সেবা ডেস্ক: টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের শোলাকুড়ি ইউনিয়নের সূতানলী দীঘির পাড়ের আদর্শ গ্রামের ২৭টি হতদরিদ্র পরিবারকে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র ভিটে মাটি থেকে বিতাড়িত করার অভিযোগ উঠেছে। এখন এ ২৭টি পরিবার বাড়ি ঘর ও ভিটে মাটি ছাড়া হয়ে দ্বারে-দ্বারে ঘুরছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবার পরিজন নিয়ে। বাড়ি ঘর ভিটেমাটি ফিরে পেতে প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন তারা। এ চক্রের হাত থেকে রেহাই পায়নি ইউপি সদস্য থেকে শুরু করে সহায় সম্বলহীন হতদরিদ্র পরিবারগুলো। ভিটে মাটি থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে উঠুলি থেকে নানা কষ্টে দিন রাত যাপন করছেন।
জানা যায়, ১৯৯৫ সালে তৎকালিন সরকার উপজেলার শোলাকুড়ি সুতানলী দীঘির পাড়ে এলাকার সহায় সম্বলহীন ৭০টি পরিবারকে আদর্শ গ্রামে আশ্রয় প্রদান করে। প্রত্যেক পরিবারকে ৮ শতাংশ জমি একটি ঘর দলিলমূলে প্রদান করা হয়। এই জমি তারা বংশ পরম্পরায় চাষাবাদ ও বসতবাড়ি করে ব্যবহার করছে। বিক্রি বা হাত ছাড়া করা যাবে না এমন ২২টি শর্তে তাদের মধ্যে ভিটে মাটি ও ঘর প্রদান করা হয়। অথচ আদর্শ গ্রামের একটি প্রভাবশালী চক্র অসহায়, হতদরিদ্র, দুর্বল, পরিবারগুলোকে নানা অজুহাতে ভিটে মাটি থেকে বিতাড়িত করছে। ভিটে মাটি হারা পরিবারগুলো মাতাব্বরদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরে কোন প্রতিকার না পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছে। মাথা গুজার ঠাঁইটুকু ফিরে পেলে তারা খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারবে এমনটাই আশা তাদের।
সরজমিনে গিয়ে ভিটে মাটি হারা পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের ভিটে মাটি হারানোর করুন কাহিনী। সুবিধাভোগী শোলাকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য হাছনা বেগম জানান, আদর্শ গ্রামে ঘর পেয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। কিছুদিন যেতে না যেতেই দুর্ঘটনায় তার স্বামীর হাত ভেঙ্গে যায়। পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা সায়েদ আলীর কাছ থেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে ৩০ হাজার টাকা ধার নেন। ধারকৃত টাকা ফেরত দিতে গেলে সায়েদ আলী দাবি করেন তার কাছে ঘরবাড়ি সব বিক্রি করা হয়েছে। এভাবে তিনি সায়েদ আলীর ধার করা টাকার অজুহাতে ভিটে মাটি হারিয়ে স্বামী সন্তান ও পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
ভিটে মাটি হারানো শহর বানু জানান, ঘর পেয়ে সুখে শান্তিতে স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস শুরু করে ছিলেন। ৪ বছর যাওয়ার পর পেটের দায়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় চলে যান। ঢাকা থেকে আদর্শ গ্রামে ফিরে তার ঘরে উঠতে গেলে মরিয়ম বেগম স্বামী আলতাব হোসেন ও তার বাহামভূক্ত লোকেরা ঘরে উঠতে দেয়নি। সে থেকেই শহর বানু পরিবারের ৭ সদস্য নিয়ে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। কথা হয় আরেক ঘর হারা জুলহাস উদ্দিনের সাথে। তিনি পেশায় একজন ভ্যান চালক। ঘর পাওয়ার পর ৪ বছর বসবাস করেন। ঘর ভেঙ্গে গেলে চালা নামিয়ে মাটির দেয়াল দিতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র বাধা দিয়ে তাকে উচ্ছেদ করে দেয়।
নতুফা বেগম নামে আরেকজন জানান, তাকেও ঘর থেকে বিতাড়িত করেছে আয়বালী-ছবুর আলী গংরা। স্বামী-স্ত্রী দুজনে দিনমজুরির কাজ করে দুই সন্তান নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তার বসবাস করা আর্দশ গ্রামের ওই ঘরে এখন ছবুর আলীর বসবাস। দলিল আছে কিন্তু জমি ও ঘর নাই।
এভাবে হাছনা বেগম, শহর বানু, জুলহাস, নতুফা’ই নয় তাদের মতো ভিটে মাটি হারা হয়েছে আদর্শ গ্রামের হেকমত, আলাউদ্দি, রজব, রাজ্জাক, রমজান, হাছেন-মান্নাসহ ২৭টি পরিবার।
শোলাকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন জানান, এ আদর্শ গ্রাম থেকে ইতি মধ্যেই ২৭ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে বলে আমি জেনেছি। এদের মধ্যে কয়েকজন জায়গা জমি ফিরে পেতে আমার কাছে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেছে। ভিটেমাটি হারা পরিবারগুলো দলিল মূলেপ্রাপ্ত ঘর ফিরে পাক এটা আমি চাই।
এ ব্যাপারে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলিমা আহাম্মেদ পলি জানান, প্রকৃতদেরকে খোঁজে বের করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।