সেবা ডেস্ক: করোনা ভাইরাসের সংক্রামনের কারনে দেশের বাইরে থেকে কাঁকড়া আমদানি বন্ধ রেখেছে চীন। এর ফলে খুলনার উপকূলীয় এলাকায় খামারে উৎপাদিত কাঁকড়া বিক্রি কমে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চল কয়েক হাজার কাঁকড়া চাষী।
কাঁকড়া চাষীরা জানান, খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া উৎপাদিত হয়। এসব কাঁকড়া ঢাকার ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে কিনে নেন। ঢাকা থেকে এসব কাঁকড়া চীনসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। চাষীরা রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়া বিক্রি করেন বেশি দামে। অন্যদিকে স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় অনেক কম দামে। রপ্তানিকারক কাঁকড়া না কিনলে স্থানীয় বাজারে এই দাম আরও কমে যাবে।
জেলা মৎস্য অফিস থেকে জানা গেছে, গত বেশ কয়েক বছর ধরে চীন, তাইওয়ান, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ায় কাঁকড়ার বড় বাজার তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় নরম খোসার কাঁকড়া, অন্য দেশগুলোতে স্বাভাবিক কাঁকড়া রপ্তানি হতে থাকে। শুরুর দিকে শুধুমাত্র সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ করা হতো।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ পূর্বাঞ্চলকে জানান, বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁকড়া চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। বর্তমানে খুলনা জেলার ২৮ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসব এলাকা থেকে ৬ হাজার ৯৮৯ মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদন হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৭ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কয়রা উপজেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রদীপ কুমার ঘরামি জানান, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসকে এ অঞ্চলে কাঁকড়ার মৌসুম ধরা হয়। কারণ এ সময় সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা বন্ধ থাকে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা এ সময় সরাসরি খামার থেকে কাঁকড়া কেনেন। কিন্তু ঢাকার রপ্তানিকারকরা এই মুহূর্ত কাঁকড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। একই সঙ্গে তাদের কাছে পাওনা টাকাও দিতে চাইছেন না তারা। এতে উভয় দিক থেকেই বিপদে পড়েছেন স্থানীয় চাষীরা।
তিনি জানান, চীনে রপ্তানির জন্য কয়রা ও পাশর্^বর্তী এলাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় টন কাঁকড়া রাজধানীর বিভিন্ন আড়তে পাঠানো হতো। আড়তদাররা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আড়ৎগুলোতে ব্যবসায়ীরা এক প্রকার হাত গুঁটিয়ে বসে আছে। অন্যদিকে উৎপাদিত কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারায় কাঁকড়া খামারীরাও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। অচলাবস্থা না কাটলে এ অঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার ছোট বড় খামারীকে কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, খুলনা অঞ্চলের কাঁকড়া ও কুঁচে সরাসরি ঢাকা থেকে রপ্তানি হয়। এজন্য কী পরিমাণ পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে উৎপাদনের পরিমাণ দেখে বোঝা যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক চাষী রপ্তানি বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দীন হোসেন জানান, গত বছর এ উপজেলায় ৩১০ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হয়। ওই জমি থেকে ২ হাজার ১৯০ মেট্রিক টন ও সুন্দরবন থেকে ১ হাজার ১০৯ মেট্রিক টন কাঁকড়া সংগ্রহ করা হয়। এলাকায় এবার কাঁকড়া চাষীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রাও দ্বিগুণ ধরা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রপ্তানি বন্ধ থাকায় সবাই হতাশ হয়ে পড়েছেন।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।