যুক্তরাষ্ট্রের মাটির নিচে কোটি কোটি ব্যারেল তেল!

S M Ashraful Azom
0
যুক্তরাষ্ট্রের মাটির নিচে কোটি কোটি ব্যারেল তেল!
সেবা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ৩০০০ ফুট মাটির নিচে কোটি কোটি ব্যারেল তেল রয়েছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। যে কোন সংকটের বাজারে তেলে সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সেই কৌশলগত মজুতের তেল ব্যবহার করতে পারেন তারা। তবে বিশ্বব্যাপী অনেকেরই প্রশ্ন যে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন তেল ভাণ্ডারের মজুত কোথায়? কত তেলই বা এই জরুরি ভান্ডারে রয়েছে?

এই মজুত আছে টেক্সাস এবং লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে মাটির নিচে লবণের স্তরের ভেতর তৈরি গুহায়। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোন জরুরি প্রয়োজন সামাল দেবার জন্য জমা করে রাখা আছে ৬৪ কোটি ব্যারেল তেল।

আসলে সেই তেলের মজুত গড়ে তোলার ভাবনাচিন্তা করা হয়েছিল ১৯৭০ এর দশকে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময়কার তেল সংকটের পটভূমিতে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি এজেন্সির সব সদস্য দেশকেই অন্তত ৯০ দিন ব্যবহারের মত পেট্রোলিয়ামের আমদানি ধরে রাখতে হয়। তবে জরুরি প্রয়োজন মোকাবিলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভান্ডার গড়ে তুলেছে। তার মত বড় মজুত পৃথিবীর কোথাও নেই।

যুক্তরাষ্ট্রে মোট চারটি জায়গায় এই জরুরি তেলের মজুত রয়েছে। টেক্সাসের ফ্রিপোর্ট এবং উইনির কাছে, আর লুইজিয়ানায় লেক চার্লস আর ব্যাটন রুজে।

মাটির তিন হাজার তিনশ ফুট নিচে মানবসৃষ্ট অনেকগুলো গুহার মধ্যে এই তেল জমা করে রাখা আছে। ভূগর্ভস্থ লবণের স্তরের একটা অংশের লবণ গলিয়ে ফেলে তৈরি করা হয় এই গুহা- যাতে প্রাকৃতিক গ্যাস বা তেল মজুত রাখা যায়।

মাটির ওপরে ট্যাংকে তেল জমা রাখার চাইতে এই পদ্ধতি অনেক সস্তা, এবং নিরাপদ। ভূগর্ভস্থ লবণের রাসায়নিক গঠন এবং ভূতাত্বিক চাপ- দুই কারণেই এখান থেকে তেল বেরিয়ে যেতে পারে না।

ফ্রিপোর্টের কাছে ব্রায়ান মাউন্ডে যে গুহাটি আছে তাদের ২৫৪ মিলিয়ন বা ২৫ কোটি ৪০ লাখ ব্যারেল তেল জমা রাখা যায়।

কেন এই জরুরি তেলের মজুত?

উনিশশ সত্তরের দশকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে সারা পৃথিবীতেই তেলের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৩ এর আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নেয়ায় ওপেকের সদস্য ইরাক, কুয়েত, কাতার ও সৌদি আরব আমেরিকায় তেল রপ্তানি করতে অস্বীকার করে। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ মাত্র তিন সপ্তাহেই থেমে যায় কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল ১৯৭৪ এর মার্চ পর্যন্ত।

ফলে তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল প্রায় চারগুণ- ব্যারেল প্রতি ৩ ডলার থেকে ১২ ডলারের কাছাকাছি। পেট্রোল পাম্পগুলোয় পড়ে গিয়েছিল গাড়ির দীর্ঘ লাইন। এরপরই ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলার চিন্তা থেকে মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইন পাস করে কৌশলগত পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ গড়ে তোলা হয়

কত দিন চলবে এই মজুতে?

যুক্তরাষ্ট্রের এই মজুতের যে তথ্য ওয়েবসাইটে আছে তাতে জানা যাচ্ছে- ১৩ই সেপ্টেম্বর সর্বমোট তেল মজুত ছিল ৬৪ কোটি ৪৮ লাখ ব্যারেল। মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের এক হিসেবমতে আমেরিকানরা ২০১৮ সালে গড়ে প্রতিদিন ২ কোটি ৫ লাখ ব্যারেল তেল ব্যবহার করেছে।

সে হিসেবে এই জরুরি মজুতে আমেরিকার ৩১ দিন চলবে। ১৯৭৫ সালের এক আইন অনুযায়ী এই জরুরি মজুতের তেল ব্যবহারের নির্দেশ শুধুমাত্র প্রেসিডেন্টই দিতে পারেন। অবশ্য এখান থেকে তেল বের করা সহজ নয়। প্রেসিডেন্টের আদেশ পেলেও এখান থেকে তেল বের করে তা বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে প্রায় দুই সপ্তাহ লাগবে।

তাছাড়া এখানে তেল জমা রাখা হয়েছে অশোধিত আকারে। গাড়ি, জাহাজ বা বিমানে ব্যবহার করতে হলে এই তেলকে আগে শোধনাগারে পাঠিয়ে প্রক্রিয়াজাত করাতে হবে।

সবশেষ এই জরুরি মজুতের তেল ব্যবহার করা হয় ২০১১ সালে, যখন আরব বসন্তের কারণে জ্বালানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়র জরুরি মজুতের তেল ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন।

তার ছেলে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ হারিকেন ক্যাটরিনার পর জরুরি মজুতের ১ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রির অনুমতি দেন। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়ও বাজেট ঘাটতি কাটাতে ১৯৯৭ সালে ২ কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রি করা হয়।

অনেকে অবশ্য এত বড় জরুরি মজুত রাখার আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭ সালে জরুরি মজুতের অর্ধেক তেলই বিক্রি করে দেবার পরিকল্পনা করেছিলেন ফেডারেল ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top