বিল্লাল হোসেন মন্ডল: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের অসহায় বিধবা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রাজিয়া খাতুনের (৬৫) প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ঐ ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যের পকেটে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
তালিকায় ঐ প্রতিবন্ধী’র নাম এবং তার নামে ব্যাংকে হিসাবও রয়েছে। ওই নারীর ছেলে দরিদ্র রিকশা ভ্যান চালক আজিবর এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহার আলীর বিরুদ্ধে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ওই নারী চর আমখাওয়া ইউনিয়নের সবুজপাড়া গ্রামের মৃত তহর আলীর স্ত্রী।
সরেজমিনে জানা গেছে, এক যুগ আগে রাজিয়া খাতুনের স্বামী তহর আলী মারা গেলে অসুখে ধীরে ধীরে তার দুই চোখের আলো নিভে যায়। চিকিৎসার অভাবে তিনি এখন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তার দুই হতদরিদ্র ছেলে বৃদ্ধ মাকে লালন পালন করেন। ছেলেরা মায়ের নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিতে বললে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহার আলী তালিকায় রাজিয়ার নাম দিয়েছেন বলে জানিয়ে দেন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সোনালী ব্যাংক সানন্দবাড়ী বাজার শাখায় রাজিয়ার হিসাবে ৭ হাজার ৫০০ টাকাও জমা হয়। রাজিয়া খাতুনের হিসাব নম্বর ৭৬০২ এবং হিসাব বই নম্বর ১২৪১।
বৃদ্ধার ছেলে আজিবর অভিযোগ করে জানান, দেড় বছর আগে ইউপি সদস্য সাহার আলী তার বোনকে বাড়িতে পাঠিয়ে মাকে সোনালী ব্যাংকে নিয়ে যায়। ব্যাংক থেকে টাকা তুললেও ব্যাংক ভবনের নিচে মাকে বলে আপনার কার্ড আসেনি। ব্যাংকে আপনার নাম নাই। তখন ইউপি সদস্য প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডটা তার কাছে রেখে ব্যক্তিগতভাবে মায়ের হাতে প্রথমে ৫০০ টাকা দেন। এরপর আরও ৫০০ টাকা দিয়ে বলেন এই টাকা দিয়ে ওষুধপথ্য কিনবেন। সাহার আলী তার মায়ের ভাতার কার্ডটা পরবর্তীতে করে দেওয়ারও আশ্বাস দেন। এরপর সাহার আলী কাছে অনেকবার যোগাযোগ করেও রাজিয়া আজও কার্ড পাননি। প্রথমবার তার নামে আসা সাত হাজার ৫০০ টাকাও আর পাননি।
বৃদ্ধা রাজিয়া এপ্রতিবেদককে জানান. ‘আমার স্বামী মারা যাবার কিছুদিন পর থেইকা দুই চোখেই কিছুই দেহি না। আমার পোলাগরেও কিছুই নাই। আমার পোলায় মেম্বরেরে ছবিটবি, বোটার কাড সবকিছু দেয়। মেলাদিন আশায় থাহি। হেরপরে একদিন কয় কার্ড অইছে। মেম্বরের বইনেরে দিয়া আমারে ব্যাংকে নিয়া যায়। হেরপরে ব্যাংকের নিচে যাইয়া আমার কাডটা মেম্বরে নেয়। পরে ওষুধপথ্য খাবার লাইগা আমারে এক হাজার টেহা দিয়া কয়, উপুর থেইকা নাম পাশ হয়া আইছে, কিন্তু এইহানে আইসা আপনার নামডা তো কাটা গেছে। এই কতা কইয়া আমারে বাড়িত পাঠাই দেয়। হেরপর মেলা কইলাম। কয় খালি আরও তিনডা কার্ড কাটা গেছে। আবার সুযোগ আইলে আপনেরডাসহ কার্ড কইরা দিমু। আমার টেকাগুইলা তুলবের পাইলে মেলা উপুকার অইতো।’
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আত্মসাত প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য সাহার আলী জানান, ‘রাজিয়ার নাম আমিই তালিকায় দিছিলাম। প্রায় দেড় বছর আগে ব্যাংকে যেদিন প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা তুলে বিতরণ করা হয় সেদিন ওই নারীর কাছে ভাতার কার্ড ছিল না। তাই টাকাও পায় নাই। পরে খোঁজ নিয়ে কার্ড করে দিতে চাইছি। সেদিন তাকে ব্যক্তিগতভাবে এক হাজার টাকা দিছি দুধ আর ওষুধপথ্য কিনার জন্য। তার টাকা আত্মসাত করি নাই। কার্ড না থাকলেও ব্যাংক হিসাবে যেহেতু তার নাম আছে, তাহলে নিশ্চয় সমাজসেবা অফিস বা ব্যাংকের কারও কোনো কারসাজি থাকতে পারে। বিষয়টি তদন্ত হওয়া দরকার। কিছু লোক চক্রান্ত করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।’
কিন্তু সানন্দবাড়ী শাখা সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছেন ভিন্ন কথা। ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইফতেখার উদ্দিন জানান. ‘ইউপি সদস্য সাহার আলীর কথা সঠিক নয়। দেড় বছর আগের কথা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রাজিয়া খাতুনসহ অন্যান্য কার্ডধারীদের প্রাপ্য টাকা ব্যাংক হিসাব থেকে তুলে তাদের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছি। ব্যাংকের বাইরে কি হয়েছে তা বলতে পারবো না। হয়তো ওই নারীর কাছে ভাতার কার্ড না থাকায় তিনি পরবর্তীতেও আর টাকা তুলতে আসেননি। কিন্তু এই ব্যাংকে ওই নারীর নামে হিসাব রয়েছে। পুরাতন নথিপত্র ঘাটতে হবে। সংশ্লিষ্ট ভাতা বিতরণ কর্মকর্তা ব্যাংকের কাজে বাইরে থাকায় আজকে কোনো তথ্য দিতে পারছি না। আগামী রবিবার বিস্তারিত জানা যাবে।’
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা সমাজেসেবা কার্যালয়ের মাঠ কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ জানান. ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রাজিয়া খাতুনের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আত্মসাতের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।’
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।