সেবা ডেস্ক: এক বছরে গিনেজ বুকে দশ রেকর্ড কি চাট্টিখানি কথা? মোটেও না। একটা গিনেজ রেকর্ড করতেই তো কত পরিশ্রম করতে হয়। অথচ নোয়াখালীর ছেলে কনক কর্মকার এক বছরে দশবার গিনেজ বুকে নাম লিখিয়েছেন। এখন পর্যন্ত গিনেজ বুকে দেশের সর্বোচ্চ রেকর্ডধারী তিনি। ২০১৯ সালে এতোগুলো বিশ্ব রেকর্ডের ঘটনা সত্যিই বিস্মিত হতে হয়।
গল্পের শুরুটা যেভাবে
‘ছোটবেলা থেকে আমি ফুটবল ভালোবাসতাম। খেলা দেখে ও খেলতে গিয়ে একসময় ফুটবলকে নিজের বিভিন্ন অঙ্গ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতাম। থুতনি, কপাল, হাঁটু ও মাথায় ফুটবল-বাস্কেট বল বসিয়ে এবং পায়ে টাচ করে ব্যালেন্সিংয়ের চেষ্টা করতাম। একই সঙ্গে কপালের উপর চেয়ার, ডিম, প্লাস্টিকের কাপ ও ঘাস কাটার মেশিনসহ বিভিন্ন জিনিস রেখে ব্যালেন্সিং করা শুরু করি।’—আড্ডার শুরুতেই বললেন কনক।
ইউটিউবে হটাৎ একটি ভিডিও নজরে পড়ে কনকের। ভিডিওতে একজনকে ফুটবল নিয়ে বিভিন্ন কসরত করতে দেখে কনক। তখনও এ বিস্ময় বালক জানতো না যে ফুটবল নিয়ে এমন কসরতের নাম ফুটবল ফ্রিস্টাইল। ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি প্রথম ফুটবল ফ্রিস্টাইলের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। তারপর থেকেই শুরু হয় ফুটবল নিয়ে পথচলা। এরপর শুরু হয় কাপ ব্যালান্সিং অনুশীলন। যার পরিণতি গিনেজ বুকে রেকর্ড।
ফুটবলপ্রেমী কনকের গিনেজ বুকে প্রথম নাম লেখান কাপ দিয়ে। গুগলে সার্চ দিয়ে কনক দেখলেন যে, রোকো মারকিও নামে এক ব্যক্তি কপালে পাঁচশ’ কাপ রেখে রেকর্ড করেছেন। কনক ভাবলেন যে এটাতো তিনিও করতে পারেন। শুরু করলেন ৬০০ কাপ নিয়ে অনুশীলন। ছয় মাস ছয় দিন পর রেকর্ডটি করতে সক্ষম হন তিনি। ১ মিনিট ৬ সেকেন্ড কপালে সারিবদ্ধভাবে ৬০০টি গ্লাস রেখে ব্যালান্সিংয়ের রেকর্ড গড়া হয়। স্বীকৃতি দেয় গিনেজ কর্তৃপক্ষ।
একে-একে দশ!
২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি গিনেজ বুকে প্রথম নাম লেখান কনক। তিনি বলেন, এর এক-দেড় মাস পর ১০মিনিট কপালে গিটার রাখার রেকর্ড ভঙ্গ করে আমি ২৫ মিনিট কপালে গিটার রেখে দ্বিতীয় রেকর্ড গড়ি। আরো একমাস পর ১ মিনিটে ৪৬টি বল ঘাড় থেকে হাতে নিয়ে তৃতীয় রেকর্ড গড়লাম। থুতনিতে গিটার রাখার আগের রেকর্ড ছিল পাঁচ মিনিট। আমি থুতনিতে গিটার রাখার এ প্রতিযোগিতায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত ব্যালেন্স করে চতুর্থ রেকর্ড গড়ি।
১৫টি ডিম হাতের পেছনে রেখে পঞ্চম রেকর্ড করেন কনক। ষষ্ঠ রেকর্ড গড়েন ঘাস কাটার মেশিন থুতনিতে রেখে। এর পূর্বের রেকর্ড ছিল ৬ মিনিট ব্যালেন্সিং। কনক ৭ মিনিট পর্যন্ত মেশিন থুতনিতে রেখে আগের রেকর্ড ভাঙেন। এরপর ফুটবল হাঁটুতে রাখতে হবে, এ প্রতিযোগিতার আগের রেকর্ড ছিল ২ মিনিট ২৩ সেকেন্ড। কনক সেক্ষেত্রে হাঁটুতে ৪ মিনিট ৬ সেকেন্ড ফুটবল ব্যালেন্সিং করে সপ্তম রেকর্ড গড়তে সক্ষম হন।
অনেক কিছু দিয়ে রেকর্ড হলো, এবার চেয়ারের পালা। চেয়ার থুতনিতে ৩৫ মিনিট ব্যালেন্সিং করে অষ্টম রেকর্ড গড়েন কনক। এর আগে যিনি রেকর্ড করেছেন তিনি ১০ মিনিট নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলেন। নবম প্রতিযোগিতায় ফুটবলকে হাঁটু দিয়ে টাচ করে ব্যালেন্সিং করতে হবে। এ প্রতিযোগিতায় পূর্বে ১ মিনিটে ১৫১ বার বল টাচ করার রেকর্ড ছিল। কনক ১ মিনিটে ১৬৩ বার টাচ করে রেকর্ড ভাঙেন।
শেষ রেকর্ডটি ছিল পেন্সিল হাতের পেছনে উঠানো নিয়ে। এ প্রতিযোগিতার সময় নির্ধারিত ছিল ৩০ সেকেন্ড। এ সময়ে পূর্বের রেকর্ডধারী ৩০টি পেন্সিল উঠিয়েছেন। কনক ৩০ সেকেন্ডে ৪০টি পেন্সিল উঠিয়ে পূর্বের রেকর্ড ভঙ্গ করেন এবং গিনেজ বুকে দশমবারের মতো নিজের নাম লিপিবদ্ধ করেন।
কনক কর্মকারের জন্ম ১৯৯৯ সালে। তার বাড়ি বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজিপুরে। চৌমুহনী কলেজ রোডের পাশে মন্ডলপাড়ার বাসায় মা শিল্পী কর্মকার ও ছোট বোন রিয়াকে নিয়ে থাকেন তিনি। বাবা বাবুল কর্মকার সৌদি প্রবাসী। ২০১৬ সালে বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এএসসি পাশ করেন। বর্তমানে তিনি ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পাওয়ার বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র তিনি।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।