যে ছয় গ্রামে ২০ বছর ধরে কোরবানি হয় না

S M Ashraful Azom
0
Six villages that have not been sacrificed for 20 years
সেবা ডেস্ক: ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদ মানেই বাড়ি বাড়ি হালাল পশু কোরবানি। আর খাবারে তিন বেলাই গোশতের বাহারি ভোজ। কিন্তু কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউপির ছয়টি চরের বাসিন্দাদের কাছে ২০ বছর ধরে এমন অর্থের কোনো যথার্থতা নেই। তারা কোরবানির ঈদকে উপলব্ধি করে আসছেন ভিন্ন স্বাদে। কোরবানির গোস্তের ম ম করা ঘ্রাণ, তাদের কাছে শুধুই অতীত।
হাতিয়া ইউপির চরগুলো হলো-দাগারকুটি, গুজিমারী, শ্যামপুর, নয়াপাড়া, গাবুরজান ও বাবুরচর।

চরের বাসিন্দারা জানান, মাছ শিকার তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। তাদের কোরবানি ঈদ কাটে ভিন্নভাবে। ঈদের নামাজ পড়েই মাছ বিক্রি করতে বাজারে যান। মাছ বিক্রির টাকায় মাংস কিনে ছেলেমেয়েদের খাওয়ান। ঈদের দিন শুধু মাছ ধরা নয়, কেউ কেউ হাঁস-মুরগি ধরে জবাই করে, সেটাই তাদের কাছে কোরবানি।

তারা আরো জানান, এখানে ঈদের নামাজের মাঠ বলতে এক টুকরো শুকনো জমি। বাড়ি বাড়ি চাল তুলে একজন ইমাম নিয়ে এসে নামাজ পড়ানো হয়। এরপর যে যার মতো কাজে বেরিয়ে পড়ে। অন্যান্য দিনের চেয়ে ঈদের দিনের পার্থক্য শুধু ওই সকালের নামাজটুকুই।

এখানকার নারী-পুরুষের নতুন পাঞ্জাবি-শাড়ি পরা তো দূরের কথা, শিশুও পায় না নতুন কাপড়। যারা বসতি করে আছে তাদের বাড়ি-ঘর যে কতবার ভেঙেছে তার কোনো হিসেব নেই বলেও জানান বাসিন্দারা।

স্থানীয় কলেজ শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'জাগি'র প্রতিষ্ঠাতা আবু হেনা মুস্তফা বলেন, জীবনের শেষ সম্বলটুকু ২৩ বার নদীর বুকে হারিয়ে যাওয়ার পরও যারা এভাবে প্রাণ খুলে হাসতে পারেন, তাদের হৃদয় না জানি কত বড়।

চরাঞ্চলের এসব মানুষের উদারতার পরিচয় মেলে ঈদের আগের দিনও। উলিপুরের বজরা ইউপির বিরহিমের চরে গিয়ে দেখা যায়, এখনো অনেক ঘরের কোনায় পানি। টিনে পানির দাগ দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় বন্যার পানি চাল পর্যন্ত উঠেছিল। ঘরে হয়তো দুই কেজি চালও নেই।

তাদেরই একজন বলেন, যাদের ভিজিএফ কার্ড আছে, ঈদ উপলক্ষে তারাই চাল সহায়তা পেয়েছেন। তার অভিযোগ, চেয়ারম্যানের চ্যালারা শুধু কার্ড পায়, তারা অভাবী হয়েও পান না।

দামারচরের বাসিন্দাদের অভিযোগ- ইউপি থেকে অনেক দূরে হওয়ায় শুধু ঈদ নয়, বন্যার সময়ও তারা সহায়তা পান না। বজরার ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মহুবর রহমান বলেন, দূরত্ব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় এখানে কেউ সহায়তা দিতে আসে না।

সরকারি-বেসরকারি সহায়তা না পেলেও থেমে থাকে না তাদের জীবন। অনেকে ঈদের দিন নৌকা নিয়ে বের হয়েছেন যাত্রী পারাপার করে যা আয় হবে তা দিয়ে মাংস কেনার জন্য।

গুজিমারীচরের এক বাসিন্দা বলেন, 'নুন আনতে পান্তা ফুরায় গোস্ত কই পাই বাহে। বন্যায় সহায়তা পেলেও ঈদে কিছু পাইনি।' তার জীবনের এ পর্যন্ত এ চরে কোনো দিন গরু কোরবানি হতে দেখেননি।

শুধু গুজিমারীচর নয়, হাতিয়া ইউপির বাবুরচর, গাবুরজান, শ্যামপুর ও নয়াপাড়াচরে গত ২০ বছরেও পশু কোরবানি হয়নি বলে জানালেন এই ইউপির চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন। তিনি বলেন, এসব চরে তিন হাজারেরও বেশি মানুষের বাস। ঈদে ইউপির পক্ষ থেকে চাল সহায়তা দেয়া হয়। সরকারের পাঠানো চালের পরিমাণ কম থাকায় সবাইকে দেয়া সম্ভব হয় না।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউপির চর পার্বতীপুরের বাসিন্দাদের ঘরে ওঠেনি কোরবানির মাংস। যার ঘরে যা আছে সেটুকুই রান্না করেই চলছে ঈদের খাবারের আয়োজন।

কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন এ প্রসঙ্গে বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া ২৮টি গরু কোরবানি দিয়ে এর মাংস উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পাওয়া কিছু ত্রাণসামগ্রীও বিতরণ করা হয়েছে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top