সেবা ডেস্ক: মিমি চক্রবর্তী। একজন কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তবে নতুন পরিচয় তিনি ভারতের একজন এমপি। ভারতের সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন মিমি।
মিমির শৈশব:
মিমি চক্রবর্তী জন্মেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে। তার শৈশবকাল কেটেছে অরুণাচল প্রদেশের তিরাপ জেলার দেওমালি শহরে। সেখান থেকে পরে তিনি পরিবারের সঙ্গে জলপাইগুড়িতে পৈত্রিক বাড়িতে ফিরে আসেন।
মিমির প্রাথমিক শিক্ষা জলপাইগুড়ি হলি চাইল্ড স্কুলে। এরপর তিনি পড়েছেন বিন্নাগুড়ির সেন্ট জেমস স্কুলে। তারপর তিনি কলকাতায় আসেন এবং সেখান থেকে ২০০৬ সালে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
মিমির অভিনয়ের সূচনা:
কীভাবে চলচ্চিত্রে এসেছিলেন মিমি? মূলত মিমি চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পূর্বে ছিলেন একজন মডেল। তিনি ফেমিনা মিস্ ইন্ডিয়াতে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ‘চ্যাম্পিয়ন’ ছবি দিয়ে শুরু হয় তার মিডিয়ায় পথচলা। যদিও সে চলচ্চিত্রে গৌণ ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি।
তবে মিমির ২য় আবির্ভাব ঘটে ‘গানের ওপারে’ ধারাবাহিক দিয়ে। এই ধারাবাহিকের খ্যাতি তাকে আলোয় এনে দেয়। গানের ওপারের চিত্রনাট্য লেখেন বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ ধারাবাহিক নির্মিত হয়। এতে আরো বিখ্যাত ব্যক্তিরা অভিনয় করেন। তবে ৭ ডিসেম্বর, ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বাপি বাড়ি যা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মিমির বড় পর্দায় যাত্রা শুরু।
তবে ফেমিনা মিস ইন্ডিয়ায় অংশগ্রহণ করা অবস্থায় একটি টিভি সিরিয়ালের মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন মিমি। সেই জনপ্রিয়তা যেন তার বড় পর্দার পথ সুগম করে। এরপর একের পর এক সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করেন মিমি। আর ২০১২ সাল থেকে এই পর্যন্ত মোট ২১টি সিনেমায় অভিনয় করেন মিমি।
এদিকে, এমপি হয়েও মিমির চলতি বছরে ২টি ছবি মুক্তি পাবে বলে জানা গেছে। মূলত পশ্চিম বঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্রের এক পরিচিত মুখ হচ্ছেন মিমি। সেই কারণেই হয়ত এই নায়িকার রাজনীতির পথটাও অনেকটা উম্মুক্ত ছিল। এর আগে, অভিনয়ের সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল মিমির। সেদিন থেকে রাজনীতিতে আসার বিষয়টি ভাবতে শুরু করেছিলেন তিনি।
মিমির রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ:
বর্তমানে ভারতের একটি বড় দায়িত্ব মিমির ওপর। তিনি লোকসভা নির্বাচন ২০১৯-এ নির্বাচিত একজন এমপি। এদিকে, সবে শেষ হয়েছে ভারতের এই নির্বাচনটি। তাতে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী। এরপর থেকে তিনি সুন্দরী এমপি হিসেবে সবার কাছে গণ্য হচ্ছেন।
এর আগে, তৃণমূল কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নায়িকা মিমিকে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ৪৭.৯১ শতাংশ হারে মোট ৬,৮৮,৪৭২ টি ভোট পেয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী অনুপম হাজরা ২৭.৩৭ শতাংশ হারে মোট ৩,৯৩,২৩৩ টি ভোট পেয়েছেন। আর ওই এলাকায় তৃতীয় স্থানে সিআইএম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ২১.০৪ শতাংশ হারে মোট ৩,০২,২৬৪ টি ভোট পেয়েছেন। এর মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ ভোটে জিতেছেন মিমি।
তবে ভোটযুদ্ধের আগে মিমিকে অনেকে অনেক ধরনের আক্রমণ করেছিলেন। এমনই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছুদিন আগে ভাইরাল হয়েছিল। ভোটে নামার আগে তার পরিচয় ছিল তিনি শুধুমাত্র একজন অভিনেত্রী। প্রায় দুমাস ধরে বেশিরভাগ সময়ে নির্বাচনী প্রচার ও কর্মীসভা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এমনকি এই কাজের জন্য ভুলেই গিয়েছিলেন খাওয়া দাওয়া ও শরীরচর্চার কথা। শুটিং তো দূরের বিষয়, নিজেকেই সময় দেননি মিমি চক্রবর্তী।
তবে নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও নানাভাবে সমালোচনা হয় মিমিকে নিয়ে। কখনো হাতে গ্লাভস আবার কখনো রিকশার সিটে কাপড় দিয়ে বসাকে সাধারণভাবে নেননি জনগণ। এরপরেও এসব সমালোচনা ও ভাইরাল ভিডিওগুলো কোনোভাবেই প্রভাব ফেলতে পারেনি মিমির ভোটে। যাদবপুর থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি।
গল্প কিন্তু এখানেই শেষ নয়, ভারতের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীরা ভোট গণনার দিন মিমিকে নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় কাটিয়েছে। তবে সেদিন বেলা যত গড়িয়েছে, যাদবপুরে তৃণমূল প্রার্থীর এগিয়ে যাওয়ার খবরও ক্রমশ বেড়েছে। পরে বেলা চারটায় খবর এল, তৃণমূল প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী প্রায় আড়াই লাখ ভোটে এগিয়ে গেছেন, তখনই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দলটি।
এদিকে, মিমির জয়ের ব্যবধান যে এই কেন্দ্রের বিদায়ী এমপি অধ্যাপক সুগত বসুর ব্যবধানের দ্বিগুণ হবে কে জানতো! অনেক দলীয় কর্মীরাই এই ফলাফল আশা করেননি। একদিকে হেভিওয়েট বাম প্রার্থী বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, অন্য দিকে গেরুয়া ঝড়ের পূর্বাভাস; মিমির জন্য একেবারেই সহজ ছিল না। গ্ল্যামারস দুনিয়াটাই তার পূর্ব পরিচিত ছিল কিন্তু রাজনৈতিক দুনিয়ায় তিনি এক্কেবারে আনকোরা। তবে মিমির দুই মাসের ঘাম ঝরানো কঠিন শ্রমেই এসেছিল কাঙ্খিত জয়।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।