নতুন অর্থবছরের নতুন চমক সামাজিক নিরাপত্তা

S M Ashraful Azom
0
নতুন অর্থবছরের নতুন চমক সামাজিক নিরাপত্তা
সেবা ডেস্ক: বিগত দশ বছরে শেখ হাসিনার সরকার সামাজিক নিরাপত্তায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। বর্তমান সরকারের প্রতিটি বাজেট ছিলো এদেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশা বিমোচনের জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থবছর ২০১৯-২০ এর প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হয়েছে।

এতে সুবিধা পাবেন প্রায় ৮৯ লাখ মানুষ। এ জন্য বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ। যা জিডিপি ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এতে করে দারিদ্র্য নিরসন ও বৈষম্য হ্রাসে সহায়তা করবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এদিকে, নতুন অর্থ বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের বিবরণী তুলে ধরা হলো-

১। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের বাজেট বৃদ্ধি: সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ও সামাজিক ক্ষমতায়নের আওতায় আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় সব ধরনের ভাতা, সম্মানী ও অনুদান বাড়ছে। বাড়ছে কয়েকটি কর্মসূচীর উপকার ভোগীদের সংখ্যাও। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মধ্যে সাধারণত বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, দরিদ্র নারীদের মাতৃকালীন ভাতা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি দেয়া হয়। নিম্নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা বর্ণিত হলো –
New financial year new social security
২। সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ভাতা বৃদ্ধি: আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ২ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা বর্তমানে ১০ হাজার টাকা করে মাসিক সম্মানী পেয়ে থাকেন। দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার জন্য চলতি অর্থবছরে সম্মানী বাবদ ৩ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিজয় দিবস ও পয়লা বৈশাখে দুটি উৎসব ভাতাও পান তারা। ৪০ লাখ বয়স্ক লোকের জন্য চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে। তারা মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পান। প্রতিবন্ধীরা বর্তমানে ৭০০ টাকা করে ভাতা পান যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা করে ভাতা প্রদান করা হবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬ লাখ প্রতিবন্ধীদের জন্য ৮৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রাথমিক বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তির পরিমাণ ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা করা হচ্ছে।

নিম্নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের ভাতা বৃদ্ধির পরিমাণ বর্ণিত হলো:
New financial year new social security

৩। সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ভাতাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি: সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় নতুন করে ১৩ লাখ মানুষকে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৮৯ লাখ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ বরাদ্দ পাঁচ হাজার ৩২১ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। নিম্নে ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে সম্প্রসারিত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাতাভোগীর সংখ্যা বর্ণিত হলো:
New financial year new social security

৪। আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নয়নে ২২ জেলায় বিশেষ কর্মসূচী: উপরোলে­খিত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াও দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্রঋণ, ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচী বাস্তবায়িত হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে আরো যুগোপযোগী ও কার্যকর করতে এবং টেকসই দারিদ্র বিমোচন এবং রূপকল্প-২০২১ ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে নীতি ও কৌশল নির্ধারণ পূর্বক একটি জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এ কৌশল পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসকে লক্ষ্য করে কর্মসূচী প্রণয়ন করা হয়েছে। পিছিয়ে থাকা ২২টি জেলায় ১ হাজার ৩০টি ইউনিয়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বছরের যে সময়টায় কোন কাজের সুযোগ থাকে না, সেই সময় গ্রামীণ অবকাঠামো ও সড়ক মেরামত এবং সংরক্ষণসহ নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। কাজের বিনিময়ে প্রতিদিন জনপ্রতি ১৫০ টাকা করে দেওয়া হয়। তাদের নামে আরো ৫০ টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে, যা দেড় বছর পর ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় প্রণোদনা দেয়া হবে। এ সঞ্চয় করা অর্থ দিয়ে ব্যক্তি-উপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হবে। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ শত ৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ৬ শত ৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি শুরু হয়েছে জুলাই ২০১৮ থেকে। এ কর্মসূচীতে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী নারীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি কর্মসংস্থানমূলক নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। গত ১ দশকে বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসে উলে­খযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। যেখানে ২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০% তা ২০১৮ সালে ২১.৮% নেমে এসেছে। সরকার ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১২.৩০% এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৪.৫০% এ নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। দারিদ্র্য নিরসনে বর্তমান সরকার ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে যাতে ৬০ লক্ষ পরিবারকে পর্যায়ক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৯৬০ জন উপকারভোগী রয়েছে।

৫। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উত্তরোত্তর সম্প্রসারণ: দুস্থ, অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, প্রতিবন্ধী এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে ব্যাপক ও বহুমুখী কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সরকার। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, হিজড়া, বেদেসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০ লক্ষ ব্যক্তিকে বিভিন্ন ভাতা প্রদান করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতাসমূহ ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সরাসরি সুবিধাভোগীদের নিকট বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। ফলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সুবিধাভোগীদের ভাতাসমূহ সরাসরি প্রাপ্তির ফলে মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম থাকবে না এবং উপকারভোগীগণ প্রাপ্ত ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top