সেবা ডেস্ক: আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্বাচিত হলে কী করবেন সে ব্যাপারে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
প্রশ্ন: এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৯ জন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। এর মধ্যে মনোনয়ন বোর্ড আপনাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। কেন আপনি নিজেকে অধিক যোগ্য মনে করছেন?
রেজাউল করিম চৌধুরী: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন। এই সংগঠনে হাজারও ত্যাগী নেতাকর্মী আছেন। ঠিক অনুরূপভাবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগেও অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী আছেন। মনোনয়ন চেয়েছেন ১৯ জন, সেখানেও অনেক ত্যাগী নেতা ছিলেন। তাদেরও রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। এখানে নেত্রী যার ওপর আস্থা রেখেছেন, তিনি যাকে ভালো মনে করেছেন তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। ১৯ জনের মধ্যে উনি আমাকে ভালো মনে করেছেন, তাই আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
একই প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, আমি উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতা নই। আমি ১৯৬৬ সাল থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি ৬ দফা আন্দোলন করেছি, ৬৯ এর গণ আন্দোলন করেছি, ৭০’ এর নির্বাচন করেছি, ৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার পর আমি রাজপথে আন্দোলন করেছিলাম। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছি। যুবলীগ করেছি, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। আওয়ামী লীগ করেছি। আমি দীর্ঘ ৫০ থেকে ৫৫ বছর রাজনীতি করছি। দীর্ঘ এই রাজনৈতিক জীবনে আমি রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। একদিনের জন্যও আমি রাজপথ থেকে সরে দাঁড়াইনি। আমরা দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন সংগ্রামকে মূল্যায়ন করেই হয়তো নেত্রী আমাকে মূল্যায়ন করেছেন। তাই তিনি আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
প্রশ্ন: আপনি এর আগে কখনও নির্বাচন করেননি। এটিই আপনার প্রথম নির্বাচন। নির্বাচন পরিচালনায় আপনি কোন বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন?
রেজাউল করিম চৌধুরী: দেখেন, আমি নিজে নির্বাচন করিনি ঠিক আছে। কিন্তু আমি ১৯৭০ সালের নির্বাচন পরিচালনা করেছি। পরিচালনা মানে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে কাজ করেছি। ৭৩ সালের নির্বাচন, কলেজ ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে আমি নির্বাচন পরিচালনা করেছি। ১৯৮৯ সালে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা করেছি। জিয়ার রহমানের আমলে ৮৬ সালের নির্বাচন পরিচালনা করেছি। ৯৬ সালে আমি দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করেছি, ২০০১ সালেও নির্বাচন পরিচালনা করেছি। ২০০৮ সালে আমি দুটি সংসদীয় আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বক ছিলাম। তাই নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা কম না। আমি নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনও কিছুকে চ্যালেঞ্জ মনে করছি না।
প্রশ্ন: বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তার মানে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে? জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
রেজাউল করিম চৌধুরী: গণতন্ত্রের মূল সৌন্দর্য হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মাঠে কখনও এক পক্ষে খেলা হয় না। যদি উভয় পক্ষের খেলোয়াড় শক্তিশালী হয়, তখন দর্শক উপভোগ করে। বিএনপি হোক, জাতীয় পার্টি হোক, যেই নির্বাচন করুক কোনও সমস্যা নেই। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে আমার লড়ার শক্তি আছে। যেহেতু আমি দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের মানুষের জন্য কাজ করেছি। আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে কাজ করেছি। রাজপথে ছিলাম। তাই চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমি চট্টগ্রামের সন্তান। চট্টগ্রামের এই বহদ্দার বাড়িতে আমার জন্ম। তাই মানুষের ওপর আমার যে আস্থা, আমার ওপর মানুষের যে আস্থা। তাতে আমি শতভাগ আশাবাদী, ইনশাল্লাহ চট্টগ্রামের মানুষ আমাকে মেয়র নির্বাচিত করবে।
প্রশ্ন: নির্বাচিত হওয়ার পর আপনার প্রথম এবং প্রধান কাজ কী হবে?
রেজাউল করিম চৌধুরী: এখনও তো নির্বাচন হয়নি। তারপরও যেহেতু প্রশ্ন করেছেন, আমি বলবো- বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে অনেক সমস্যা। এর মধ্যে প্রধান সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। লালদীঘির মাঠে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, এরপর থেকেই চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে যেতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনের জন্য। সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে, ইনশাল্লাহ চট্টগ্রাম অনেকাংশ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।
এই শহরে আরও অনেক সমস্যা আছে। স্বাস্থ্য সমস্যা, ড্রেনেজ সমস্যা, স্যুয়ারেজ সমস্যা। তরুণ ছেলেদের বিনোদনের কোনও ব্যবস্থা নেই। নদী দূষণের সমস্যা। হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে করপোরেশনের সঙ্গে ভবন মালিকদের দ্বন্দ্ব। ইনশাল্লাহ, যদি আমি নির্বাচিত হই, আমার প্রথম কাজ হবে- হোল্ডিং ট্যাক্সের সমস্যা দূর করা। হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে অনেক কথা ওঠে। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৭ বছর মেয়র ছিলেন। তখন উনি কোনও হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াননি। উনার সময়ে হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে কোনও বাড়াবাড়ি হয়নি। মানুষ শান্তিতে ট্যাক্স দিয়েছেন। আমিও সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করবো। মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে তৈরি হওয়া মানুষের ভোগান্তি দূর করবো।
প্রশ্ন: বর্তমান মেয়রের আমলে সৌন্দর্য বর্ধন নামে ফুটপাতে অনেকগুলো দোকান বসানো হয়েছে। যেটি নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচিত হলে এগুলোর বিষয়ে আপনার ভূমিকা কি হবে?
রেজাউল করিম চৌধুরী: আমার ব্যক্তিগত চিন্তা ভাবনায় চট্টগ্রাম চলবে না। হ্যাঁ, হয়তো আমার ব্যক্তিগত চিন্তা থাকবে। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমি সমন্বিত যে প্রয়াসের কথা বলেছি। কারণ আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমি জনগণের প্রতিনিধি। আমি মেয়র হয়েছি বলে আমি সব কিছু বুঝবো এমন কোনও কথা নয়। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সমন্বয় করে সবার পরামর্শ নিয়ে কাজ করবো। তারা যদি ফুটপাতের দোকান সরানোর পরামর্শ দেন, তাহলে আমি সেটিই করবো।
প্রশ্ন: বর্তমান মেয়র ক্ষমতায় আসার পর নগরী থেকে বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেছেন। বিলবোর্ড ব্যবসায়ী ওই যুবলীগ নেতাদের আপনার আশেপাশে দেখা যাচ্ছে। নগরবাসী ভাবছে আপনি নির্বাচিত হলে বিলবোর্ড ব্যবসায়ীরা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করবে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
রেজাউল করিম চৌধুরী: আমি বলেছি সবার পরামর্শে আমি পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলবো। বিলোবোর্ড তো এখন নেই। আমার পরিকল্পিত শহর তৈরি করার ক্ষেত্রে যারা পরামর্শ দেবেন, যাদের কাছ থেকে আমি পরামর্শ নেবো, তারা যদি মনে করেন যে- বর্তমানে যে বিলবোর্ডগুলো আছে, এগুলো উচ্ছেদ করা হোক, আমি সেগুলোও উচ্ছেদ করে দিব। কে কী ভাবছে এটি নিয়ে আমরা কোনও মাথা ব্যথা নেই। আমরা কথা হচ্ছে, এই শহরকে পরিকল্পিত, সুন্দর এবং পরিবেশবান্ধব নগরী করার জন্য যা করতে হয়, আমি সব করবো। যেখানে মানুষ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবে। শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। চট্টগ্রাম শহর যেন তার হারানো গৌরব ফিরে পায়, তা বাস্তবায়নে নিয়ে আমি কাজ করবো।
প্রশ্ন: চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুই ধারায় বিভক্ত। মহিউদ্দিন চৌধুরী, আ জ ম নাছির উদ্দিন গ্রুপ। রাজনীতির এই মেরুকরণকে আপনি কীভাবে দেখছেন? এর থেকে উত্তরণের উপায় কী?
রেজাউল করিম চৌধুরী: আমি কোনও ধারায় বিশ্বাস করি না। আওয়ামী লীগ একটা বড় পরিবার, এটার অভিভাবক হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ করতে হলে অভিভাবকের নির্দেশ মানতে হবে। নেত্রী যে নির্দেশ দেবেন, সেটি সবাই পালন করবেন। চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকে অনেক কথা বলেছেন, দলীয় কোন্দল, উপ-কোন্দল, এই নেতা ওই নেতার বিরুদ্ধে। কিন্তু নেত্রী যখন নৌকার প্রতীক মোছলেম উদ্দিন আহমেদের হাতে তুলে দিয়েছেন, তখন কোনও ধারা দেখেছেন? কোনও ধারা ছিল না। সবাই নৌকার মিছিলে শরীক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূলে নেতাকর্মীরা কোনও নেতা বোঝে না। বেঝে একজনকে- বঙ্গবন্ধু ও তার আর্দশ। বোঝে একজন- তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। যখন স্লোগান দেয়- নৌকা নৌকা, তখন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বেহুশ হয়ে যায়। হ্যামিলনে বাঁশি বাদকের মতো নৌকার পেছনে ছুটতে থাকে। কোনও নেতা, কোনও কর্মীর বিভাজন তাদের পৃথক করতে পারে না।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।