“আমারে আমার বাপেই জন্ম দেছে” মিন্নিকে নয়নের এসএমএস

S M Ashraful Azom
0
“আমারে আমার বাপেই জন্ম দেছে।” মিন্নিকে নয়নের এসএমএস
সেবা ডেস্ক: বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথনসহ ম্যাসেজ আদান-প্রদানের তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মূলত প্রযুক্তির কারণেই রিফাত হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হয়েছেন মিন্নি।

রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কার্যক্রম গুছিয়ে এনেছে পুলিশ। এ সপ্তাহে না হলেও আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন রিফাত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরগুনা জেলা পুলিশের এক সদস্য জানান, নয়ন বন্ডের মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল ফোন নম্বরটি গোপনে ব্যবহার করতেন মিন্নি। নয়ন বন্ডই এই সিমটি মিন্নিকে দিয়েছিলেন। মূলত রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ের পরও নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাসহ নানা কারণে গোপনীয়তা বজায় রাখতে ওই সিমটি মিন্নি গোপনে ব্যবহার করতেন। এছাড়া আরও কয়েকটি নম্বর দিয়েও নয়নের সঙ্গে কথা বলতেন মিন্নি।

তিনি আরো বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন সকাল ৯টা আট মিনিটের সময় এই নম্বর দিয়ে নয়ন বন্ডকে কল দিয়ে ছয় সেকেন্ড কথা বলেন মিন্নি। এরপর আবার সকাল ৯টা ৩৮ মিনিটের সময়ও নয়ন বন্ডের দেয়া ওই নম্বরটি দিয়েই আবারও নয়ন বন্ডকে কল দেন মিন্নি। এ সময় নয়ন বন্ডের সঙ্গে ৩৫ সেকেন্ড কথা বলেন মিন্নি। এরপর ৯টা ৫৮ মিনিটের সময় নয়ন বন্ড মিন্নির কাছে থাকা ওই নম্বরটিতে কল দেন। এ সময় মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কথোপকথন হয় ৪০ সেকেন্ড।

এরপর সকাল সোয়া ১০টার দিকে কলেজের সামনেই রিফাত শরীফের ওপর হামলা করে বন্ড বাহিনী। হামলার পর বেলা ১১টা ৩১ মিনিটের সময় নয়ন বন্ড মিন্নিকে একটি এসএমএস পাঠান। এরপর আবার বিকেল ৩টার সময় মিন্নিকে কল দিয়ে মিন্নির সঙ্গে এক মিনিট ২০ সেকেন্ড কথা বলেন নয়ন বন্ড।

বরগুনা জেলা পুলিশের এক সদস্য বলেন, তদন্তের জন্য মিন্নি ও নয়ন বন্ডের ব্যবহৃত নম্বরের কললিস্ট ও এসএমএস কন্টেন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এরপর এগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ে দেখা গেছে, রিফাত শরীফ মারা যাওয়ার পর নয়ন বন্ড মিন্নির কাছে একটি এসএমএস পাঠান। বিকেল ৪টার কিছু সময় আগে পাঠানো ওই এসএমএসটিতে লেখা ছিল, “আমারে আমার বাপেই জন্ম দেছে।”

মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, নয়ন বন্ডের এমন এসএমএস পাঠানোর রহস্য উদঘাটনে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আমরা মিন্নির সঙ্গে কথা বলেছি। তখন মিন্নি এ বিষয়ে আমাদের বলেছেন, রিফাত শরীফকে মারার পরিকল্পনার সময় মিন্নি নয়ন বন্ডকে বলেছিলেন, তুমি যদি রিফাত শরীফকে মারতে পার, তাহলে বুঝবো তোমারে তোমার বাপেই জন্ম দিছে।

মূলত মিন্নির এমন কথার উত্তর দিতেই রিফাতের মৃত্যুর পর নয়ন বন্ড মিন্নিকে ওই এসএমএসটি পাঠান। এ বিষয়টি আদালতে মিন্নি বলবেন বলে পুলিশকে জানালেও আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ার সময় এই কথা লুকিয়ে যান মিন্নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের এক সাক্ষী বলেন, নয়ন বন্ডের মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা নম্বরটি একসময় নয়ন বন্ড নিজেও ব্যবহার করতেন। পরে ওই নম্বরটি পরিবর্তন করেন নয়ন বন্ড।

তিনি আরও বলেন, মিন্নি মাদকাসক্ত ছিল। এ কারণেই সে নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখত। আর এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতো নয়ন বন্ড। রিফাত শরীফের মাধ্যমেই মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের পরিচয় হয়। নয়ন বন্ড ও মিন্নি উভয়ই মাদকসেবী হওয়ায় তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হতে সময় লাগেনি।

এদিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং হাইকোর্টেও মিন্নির জামিন আবেদনের পর শুনানি হয়েছে। কিন্তু কোনো আদালতই জামিন মঞ্জুর করেননি মিন্নির। মিন্নির প্রতিটি জামিন শুনানিতেই বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করেছেন মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কথোপকথন ও ম্যাসেজ আদান-প্রদান সংক্রান্ত কললিস্ট ও হত্যাকাণ্ডের সময় সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ।

এছাড়াও এ হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজি, তিন নম্বর আসামি রিশান ফরাজি, ছয় নম্বর আসামি রাব্বি আকন এবং ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া মিন্নি নিজেও রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বরগুনা আদালতের মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তাফা কাদের বলেন, গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন শুনানির সময় বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কথোপকথন ও ম্যাসেজ আদান-প্রদান সংক্রান্ত কললিস্ট উপস্থাপন করেছিল এবং আদালত তা আমলেও নিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চেও বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কথোপকথন ও ম্যাসেজ আদান-প্রদান সংক্রান্ত কললিস্ট উপস্থাপন করেছিল। শুনানির সময় যেসব গ্রাউন্ডে আসামিপক্ষ মিন্নির জামিন মঞ্জুরের জন্য আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করে সেসব গ্রাউন্ডের বিপরীতে পর্যাপ্ত প্রমাণপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি।

এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি তদন্ত মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রিফাত হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।

তিনি আরো বলেন, মামলার আলামত হিসেবে নয়ন বন্ডের বাসা থেকে মিন্নির ব্যবহৃত একটি জামা, একটি চিরুনি, খোদাই করে নয়ন ও মিন্নির নাম লেখা একটি শামুক এবং নয়ন বন্ডের রুমের দেয়ালে বাধাই করে টাঙানো মিন্নির একটি ছবি জব্দ করেছে পুলিশ। এছাড়াও অন্যান্য তথ্য উপাত্ত তো রয়েছেই।

এ বিষয়ে বরগুনার এসপি মারুফ হোসেন বলেন, রিফাত হত্যাকাণ্ড মামলাটি একটি স্পর্শকাতর মামলা। এ মামলার তদন্তে তাড়াহুড়া করলে ভুল থেকে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই পুলিশ সতর্কতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে মামলার তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top