
সেবা ডেস্ক: হজ করার সকল কার্যক্রম মক্কাতেই সীমাবদ্ধ। এছাড়া মক্কায় রয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাবান মসজিদ। যেখানে নামাজ পড়লে অন্য মসজিদের তুলনায় এক লাখগুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে হয়ত আমরা সবাই সে মসজিদ চিনতে পেরেছি, সে মসজিদটি হচ্ছে মসজিদে হারাম।
তাই হাজি সাহেবদের মক্কার বাইরে যেতে হয় না। কিন্তু ইচ্ছে করলে হজের সফরে আমরা ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন নিদর্শন, যুদ্ধের ময়দান ও ঐতিহাসিক বস্তু দেখে আসতে পারি। ইসলামের সে নিদর্শনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাসি-কান্নার ইতিহাস। যা দেখলে মুমিনের ঈমান তাজা হবে। শানিত হবে দ্বীনি চেতনা। সেগুলো হচ্ছে-
মক্কায় জিয়ারতের স্থানগুলো-
গারে হেরা:
গারে ছাওর:
হিজরতের সময় নবী করিম (সা.) মক্কা থেকে বের হয়ে এখানে এসে আশ্রয় নেন। সঙ্গে ছিলেন প্রিয় সহচর হজরত আবু বকর (রা.)। আল কোরআনে এই গুহা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘স্মরণ করুন ওই সময়ের কথা যখন তাঁরা দুজন ছিলো গুহায় এবং তিনি তার সহচরকে বললেন পেরেশান হয়ো না নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।’ উক্ত আয়াতে যে গুহার আলোচনা হয়েছে তা হচ্ছে গারে ছাওর। এখানে তিন দিন অবস্থানের পর নবী করীম (সা.) মদিনার পথে রওয়ানা হন।জাবালে আবু ক্বুবাইস:
জান্নাতুল মুআল্লা কবরস্থান:
জান্নাতুল মুআল্লাহ মক্কার কবরস্থানের নাম। দুনিয়ার বুকে জান্নাতুল বাকির পরেই এই কবরস্থানের মর্যাদা। এই কবরস্থানকে জিয়ারত করা মুস্তাহাব। সেখানে অনেক সাহাবা, তাবিয়ীন ও বুযূর্গ শুয়ে আছেন। তাই পূর্ণ আদবের সঙ্গে কবর জিয়ারত করতে হবে।মক্কার আশপাশে জিয়ারত করার মতো কিছু মসজিদ-
(দুই) মসজিদে জ্বিন বা জিনের মসজিদ। যেখানে উপস্থিত হয়ে জ্বিনেরা রাসূল (সা.) এর কোরআন তেলাওয়াত শুনেছিলেন সেখানে পরবর্তীতে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এটাই এখন বিখ্যাত মসজিদে জ্বিন।
মদীনায় যে সকল স্থানে জিয়ারতের জন্য যাওয়া যায়-
উহুদ পাহাড়:
মদিনা থেকে আনুমানিক তিন মাইল দূরে অবস্থিত উহুদ পাহাড়। ওই পাহাড়ের দিকে ইশারা করে নবী করীম (সা.) বলতেন ‘উহুদ ওই পাহাড় যে আমাদের মহব্বত করে এবং আমরাও তাকে মহব্বত করি।’ তৃতীয় হিজরিতে এখানে ঐতিহাসিক উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ওই যুদ্ধে সত্তরজন সাহাবি যাদের মধ্যে রাসূল (সা.) এর প্রিয় চাচা হামযা (রা.)ও ছিলেন মর্মান্তিকভাবে শহীদ হন। হজরত হামযা ও মদিনার শিক্ষক হিসেবে খ্যাত হজরত মুসআব ইবনে উমাইর (রা.)-সহ প্রায় সত্তরজন শহিদের কবর সেখানে রয়েছ। প্রসিদ্ধ আছে যে, হজরত হারুন (আ.) এর কবরও সেই উহুদের প্রান্তরেই নাকি বিদ্যমান।জান্নাতুল বাকীতে কবর জিয়ারত:
মসজিদে কুবা:
মসজিদে কুবা হচ্ছে মুসলমানদের প্রথম মসজিদ। মসজিদে নববী থেকে প্রায় দুই মাইল দূরে পশ্চিম দিকে। মক্কা থেকে হিজরতের পর রাসূল (সা.) বনু আওফ গোত্রে অবস্থানের সময় সাহাবায়ে কেরামকে সঙ্গে নিয়ে এই মসজিদ নির্মান করেন। মসজিদে হারাম, নববী মসজিদ ও মসজিদের আকসার পর দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মসজিদ হচ্ছে কুবার মসজিদ। উক্ত মসজিদে নফল নামাজ অনেক ফজিলতের বিষয়। বলা হয় কুবা মসজিদে দুই রাকাত নামাজ সওয়াবের দিক থেকে ওমরার সমান।মসজিদে কিবলাতাইন:
মসজিদে বনি সালেম বিন আওফ:
রাসূল (সা.) হিজরত করে মদিনার এরিয়ায় পৌছার পর যখন বনু সালেম বিন আওফ গোত্রের এলাকায় এলেন তখন জুমার নামাজের সময় হয়ে যায় আর রাসূল (সা.) ওই গোত্রের মসজিদেই প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন। ওই মসজিদটি ‘মসজিদে বনু সালেম বিন আওফ’ হিসেবে বিখ্যাত। এখানেই সর্ব প্রথম জুমার নামাজ আদায় করা হয়।মসজিদে বনি কুরইজা:
ইহুদী গোত্র বনি কুরইজার সঙ্গে যুদ্ধের সময় রাসূল (সা.) যেখানে অবস্থান করেছিলেন সেখানেই ওই মসজিদটি রয়েছে। আনসারদের নেতা হজরত সাআদ ইবনে মুআজকে ওই মসজিদেই ইহুদীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার দেয়া হয়েছিলো। সেখানেই তিনি রায় দিয়েছিলেন যে, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদেরকে হত্যা করা হবে এবং বাচ্চা ও মহিলাদেরকে বন্দি করা হবে।মক্কা ও মদিনার বাইরে জিয়ারতের স্থান সমূহ
মসজিদে বদর:
ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থান সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বদরের ময়দান। দীর্ঘ দিন নির্যাতন সহ্য করার পর যখন বাধ্য হয়ে মুসলমানরা মদিনায় হিজরত করলেন সেখানেও মক্কার মুশরিকদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকে। থাই রাসূল (সা.) চাইলেন মক্কার মুশরিকদের শক্তির মূল উৎস অর্থনৈতিক জায়গাটাকে দুর্বল করে দিতে। তাই দ্বিতীয় হিজরিতে রাসূল (সা.) মক্কার মুশরিকদের একটি বাণিজ্যিক কাফেলাকে ধাওয়া করতে গিয়ে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। বদর দিবসে আল্লাহ তায়ালা হক বাতিলের মাঝে পার্থক্যকারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এই যুদ্ধের পর মুসলমানদের মনোবল পূর্বের তুলনায় বহুগুণ বেড়ে যায়। বর্তমানে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। বদর যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সাহাবায়ে কেরামের মাজার সেখানে রয়েছে। তাই সম্ভব হলে বদর প্রান্তর ঘুরে আসা। ইনশাআল্লাহ ইমান জিন্দাহ হবে।হুদাইবিয়া:
মক্কা থেকে নয় মাইল দূরে হুদাইবিয়া অবস্থিত। ষষ্ট হিজরিতে রাসূল (সা.) তার সহচরবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে কাবা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। উট হুদাইবিয়া নামক স্থানে পৌঁছে বসে পড়ে। রাসূল (সা.) বলেন, এই উট আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত। এরপর বিশেষ কিছু পয়গাম দিয়ে হজরত উসমান (রা.)-কে মক্কায় প্রেরণ করা হয়। হঠাৎ সংবাদ আসে হজরত উসমান (রা.)-কে শহিদ করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) হত্যার বদলা নেয়ার জন্য সাহাবায়ে কেরামের কাছ থেকে আমৃত্যু লড়াইয়ের বাইআত নেন। আল কোরআনে ওই বাইআতকে ‘বাইআতে রিজওয়ান’ বলা হয়েছে।খাইবার:
মদিনা থেকে আনুমানিক ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি শহর। মদিনা থেকে ইহুদিরা বিতাড়িত হওয়ার পর খাইবারে এসে আশ্রয় নেয়। ইহুদি জাতি ষড়যন্ত্রে সর্বকালেই সেরা। খাইবারে বসে ওরা মদিনার মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ইতোমধ্যে তাদের উসকানিতে কয়েকটি যুদ্ধও সংঘটিত হয়েছে। তাই রাসূল (সা.) চাইলেন ওদেরকে শায়েস্তা করতে। সপ্তম হিজরিতে রাসূল (সা.) খাইবার আক্রমন করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটি গুরুত্বপূর্ণ এক যুদ্ধ ছিলো।-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।