
রফিকুল আলম, ধুনট (বগুড়া): প্রথমে যমুনার বুকে জেগে ওঠে চর। চিক চিক বালু কণার আস্তরণ। চরের বালুকণা ভেদ করে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেয় নানা জাতের আগাছা। বন্যায় জেগে ওঠা বালু চরে পালি মাটির স্তর পড়তে থাকে। এ ভাবেই কেটে যায় অন্তত ৫-৭ বছর। তারপর আগাছা পরিস্কার করে তৈরী হয় চাষযোগ্য জমি। বদলে যায় চরের অবয়ব। সেখানে চাষ হয় মসুর ও খেসারি কালইসহ নানা জাতের ফসল। এবার তীব্র খরায় চরের তপ্ত বালুতে ক্ষেতের কালই গাছ পুড়ে গেছে। ফসলের সাথে পুড়ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। এমন চিত্র বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর বিশাল চরে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব পাশ দিয়ে বহমান যমুনা নদী। প্রায় ৪২ বছর ধরে যমুনা নদী ভাঙনে ১৪টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। একদিকে নদী ভাঙছে, অন্যদিকে প্রায় ২২ বছর ধরে নদীর পূর্ব তীরে চর জেগে উঠছে। পশ্চিম তীরের কিছু মানুষ সেই চরে বসতি গড়েছে। এর মধ্যে বৈশাখী, রাধানগর ও বতুয়ারভিটা চরে প্রায় ৫০০ পরিবার বসতি গড়েছে।
এ ছাড়া নিউসারিয়াকান্দি, পুকুরিয়া, বরইতলি, ভুতবাড়ি চরে এখনও কেউ বসতি গড়ে তোলেনি। তবে এসব চরে নানা জাতের ফসল চাষাবাদ হয়। চরে জমিতে ফসল ফলিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন বাস্তুহারা পরিবারের মানুষ গুলো। স্বপ্ন দেখেন সোনালী দিনের। তাই অন্যান্য ফসলের তুলনায় চলতি মৌসুমে চরের জমিতে সবচেয়ে বেশী চাষ হয়েছে মসুর ও খেসারি কালই। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় কালই চাষে ঝুকে পড়ে কৃষক। এখন পুরোদমে কালই তোলা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চরে এ বছর প্রায় এক হাজার বিঘা জমিতে কালই চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ মন। কিন্তু চরাঞ্চলে বৃষ্টি না হওয়ায় কালই চাষে ফলন বিপর্যয় হয়েছে। খরার কারণে তপ্ত বালুর বুকে অধিকাংশ ক্ষেতের কালই গাছ মরে গেছে। কোথাও আবার গাছ থাকলেও শীম ধরেনি। খরা এবার কেড়ে নিয়েছে কৃষকের মুখের হাসি। খরার কারণে ক্ষেতে কাঙ্খিত ফসল উৎপাদন হয়নি। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চরের কৃষকেরা।
নিউসারিয়াকান্দি চরের আয়নাল হক জানান, চরের জমিতে পানি সেচের কোন ব্যবস্থা নেই। তাই বৃষ্টির পানির উপর ভরসা করতে হয়। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় কালইয়ের ফলন ভাল হয়নি। গত বছরে ৩ বিঘা জমি থেকে ১২মন কালই উৎপাদন হয়েছিল। এবার একই পরিমাণ জমিতে কালই উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৬ মন। এছাড়া একই চরের তাহেরা বানু, নুরু মিয়া, কোব্বাদ আলী, নান্নু মিয়া, শাহা আলীসহ অনেক কৃষক এবার কালই চাষ করে কাঙ্খিত ফলন থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ধুনট উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছোবাহান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এটা প্রাকৃতিক বিষয়। খরার কারণে কালই গাছ শুকিয়ে বালুর বুকে নেতিয়ে গেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় চরের জমিতে কালই চাষে কাঙ্খিত ফলন থেকে বঞ্চিত হয়েছে কৃষকেরা। তবে, চরের অন্যান্য ফসলের আশানুরূপ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।