সেবা ডেস্ক: লজ্জা, লাজুকতা বা শরম মূলত প্রকৃতি ও জন্মগত বৈশিষ্ট্য হিসেবে মানুষের ভেতর গচ্ছিত রাখা হয়েছে। আর তা এমন একটা গুণ যা সকল প্রকার অহঙ্কারকে বাধা দেয় এবং মঙ্গলময় জীবনের দিকে মানুষকে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেয়।
লজ্জা এমন এক দেয়াল ও বাধা, যার দ্বারা বিশৃঙ্খলা ও ফ্যাসাদ দূর হয়ে যায়। আর যদি সে দেয়াল ভেঙে যায়, তবে ফের ওই ফ্যাসাদ এবং অপরাধসমূহের বন্যা বয়ে যায়, যা বন্ধ করার কোনো উপায় থাকে না। যদি লজ্জা-শরমের এই রাগ মানুষের ভেতর থেকে খতম হয়ে যায়, তবে এই ধ্বংস তার গভীরে অনেককে ঘিরে ফেলে।
নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমার লজ্জা-শরম না থাকে, তবে তুমি যা চাও কর। অর্থাৎ যদি শরম ও লজ্জার মতো সম্পদ তোমার থেকে চলে যায়, তবে তুমি যা ইচ্ছে হয় তাই করতে পার। কেননা কারো ভেতরে লাজুকতা না থাকলে তাকে আর কোনো অন্যায় কাজ থেকে ফেরানো যায় না। এটাকে ফার্সি ভাষায় বলা হয়, ‘ বে-হায়া বাশ ও হার ছে খাওয়াহি কুন।’ এ জন্যে মনুষত্বের শত্রুরা সর্বপ্রথম একজন মানুষের থেকে লজ্জা-শরম কেড়ে নেয়। উলঙ্গ ছবি, অশ্লীল গান ও অর্ধলোঙ্গ ছবি, সিনেমা, গান ইত্যাদি সমস্ত বিষয়; তূনীরের ওই তীর যার দ্বারা মুমিনের মন-মেজাজকে অবৈধ বিনোদনের জন্যে বিঁধে শিকারী তার শিকার সেরে ফেলে। টার্গেট বা লক্ষ্য সর্বদা ঈমান ও লজ্জার মতো সম্পদের মধ্যে পর্দা ঢেলে দেয়। কেননা এটাই সবচেয়ে মূল্যবান সামগ্রী। যার ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, লজ্জা ঈমানের একটি অঙ্গ। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, লজ্জা অনুপম ও সর্বোত্তম সামগ্রী যা কল্যাণ বয়ে আনে।
এটা সর্বজনবিদিত যে, লজ্জা দুই প্রকার। একটা হলো, অভ্যাসগত ও জন্মগত গুণ। যা প্রকৃতিগতভাবে প্রত্যেক মানুষের ভেতর বিদ্যমান থাকে। আর অহঙ্কারের মতো পাপ করা থেকে মানুষকে বাধা দেয় এবং কল্যাণের দিকে উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দেয়। হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরাশাদ করেছেন, লজ্জা উত্তম ও কল্যাণকর হয়ে থাকে। আর এর দ্বারাই ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ গুণসমূহ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, সরল সঠিক ও কল্যাণের পথ দেখায়। যেমন, হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা বলেছেন, যে লাজুকতার কারণে চুপ থাকে, আর যে চুপ থাকে সে মুত্তাকি হয়ে যায়, আর যে মুত্তাকি হয়ে যায় সে যেন নিজেই নিজেকে বাঁচিয়ে নিল। হজরত জাররাহ বিন আবদুল্লাহিল হিকমা রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেছেন, মিশরের বিখ্যাত বুযুর্গ ও যিনি শাহ্সওয়ার হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনি বলেন যে, আমি লাজুকতার কারণে চল্লিশ বছর পর্যন্ত গোনাহসমূহকে ছেড়ে দিয়ে সংযমটাকে নিজের জন্যই বেছে নিই। মোটকথা এই লজ্জার প্রথম প্রকার, যা প্রত্যেকের ভেতরে প্রাকৃতিকভাবে গচ্ছিত থাকে।
লজ্জার আরেকটি প্রকার হলো, যা প্রথমটি থেকে আরো উচ্চস্তরের ও উন্নত। যা মানুষ তার ইচ্ছেশক্তির দ্বারা অর্জন করে থাকে। মানুষ আল্লাহ তায়ালার পরিচয় ও তার নৈকট্য উপস্থিত জ্ঞান দ্বারা অর্জন করে থাকে। এ কথা দৃষ্টিতে বিদ্যমান থাকে যে, আল্লাহ তায়ালা সত্তাগতভাবে অন্তরের রহস্য জেনে থাকেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও লজ্জা-শরমের পুত্তলি ছিলেন এবং এ গুণের প্রতি ভালোবাসাও রাখতেন। সুতরাং হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দানীশীন কুমারি মেয়ে থেকেও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। কোনো অপছন্দনীয় জিনিস দেখলে, তিনি সে অপছন্দনীয় বিষয়ের নাম মুখে নিতেন না। হ্যাঁ তবে চেহারা মোবারকের নুরে একটা আবরণ চলে আসতো। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, যদি কোনো কাজ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পছন্দ না হতো, তখন তার নাম নিয়ে তাকে নিষেধ করতেন না, বরং সাধারণভাবে ঘোষণা করে সে কাজ থেকে সবাইকে নিষেধ করতেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এ কথাই বলেছেন যে, আমি হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনো উলঙ্গ অবস্থায় দেখি নাই। তাঁর প্রকৃতির ডাক আসলে তিনি এতোটাই দূরে যেতেন যে, দৃষ্টিসীমায় তাকে দেখা যেত না। মক্কায় যতোক্ষণ পর্যন্ত তিনি অবস্থান করেছেন, প্রাকৃতিক প্রয়োজন পড়লে তিনি হারাম শরিফের নিষিদ্ধ এলাকার বাইরে চলে যেতেন, যার দূরত্ব মক্কা থেকে কমপক্ষে ৩ মাইল হয়ে যেত। (সিরাতুন নবী)।
যখন কোনো অপরাগতার কারণে তাঁর মাফ চাওয়ার প্রয়োজন পড়ত, তখন হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লজ্জার কারণে তাঁর মাথা মোবারক ঝুঁকিয়ে রাখতেন। কারো তবিয়ত ও আদান-প্রদানের কারণে নিজেকে কষ্ট দিতেন, তবুও অন্যকাউকে তার ভুলের জন্যে লজ্জা দিতেন না। (দুররে ইয়াতিম)।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।