন হয়েছে। প্রতিমণ গম ১ হাজার ৬ টাকা করে বিক্রি করেছেন।
পুকুরিয়া চরের আব্দুর রাজ্জাক জানান, বর্ষাকালে চরের জমি পানিতে ডুবে থাকে। তখন তাদের অলস বসে থাকতে হয়। চর থেকে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার কৃষকরা গমের আবাদ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এবার গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে গমের দাম ভাল পাওয়া যাচ্ছে।
ধুনট উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বলেন, যমুনা নদীর চরে সবচেয়ে বেশি গম চাষ হয়ে থাকে। পলি পড়া চরের জমিতে গম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। যমুনার চরে গম চাষে বেশি খরচ হয় না। এতে কৃষক লাভবান হয় বেশি। এ বছর চরে প্রায় ২ হাজার বিঘা জমিতে গম চাষ হয়েছে। আবহওয়া অনুকুলে থাকায় গমের ফলনও ফলন হয়েছে।