সেবা ডেস্ক: গত ১২ মে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বানকিনা এলাকায় পাকা ধানে আগুন দেয়ার ঘটনাটি রহস্যজনক বলে দাবি করেছে স্থানীয়রা। আর এর পেছনের মূল হোতা গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পাইকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন।
‘ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে’ ১২ মে পাইকড়া গ্রামের আবদুল মালেক সিকদার নামের এক কৃষক তার ধান ক্ষেতে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এর একটি ভিডিও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে।
মালেক সিকদারের দাবি, প্রতি মণ ধানের দাম থেকে প্রতি শ্রমিকের মজুরির দাম দ্বিগুণ। তিনি বলেন, এবার ধান আবাদ করে আমরা মাঠে মারা পড়েছি। তাই মনের দুঃখে পাকা ধানে আগুন দিয়েছি।
এরপর ১৫ মে জেলার বেশ কয়েকটি কলেজের ১৫ শিক্ষার্থী তার ধান কেটে দেন।
স্থানীয়দের দাবি, মাত্র ১০-১২ ‘গুছি’ ধান পুড়িয়ে আলোচনায় এসেছেন জাসদ থেকে আওয়ামী লীগে আসা মালেক সিকদার।
স্থানীয় রিকশাভ্যান চালক মো. শাহালম জানান, কারো না কারো উসকানিতে মালেক সিকদার ধান পুড়িয়েছেন। এটা নিয়ে বাজারের মোড়ে মোড়ে চলছে আলোচনা। পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকরাও আসছে। খবরা-খবর নিচ্ছে তারা।
মালেক সিকদারের প্রতিবেশী মো. আশরাফ মিয়া বলেন, মালেক সিকদারের চাচা হুরমুজ বিএসসি কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান ছিলেন; তিনি বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে এর বাইরে আর কিছু বলেন নি আশরাফ।
‘ভাই এই ঘটনায় রহস্য আছে। ইন্ধনদাতা এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কারণ অভিজ্ঞ লোক ছাড়া এতো সুন্দর ভিডিও কেউ করতে পারবে না। আমরা ভিডিও করতে গেলে ঝাপসা আসবে ও অনেক কাঁপাকাপি করবে’ বলেন কালোহা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী গৌতম।
অপূর্ব চক্রবর্তী নামে এক কিশোর জানান, কোন এক সাংবাদিক আসার পর মালেক সিকদার পাকা ধানে আগুন ধরিয়ে দেন। তবে ওই সাংবাদিকের নাম জানেন না বলে তিনি জানান।
মালেক সিকদার বলেন, আমার সাংবাদিক বন্ধু কামরুলের সঙ্গে ধান পোড়ানো নিয়ে কথা হয়েছে। বিষয়টি হয়তো ফেসবুকে সে লিখেছে।
তবে ধান পোড়ানোর দিন সেখানে কামরুল ছিলো কি-না সে বিষয়ে নিশ্চিত করেন নি মালেক সিকদার।
মালেক সিকদারের ৫ ভাই। সবচেয়ে বড় ভাই দেলোয়ার মিয়া দলিল লেখক। তিনি কালিহাতীতে থাকেন। মালেকের বড় ভাই মো. খালেক সিকদার। তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১০ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তৃতীয় মালেক সিকদার। মালেকের ছোট ভাই আইয়ুব সিকদার একটি এনজিওতে চাকরি করেন।
তার ছোট ভাই সিঙ্গাপুর প্রাবসী। আর সবার ছোট সোহেল মিয়া দলিল লেখক। তিনিও টাঙ্গাইল শহরের থাকেন।
মালেক সিকদারের দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে মিম সিকদার অনার্স প্রথম বর্ষে, মেঝো মেয়ে মুন সিকদার চতুর্থ শ্রেণিতে লেখা পড়া করে। ছোট ছেলে মাহি সিকদার। ৫ সদস্যের সংসার তার।
কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের তদন্ত চলমান। আমাদের মতো আরো বেশ কয়েকটি সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু বলা যাবে না।
কালিহাতীর ইউএনও অমিত দেবনাথ বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের তদন্ত এখনো চলমান। এ ঘটনায় তৃতীয় পক্ষ আছে কিনা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে সেটা বলা যাবে না। তদন্ত শেষ হওয়ার পর কেউ জড়িত থাকলে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানা যাবে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।