শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সমসাময়িক ভাবনা

S M Ashraful Azom
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সমসাময়িক ভাবনা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শিক্ষার্থীদের সাথে চলাফেরা দীর্ঘদিন থেকে। দিনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত হয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে। ছেলে-মেয়েকে সুশিক্ষিত ও আদর্শবান করে গড়ে তোলার মানসে নানা কর্মপদ্ধতি ও পরিকল্পনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। সমসাময়িক পরিস্থিতিতে দৈনিক রুটিনটাই যেন হেরফের হয়ে গেছে।

কোভিড ১৯ (করোনা) ভাইরাস! সারা বিশ্বকে আক্রমণ করেই চলছে। বাংলাদেশেও এর বিস্তার ছড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রান্তে। এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়াটাই যেন মুখ্য হয়ে উঠেছে সকলের কাছে। সরকারি নির্দেশনায় প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, চিকিৎসক ও আপামর জনতা যার যার অবস্থান থেকে যুদ্ধে নেমেছে এর বিস্তার রোধে।

সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে সরকারিভাবে। এদিকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৭ মার্চ, ২০২০ থেকে বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে; কবেই বা পুরো দেশ স্থিতিশীলতায় ফিরে আসবে এর হিসেব মিলানো যেন দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় বিভিন্ন স্তরের সরকারি-বেসরকারি চার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রায় লক্ষ জনের মতো শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে এসব প্রতিষ্ঠানে। এ রকম সারা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত অসংখ্য শিক্ষার্থীর পড়ালেখার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতির মাত্রাটা কমিয়ে আনতে সরকার ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। টেলিভিশনেও প্রচার করা হচ্ছে  'আমার ঘরে আমার স্কুল' শিরোনামে বিষয়ভিত্তিক  ক্লাস। এক্ষেত্রে শহরাঞ্চলের  শিক্ষার্থীরা ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিলেও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পিছিয়েই থাকছে। আবার প্রাথমিক পর্যায়ের কোমলমতি শিশুরা টেলিভিশনে প্রচারিত ক্লাসগুলোকে অন্যান্য অনুষ্ঠানের মতোই মনে করছে। গুরত্বই দিচ্ছে না ক্লাসগুলোর প্রতি।

অনলাইন, সোস্যাল মিডিয়া বা ফোন কলে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকগণের সাথে। শিক্ষার্থীদের আকুতি একটাই স্যার স্কুল কবে খুলবেন? এক্ষেত্রে সঠিক উত্তর দেওয়ার ভাষা থাকে না। শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে যাতে বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখা চালিয়ে যায় সে ব্যাপারেও উদ্বুদ্ধ করছি শিক্ষকগণকে।

যাহোক আদৌ কি পুরোপুরি শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে তোলা সম্ভব হচ্ছে? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তো আর বাসায় বসে হয় না। এটাই বাস্তবতা। এক্ষেত্রে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা উক্তি হচ্ছে -'বাড়িতে বাপ-মা-ভাই বন্ধুরা যাহা  আলোচনা করেন বিদ্যালয়ে শিক্ষার সঙ্গে তাহার যোগ নাই, বরঞ্চ অনেক সময় বিরোধ আছে। এমন অবস্থায় বিদ্যালয় একটা  এঞ্জিন মাত্র হইয়া থাকে তাহা বস্তু জোগায় প্রাণ যোগায় না।'

তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সারাবিশ্ব যখন উন্নতির নাগাল পেতে যাচ্ছিল ঠিক তখন এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে হঠাৎ যেন থমকে দাঁড়ালো পুরো বিশ্ব। পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, যোগাযোগ ও শিক্ষা ব্যবস্থা। কে জানে, নিমিষেই সবকিছু এ রকম নিস্তব্ধ হয়ে যাবে! মিডিয়াজুড়ে জায়গা করে নিবে একই খবর! অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছোট্ট শিশুটির প্রশ্ন আমরা কেন বাইরে যেতে পারছি না? প্রশ্ন একটাই, কবে যে আমরা শুনতে পাবো পৃথিবীটা তার নিজস্ব গতি ফিরে পেয়েছে।

অতিসত্বর স্বাভাবিক অবস্থান ফিরে আসুক বিশ্ববাসীর দ্বারে। আবারো শান্তির বার্তায় উজ্জীবিত হোক সকলের জীবন। স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক আমাদের আঙিনায়। চাঞ্চল্যকর পরিবেশ বজায় হয়ে উঠুক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এই প্রত্যাশাই কামনা করছি।


লেখক :
মোঃ হাবিবুর রহমান 
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান
সফিপুর আইডিয়াল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ
সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top