
সেবা ডেস্ক: ফেনী জেলার সদর থানাধীন পৌরসভা এলাকা থকে মো. জাহেদ হাসান রনি(২১) নামে একজনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গুজব রটানোর দায়ে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭। মো. জাহেদ হাসান রনি ফেনীর সদর থানার ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ফয়েজ আহমেদ এর ছেলে। আজ সন্ধ্যায় র্যাব-৭ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য দেয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে জানা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের “ভিশন-২০২১” লক্ষমাত্রা অর্জন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক শক্তি হিসেবে র্যাব বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। বাংলাদেশ আমার অহংকার, এই শ্লোগান নিয়ে র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জঙ্গী, সন্ত্রাসী, অবৈধ্য অস্ত্রধারী, মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব-৭ এই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে এবং বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র, গুলি, অপহরনকারী, সন্ত্রাসী, জালটাকার ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী আটকসহ বিপুল পরিমান ইয়াবা ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। এ সকল অসাধু সংঘবদ্ধ চক্রটিকে আইনের আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে র্যাব-৭ এর একটি বিশেষ টিম গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে।
সম্প্রতি কিছু অসাধু ব্যক্তি বর্তমান বাংলাদেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টিসহ বর্তমান সরকারের বদনাম রটানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা রকম গুজব ছড়াচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৭ এ ধরনের গুজবকারীকে গ্রেফতারের লক্ষে সোস্যাল মিডিয়াগুলোতে ব্যাপক মনিটরিং শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে যে, কতিপয় গুজবকারী “জাহেদ হাসান রনি” নামক ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন শ্রেনী সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রæতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর লক্ষ্যে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির মাঝে উস্কানিমূলক তথ্য প্রচারের নিমিত্তে মোবাইল ফোন এবং নানা রকম ইলেকট্রিক ডিভাইস ব্যবহার করে বিভিন্ন ছবি ও তথ্য ফেইসবুক তথা সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারসহ অন্যের পোষ্ট শেয়ার করে নানা রকম গুজব রটানোর কাজে লিপ্ত আছে। ব্যাপক গোয়েন্দা তৎপরতার এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে যে, উক্ত গুজবকারী ফেনী জেলার সদর থানাধীন পৌরসভাস্থ, গোপাল পট্টি, হাবিব চক, ফয়েজ জুয়েলার্স নামক দোকানে অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২৭ জুলাই সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটে র্যাব-৭ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল বর্নিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করলে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে র্যাব সদস্যরা আসামী মো. জাহেদ হাসান রনি কে গুজব রটানোর কাজে ব্যবহৃত দুটি আইফোন ও দুটি সীম কার্ডসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে উপস্থিতি স্বাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীর উদ্ধারকৃত মোবাইলে বিশ্লেষন করে দেখা যায়, তার (জাহেদ হোসেন রনি) ব্যবহৃত ফেইসবুক একাউন্ট পর্যবেক্ষন করে উক্ত ফেইসবুক আইডির টাইমলাইনে বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট ও বিভিন্ন গোষ্টির মধ্যে দ্বন্দ সৃষ্টির লক্ষে মসজিদ পোড়ানোর ছবি ও পাশ্ববর্তী রাষ্ট্রে জনৈক মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করা এবং একজন মুসলমান মহিলাকে মন্দিরে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করার বিভিন্ন ধরনের শব্দ ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশ ও আইন শৃঙ্খলা অবনতি ঘটানো সংক্রান্ত বিভিন্ন পোষ্ট পাওয়া যায়। পোষ্টগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১। “কোন দেশে বসবাস করি দুঃখে বুকটা পেটে যায় কত বড় দুঃসাহস হলে মসজিদে আগুন দিয়ে পুড়তে পারে, গত ব্রাহ্মনবাড়িয়া শহরের পূর্ব মেড্ডা শান্তিবাগ জামে মসজিদে আগুন দিয়ে সম্পুর্ণ মসজিদ পুড়ে ফেলেছে, ২। “তাবরেজ আনসারির বয়স ২৪ বছর, মাত্র তিন বছর বয়সে তার মা মারা যায়, ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারায় তাবরেজ আনসারি, মাত্র ১০ বছর বয়সেই ওয়েল্ডিং এর কাজ করে সংসারের হাল ধরে সে, মাত্র দেড়মাস আগে বিয়ে করে ঘরে নতুন বউ এনেছিল তাবরেজ আনসারি, নতুন বউকে নিয়ে কর্মস্থল পুনেতে যাওয়ার জন্য গত ২৪ তারিখের টিকেটও কেটে রেখেছিল, কিন্তু সে যাওয়া আর হলো না। তাবরেজ আনাসারির বাড়ি বিজিপি শাসিত ঝাড়খন্ডে যেখানে গত চার বছরে প্রায় ১২জন মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাবরেজ আনসারি তার নাম জানার পর মুসলিম হওয়ার কারনে টানা ১৮ ঘন্টা পিটানো হয়েছে তাকে, জয় শ্রীরাম, জয় হনুমান বলতে বাধ্য করা হয়েছে, ১৮ ঘন্টা পিটানোর পর অজ্ঞান হয়ে গেলে পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে, মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পরও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি, অসহ্য যন্ত্রনা ভোগ করে চারদিন পর তার মৃত্যু হয়, বিজেপি, পুলিশ, রাষ্ট্র মিলে তাকে হত্যা করেছে।”, ৩। “মনে আছে ৮বছর বয়সি আসিফার কথা? আসিফা টানা আট দিন ধরে ধর্ষন করে বিজেপি/আরএসএস এর কর্মীরা, নির্যাতনে মারা যাবার পর আসিফার লাশ ফেলে যায় নরপশুরা, বিবিসি প্রতিবেদন অনুসারে নির্যাতনে আসিফার নখগুলি কালচে বর্ণের হয়ে গিয়েছিল তার শরিরে ও আঙ্গুলে অসংখ্য নীল ও লাল দাগ ছিল, এই শিশুটির সারা শরীরে ছিল হিং¯্র কামড়ের দাগ, মানুষ নামের পশুুগলো তার সারা শরীর পাথর দিয়ে থেতলে দেয়, তার গলার হাড় ও পাজরের হাড়সহ সারা শরীরের হাড় ও অস্তিমজ্জা ছিল ভাঙ্গা, আসিফাকে হত্যার আগেও এক পুলিশ অফিসার সবাইকে অনুরোধ করেছিল তাকে শেষবারের মত ধর্ষনের সুযোগ দিতে”, ৪। “মুসলিম হত্যার ইস্যুতে বিজেপি, উগ্র হিন্দু, পুলিশ ও রাষ্ট্রযন্ত্র ছিল সব সময় একতা। তাবরেজ, আসিফা উভয় ক্ষেত্রে পুলিশ অপরাধিদের বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। এমনকি অপরাধীদের পক্ষে মিছিলও হয়েছে, ইন্ডিয়ান মুসলিমদের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে”। উল্লেখ্য যে, গ্রেফতারকৃত আসামীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এ ধরনের গুজব ছড়ানোর কথা স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে এই চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে ফেনী জেলার সদর থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।