সেবা ডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারি নোভেল করোনা ভাইরাস থেকে দেশের জনগণকে বাঁচাতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংরাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
বার বার আপনাদের অনুরোধ করছি, যেখানে আছেন সেখানেই থাকেন। অর্থাৎ এটাকে (করোনাভাইরাস) যদি একটা জায়গায় ধরে রাখতে পারি এবং সেখান থেকে যদি মানুষকে সুস্থ করতে পারি তাহলেই এটা আর বিস্তার লাভ করতে পারবে না বলেও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা যেহেতু মুখ থেকে ছড়ায়, তাই, একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের কাছ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন। দেশবাসীকে বলবো দয়া করে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। যে যেখানে আছেন সেখানেই অবস্থান করেন।
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে এসব কথা বলেন। এ সময় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সংসদ অধিবেশনের মধ্যে এক অধিবেশন থেকে অন্য অধিবেশনের দূরত্ব অনধিক ৬০ দিন হওয়ায় ১৮ ফেব্রুয়ারির পর এদিন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে এদিন করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেই একাদশ সংসদের এই সপ্তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। তবে, এমপিদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে স্বল্প সংখ্যক সদস্যের অংশগ্রহণে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তাকারে এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অধিবেশনে সরকার দলীয় এমপি শামসুর রহমান শরিফের মৃত্যুতে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এবং একইসঙ্গে সমাপনী ভাষণও দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে হাজার হাজার মানুষ দৈনিক মারা যাচ্ছে সেখানে অন্য দেশের সঙ্গে আপনারা যদি একটু তুলনা করেন তবে, আমরা অনেক ভাল আছি। কিন্তু আমি একটু আমার দেশের মানুষকে বলবো- আপনারা ঘরে থাকেন।
তিনি এ সময় উদাহরণ দেন-কেউ কেউ যেন একটু বেশিই সাহসী হয়ে যাচ্ছে। ঘরে থাকার নির্দেশনা না মেনে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে গেল শিবচর, সেখান থেকে আবার টুঙ্গিপাড়া গিয়ে হাজির হল। ব্যস করোনাভাইরাস টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত পৌঁছে গেল। কিংবা নারায়ণগঞ্জ থেকে কেউ বরগুনা চলে গেল, ভাইরাসও গিয়ে সেখানে পৌঁছালো।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি অনেকে মানতেই চাচ্ছে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ করছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি সংস্থা যথেষ্ট কষ্ট করছে দিনরাত, তারপরেও এখানে গল্প, ওখানে বসে আড্ডা। কারণ, এটাতো কোন সিমটমে বোঝা যায় না যে কার শরীরে আছে আর কার শরীরে নেই।
তিনি বলেন, আমাদের যত এমপি এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাদেরসহ সব নেতা-কর্মী এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে আহ্বান করবো সবাই স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন। যে নির্দেশনাগুলো দেয়া হচ্ছে সবাই দয়া করে সেই নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন।
সংসদ নেতা বলেন, এই নির্দেশনাগুলো মেনে চললে নিজে যেমন সুরক্ষিত থাকতে পারবেন অপরকেও সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। কারো এতটুকু ঝুঁকি নিজেকে যেমন অসুস্থ করে তুলতে পারে তেমনি অন্যেরও অসুস্থ হওয়ার কারণ হবেন, সেটা যেন না হয়।
তিনি বলেন, ধান কাটায় সহায়তা প্রদানের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে বলা হয়েছে। যারা যেখানে ধান কাটতে যাবে তাদের পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারণ, এই ধানটা যদি আমরা সঠিকভাবে ঘরে তুলতে পারি তাহলে আর খাবারের অভাব হবে না।
তিনি এসময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষবকারি বাহিনীসহ ছাত্র-শিক্ষক এবং জনপ্রতিনিধিদের কৃষকের ধান আহরণে সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এ সময় দেশে এক টুকরো জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সে দিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়ে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন করে দেবে এবং দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি উৎপাদনটা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য আমরা ৪ শতাংশ সুদে কৃষি ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া বর্গাচাষীদের জন্য বিনা জামানতে ঋণ প্রদান এবং কৃষি সামগ্রীসহ অন্যান্য সামগ্রীও বিনামূল্যে এবং স্বল্পমূল্যে প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, নির্দিষ্ট দিনে বড় খোলা মাঠে হাট বসিয়ে এবং নিরাপদ দূরত্বে পণ্য নিয়ে বসে কেনা-বেচা করা সুযোগ প্রদানেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটাই চেষ্টা মানুষের জীবনটা যেন চলে, তারা যেন সুরক্ষিতও থাকতে পারে।