নারীদের নগ্ন শরীর যখন পণ্য

S M Ashraful Azom
0
Products when women naked body
সেবা ডেস্ক: বেশ কয়েক বছর আগে ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের একটি মন্তব্য বিস্ফোরণ হয়েছিল যেন। একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেখানে বলেছিলেন, হ্যাঁ, আমি একজন মহিলা। আমার স্তন আছে এবং ক্লিভেজও। আপনাদের কী সমস্যা?

সেই সময় দীপিকার মন্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন অন্য তারকারাও। অনেকেই তার সেই টুইটকে রিটুইট করেছিলেন। বাংলাদেশের অনেক অভিনেত্রীও সেই মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।

কিন্তু শরীর নিয়ে সবার বাড়তি মনোযোগ ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দূর হয়নি। দূর হচ্ছে না। এই তথাকথিত ‘গ্লোবাল’ নেট দুনিয়ায় বরং অভিনেত্রীদের হেনস্তার শিকার হতে হয় অনেক সময়। চলে নানা ধারার কুরুচিকর মন্তব্য। এখানে একজন অভিনেত্রীর স্বাধীনতাকে পণ্যের মতোই বিক্রি করা হয়। নানাভাবে।

অভিনেত্রীদের শরীর যেন একটা ব্র্যান্ড। যাকে নানাভাবে বিক্রি করে ভোগবাদের দুনিয়া। সেটা যেমন বিনোদনে তেমনি রাজনীতি-ধর্মীয় ব্যবসায়ও। তাদের মাধ্যম হিসেবে এগিয়ে রয়েছে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক।

এ নিয়ে সম্প্রতি কলকাতার বেশ ক’জন অভিনেত্রী মুখ খুলেছেন আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে। সেখানে আছেন সুচিত্রা সেনের যোগ্য উত্তরসূরি রাইমা সেনও। সম্প্রতি গোল টিপ, শাড়ি, নিদেনপক্ষে লং গাউনের বাইরে এসে খোলামেলা পোশাকে সম্মোহনের ভাষা বদলে দিচ্ছেন তিনি। প্রায়ই ইনস্টাগ্রাম আর ফেসবুকে খোলামেলা ছবি দেখা যায় তার। ছোট পোশাক বা ক্লিভেজের উদাত্ত আবেগকে নানা ছবিতে তুলে ধরছেন রাইমা।

কেন? তার জবাবে তিনি বলেন, আসলে নিজেকে একটু বদলাতে চেয়েছি আমি। এই বদল চারপাশের বদলে যাওয়া জীবনের জন্য। সিনেমায় যে ধারার চরিত্র করে আসছি, মনে হচ্ছিল একটু টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছি। এরকম ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোডের পর মুম্বাই থেকে অনেক কাজ পাচ্ছি।

আসলে একজন অভিনেত্রীর চেহারাকে বার বার ভাঙতে হয়। আমি এখন ভাঙতে ভাঙতে নিজের শরীরকে নতুন করে আবিষ্কার করছি। আমার শরীর নিয়ে অন্যরকম কথা শুনব কেন? যা করছি ঠিক করছি।

নায়িকার খোলামেলা পোশাক দেখলেই তার ছবিতে ইচ্ছেমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে কমেন্ট করতে থাকে সমাজের নানা মুখ। অনেক সময় চলে পরিবার নিয়ে গালাগালিও। পাশাপাশি নায়িকাদের খোলামেলা ছবিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয় গণমাধ্যমেও। এমনটাই মনে করেন অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী।

তার মতে, দেখুন, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের হট ছবি বা ক্যাটরিনা কাইফের গাউন সরে গেল...দেখুন- এমন শিরোনামে নিউজ করা হচ্ছে আজকাল। কী করে আজও কারো ক্লিভেজ, খোলা পিঠ, নগ্ন পা খবর হতে পারে? আমার তো মাথায় ঢুকে না। আসলে এখানে নারীদের খোলা বুক আর শরীরটাকে পণ্য হিসেবেই দেখানো হয়।

এক সময় আনন্দবাজারের জন্য এক্সক্লুসিভ বিকিনি শুট পরে তিনি সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি যদিও মনে করেন না, বিকিনি শুট বা খোলামেলা পোশাক কোনো অভিনেতার সাহসের পরিচয় তৈরি করে।

অনেকেই মনে করেন স্তন, ক্লিভেজ, নায়িকার পোশাকের চর্চা কাজের চেয়ে বেশি হয় আজও। ‘বিয়েওয়ালা’ আর ‘একা’ নায়িকার মান নির্ণয় হচ্ছে আলাদা করে। এ বিষয় নিয়ে মিডিয়া স্টোরি করলে বলা হচ্ছে, এদের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, নষ্ট মেয়েদের নিয়ে স্টোরি করছে!

কিন্তু দেখছে বা পড়ছে কারা? কোন দেশের মানুষ? যারা জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছেন তারাই কিন্তু এগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন ও পড়ছেন। এরাই সেই লোক যারা বাড়ির বউ জিন্স পরলে কটূক্তির বাণে তাকে আত্মহত্যার পথ দেখান। আর নায়িকার বেলায় পোশাক যতো ছোট হয় ততো উপভোগ্য মনে করেন- এমনটাই মনে করেন আরেক অভিনেত্রী সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা।

ইনস্টাগ্রাম থেকে ফেসবুকে তার অসংখ্য ফলোয়ার। তিনি ছবিও দেন বেশ খোলামেলা। তার ভাষ্য, আমি নিজেকে দেখি। এ ধরনের শুট করতে ভালোবাসি। যুগ বদলের সঙ্গে আর্টিস্টকেও বদলাতে হবে। এখন দর্শক তাদের অভিনেত্রীকে শুধু শাড়িতেই দেখবে, এটা ভাবা ভুল। সোশ্যাল মিডিয়া কন্টাক্ট তৈরি করে।

আমি এ মাসে কেমন দেখতে হলাম সেটা এই শুটের মধ্যে দিয়ে জানাতে চাই। আমার শরীরকে আমার ভালোলাগা অনুযায়ী তুলে ধরি। এতে ভালো-মন্দের কিছু থাকবে কেন? যাদের পছন্দ হবে না তারা দেখবে না। হয়ে গেল।

তিনি মনে করেন, একেকটা পোশাকে একেরকম দেখতে লাগার যে আনন্দ এটাই উপভোগ করছেন অভিনেত্রীরা যুগে যুগে। জিনাত আমান থেকে শর্মিলা ঠাকুর বা মধুবালা, নিজের সৌন্দর্য বা ক্লিভেজ প্রকাশের মাধুর্য তুলে ধরেছেন। কিন্তু এই মুক্তির স্বাধীনতা পছন্দ নয় পিতৃতন্ত্রের!

এ বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন দর্শনা বণিকও। এই তরুণ অভিনেত্রী বলেন, আমার কখনো মনে হয় না যে একটা সেক্সি ছবি তোলার জন্য শুট করছি। ছবিকে সেক্সি করে তোলা আমার কাজ নয়। আমার ফিটনেস, সব ধরনের পোশাক ক্যারি করতে পারি, এটাই আমি দেখাতে চাই।

এখনো বিকিনি পরিনি। তবে সুইমিংপুলে গেলে তো আর শাড়ি পরব না। আমি সুইমিং কস্টিউম পরেই নামব। আমার আত্মবিশ্বাস আছে যে আমায় দেখতে ভালো লাগবে। তাহলে ছবিও পোস্ট করব। এটা স্বাভাবিক। এখানে এক্সপোজারের গল্প নেই! এভাবে আজও কেন ভাবা হবে?

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top