সেবা ডেস্ক: স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তিভূমি ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শাসন-শোষণ, নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা-লুণ্ঠন সীমা ছাড়িয়ে গেলে বাঙালি জনগোষ্ঠী, ‘জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, চিত্ত ভাবনাহীন’ মনে করে স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে।
অবশেষে নয় মাসের সংগ্রাম, রক্ত ও সম্ভ্রম বিসর্জনের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। বাঙালির গৌরবময় এ অধ্যায়টি সার্থকভাবে রচনার জন্য জাতিকে প্রত্যয়ী করেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার বজ্রকণ্ঠ বাঙালি জাতির মননে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ও জাতিগত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন জাগ্রত করে। তিনি ছয় দফা গ্রহণ ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে চূড়ান্ত সংগ্রামের দিকে ধাবমান করেন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ করে বাঙালি জাতি। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে অসম রক্তাক্ত লড়াইয়ে ১৬ ডিসেম্বর সাফল্য পায় বাঙালি। বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্রে ভাস্বর হয়ে উঠে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ফিরে পায় বাঙালি জাতি।
মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতা, দৃঢ় মনোবল, লড়াই-কুশলতা ও প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকার মানসিকতার ফলশ্রুতিতে আরাধ্য বিজয় অর্জিত হয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বুদ্ধিদীপ্ত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও বিরাট ভূমিকা রেখেছে। গণমাধ্যমের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন সহযোগিতা মুক্তিযুদ্ধে শক্তি সঞ্চার করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস যুগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জোরদার হয়েছে বিশ্ব জনমত। এতে সুগম হয়েছে বিজয় অর্জনের পথ। দেশি গণমাধ্যমের পাশাপাশি বিদেশি গণমাধ্যমও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।
প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য টাইমস, দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, দ্য স্টেটস ম্যান, ফিন্যানসিয়াল টাইম, বিবিসি, টাইম ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাকে মুহূর্তেই ছড়িয়ে দেয় বিশ্বময়। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা তুলে বিশ্ব জনমতকে বাঙালিদের পক্ষে আনতেও প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। ফলে দিন দিন বেড়েছে আমাদের বন্ধু-দেশের সংখ্যা। এক ঘরে হয়ে পড়েছে হানাদার পাকিস্তান। বিশ্ব জনমত তাদের বিপক্ষে যাওয়ায় পাকসেনাদের মনোবল ভেঙে যায়।
পক্ষান্তরে বিশ্ব জনমত ও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা শক্তি-সাহস পেয়েছে, তাদের নৈতিক মনোবল ছিল ইস্পাত কঠিন। ফলে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন সহজ হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম মহানায়ক। সেরা মুক্তি সংগ্রামী, সেরা রাষ্ট্রনায়ক। জননন্দিত নেতা হিসেবে তার তুলনা ছিলেন তিনি নিজেই। দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা ও দায়বোধ তাকে মহীরূহে পরিণত করেছিল। ব্যক্তি শেখ মুজিব হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছিল। বাঙালির গৌরবদীপ্ত স্বাধীনতা সংগ্রামকালীন, জনগণের মহান অধিনায়ক বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে বিশ্ব গণমাধ্যমও ছিল সোচ্চার।
THE GUARDIAN ২৭ মার্চ ১৯৭১ Heavy fighting after UDI (Unilateral Declaration of Independence) by East Pakistan শিরোনামে লিখেছে- Heavy fighting was reported from several areas of East Pakistan last night as Government troops moved into crush a break away movement led by Sheikh Mujibur Rahman.
The Times, March একই দিনে Heavy fighting as Shaikh Mujibur declares E Pakistan independent শিরোনামে উল্লেখ করে- Civil war raged in the eastern region of Pakistan last night after the provincial leader, Shaikh (Sheikh) Mujibur Rahman, had proclaimed the region an independent republic.
The Yomiury, Independence Declared শিরোনামের সংবাদে লেখে- East Pakistan leader Sheikh Mujibur Rahman today proclaimed independence for the province.
১৯৭১ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি সংখ্যাতেই লন্ডন টাইমস রিপোর্ট করে: শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের উদ্দেশে প্রদত্ত বিবৃতিতে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ এর পরিবর্তে, ‘বাঙালি জাতির’ কথা উল্লেখ করেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি লিভারপুল ডেইলি পোস্ট মন্তব্য করে: হোয়াইট হলে এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হয়ে যেতে পারে অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান নিজে স্বাধীন বাঙালি মুসলিম প্রজাতন্ত্র বলে ঘোষণা করবে। বৃটিশ সরকার একটি কমনওয়েলথভুক্ত দেশ বিভক্তির মারাত্মক সম্ভাবনার মুখোমুখি হচ্ছেন।
১৯৭১ সালে ৩ মার্চ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা ২ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকার সাংবাদিক সম্মেলনের খবর পরিবেশন করে বলে: আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় তাড়াহুড়া করে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বললেন, আওয়ামী লীগ মার্চ মাসের ৭ তারিখে একটি জনসভা করবে এবং এই সভায় তিনি বাংলার জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের কর্মসূচি প্রদান করবেন।
৯ মার্চ সংখ্যায় ডেইলি টেলিগ্রাফ মন্তব্য করে: শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা একরকম ঘোষণাই করেছেন; ২৫ মার্চে জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগদানের পূর্বশর্ত হিসেবে প্রদত্ত ৪ দফা দাবির মধেই একথা লুক্কায়িত রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব তার আন্দোলনকে ‘স্বাধীনতার আন্দোলন’ বলে অভিহিত করে জাতীয় পরিষদে সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন শর্ত আরোপ করেন, যা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান মেনে নিতে পারেন না।
একই দিন ডেইলি টেলিগ্রাফ এর সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করে: আমরা এরইমধ্যে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের সম্ভাব্য নামকরণ শুনেছি যা বাংলাদেশ কিংবা বঙ্গভূমি হতে পারে। এর পতাকাও বানানো হয়ে গেছে।
১৫ মার্চ নিউইয়র্ক ভিত্তিক ‘টাইম’ সাপ্তাহিক রিপোর্ট করে: পাকিস্তানকে দুটি পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত করণে আসন্ন বিভক্তির পশ্চাতে যে মানুষটি রয়েছে তিনি হচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান। গত সপ্তাহে ঢাকায় শেখ মুজিব টাইম-এর সংবাদদাতা ডন কগিনকে বলেন, বর্তমান পাকিস্তানের মৃত্যু হয়েছে, সমঝোতার আর কোনো আশা নেই।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত টাইমস ও গার্ডিয়ান পত্রিকায় ২৭ মার্চ ৭১ সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল-
Sheikh Mujibur Rahman the acknowledged leader of Bengali Nationalism responded heroically to the Pakistan Armys intervention with a call for resistance and declaration of independence.
লন্ডন অবজারভার পত্রিকার ২৮ মার্চ ’৭১ সংখ্যায়- Sheikh Calls for Help শিরোনামে লেখে...
as free as Bangladesh the name the (Sheikh Mujib) gave to East Pakistan when he declared it independent on friday.
Newsweek April 05, 1971 সংখ্যায় উল্লেখ করে-
In his turn Mujib proclaimed East Pakistan the Sovereign, independent Peoples Republic of Bangladesh (Bengal Nation). Zviv Poet of Politics
উপশিরোনামে আবারো স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করে এভাবে: When Sheikh Mujibur Rahman proclaimed the independent of Bangladesh last week...
Time Magazine 5 April, 1971... Pakistan: ...soon the Free Bengal Revolutionary Radio Center, probably somewhere in Chittagong crackled in life. Over the clanestine station. Mujib proclaimed the creation of the ‘Sovereign independent Bengali nation, and called on its people to resist the enemy forces at all costs in every corner of Bangladesh... At 1:30 a.m. the following day soldiers seized the Sheikh in his home.
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ: ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দিবাগত রাতে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান রেডিও এবং টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সে ভাষণে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিবকে পুরোপুরি দোষারোপ করে বলেছিলেন, ÔSk Mujib has declared independence of East Pakistan. He is traitor. This time he will not go unpunished’ (শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। সে একজন দেশদ্রোহী। এবার সে শাস্তি এড়াতে পারবে না)।
২৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে লন্ডন থেকে প্রকাশিত The Daily Telegraph পত্রিকার প্রথম পাতায় নতুন দিল্লী থেকে তাদের সাংবাদিক ডেভিড লোমাক-এর পাঠানো সংবাদের ভিত্তিতে Civil War in East Pakistan/Sheikh a traitor, says President. শিরোনামে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার কথা লেখা হয়।
২৫-২৬ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’ বিশ্বের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ২৭ মার্চ ১৯৭১- প্রকাশ করে। declare independence- এ শিরোনামের নিচে লিখা ছিল শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা দিলে সেখানে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এ দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফসল। এ স্বাধীনতা অর্জন করতে এ দেশের মানুষ সংগ্রাম আর আন্দোলনের নানামাত্রিক অধ্যায় অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের বুক থেকে উঠে আসা প্রায় ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই সুফলা জনপদটির মানুষ সুপ্রাচীনকাল থেকেই স্বাধীনতা প্রিয়। তারা সব শোষণ, নির্যাতন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে কালে কালে।
যদিও ঐতিহ্যগতভাবে বাঙালিরা সহজ-সরল এবং সহিষ্ণু। কিন্তু তারা কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়নি। প্রশ্রয় দেয়নি শোষণ এবং নির্যাতনকে। যার কারণে তারা যখনই শোষিত ও নির্যাতিত হয়েছে তখনই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়েছে।
সামরিক, বেসামরিক সব ক্ষেত্রে যখন পাক আমলে বাঙালি জনগোষ্ঠী অধিকার বঞ্চিত হচ্ছিল, তখনই বাঙালিরা নিজেদের অধিকারের জন্যে গর্জে উঠেছে। আর দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে সমর্থন-সহযোগিতা দিয়েছে অকৃপণভাবে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ব-গণমাধ্যম যে ভূমিকা রেখেছে তা এক কথায় অতুলনীয়।
অনস্বীকার্য যে, বঙ্গবন্ধু প্রাতিষ্ঠানিকতার প্রতিভ‚ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরোধিতা যেমন করেছেন; তেমনি যুদ্ধত্তোর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র দুই মাসের মাথায় মিত্র বাহিনীকে নিজ দেশে প্রেরণ নিশ্চিত করেছেন। একটি সশস্ত্র সংগ্রামের প্রাক প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পাশাপাশি বাঙালির সংগ্রামের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের অপপ্রচারের সুযোগ একদমই রাখেননি।
স্বাধীন দেশে মাত্র পৌনে চার বছরের শাসনামলে গভীর মানবিক মূল্যবোধ সংবলিত একটি সংবিধান প্রণয়ন, অপরিহার্য সব প্রতিষ্ঠানের বুনিয়াদ গঠন এবং পরিচালনার নীতি প্রণয়নের কাজ অবিশ্বাস্যভাবে সম্পন্ন করেছিলেন তিনি। বাঙালির স্বাধীনতা লাভের ক্ষেত্রে যে ঋজু নেতৃত্ব, বাঙালির হাজার বছরের উজ্জ্বল ইতিহাসের নায়ক, গণমাধ্যমের শিরোনাম তো অনিবার্যভাবে তিনিই হবেন।
অপরদিকে প্রতিপক্ষ তাকেই লক্ষ্য বানাবে, তাকে ঘায়েল করতে কুচক্রীদের সব কৌশল আবর্তিত হবে, হয়েছেও তাই। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম; যা রক্তক্ষয়ী, অশ্রু ঝরা, ত্যাগের মহিমামণ্ডিত, সেখানে শুধুই শেখ মুজিব এবং তার নেতৃত্বে গণযুদ্ধরত জাতি। বিজয় অর্জনের পর তিনি স্বীকৃত জাতির পিতারূপে। যিনি বাঙালির সর্বসহায়, পরম নির্ভর।
প্রখ্যাত লেখক গ্যারী উইলস ১৯৯৪ সালে ‘দি আটলান্টিক মান্থলী’ পত্রিকায় ‘হোয়াট মেকস এ গুড লিডার’ প্রবন্ধে বলছেন যে, নেতৃত্বের যে বৃত্ত তার উপাদান ৩টি: Leader, Followers & Goals. নেতার প্রয়োজনীয় গুণাবলী হলো: ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্বের সম্মোহনী ক্ষমতা, জনগণের সামনে স্পষ্ট এমন একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্যে প্রয়োজনীয় উদ্যম ও উদ্যোগে নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। এমন গুণাবলি সমৃদ্ধ নেতাকে প্রায়শ ‘কারিশমা’ সম্পন্ন নেতাও বলা হয়।
জার্মান সমাজবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাক্সিমিলিয়ান কার্ল এমিল মাক্স ভেবার (ভুলক্রমে সচরাচর উচ্চারিত ম্যাক্স ওয়েবার) ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের মডেল হিসেবে উল্লেখ করেছেন, এ নেতৃত্বকে একই সঙ্গে সৃজনশীল ও বিপ্লবী হতে হবে। প্রকৃত প্রস্তাবে একজন নেতা তখনই তার অনুসারিদের জন্যে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন যখন তিনি ত্রিকালদর্শী হন। অর্থাৎ নেতা অতীত সম্পর্কে অভিজ্ঞ, বর্তমানকে অনুধাবন করেন এবং ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা হতে পারেন।
বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী নেতৃত্বের মধ্যে উল্লেখিত সব উপাদানই পরিলক্ষিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তখনকার সংবাদ বিশ্লেষণ নিশ্চিতভাবেই সাক্ষ্য দেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের রক্তস্নাত গৌরব বঙ্গবন্ধুর হাতে পরিণতি প্রাপ্ত, প্রথম বাংলাদেশ সরকারের (নির্বাচিত) নেতৃত্বে মরণপণ যুদ্ধের মাধ্যমে সূচিত। এই নেতৃত্বকে নির্বাসন, আন্দোলন বা নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরাভূত করা যায় না।
এজন্য ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাঙালির জীবনে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালির হৃদয়ে যে ক্ষতের সৃষ্টি করা হয়েছে, তা বাঙালি জাতিকে চিরদিনই বয়ে বেড়াতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫-এর আগস্ট ট্রাজেডিতে নিহতদের চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গেই স্মরণ করবে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।