বিএনপির দুর্গেই ক্ষোভের তালা ঝুলছে বগুড়ার কার্যালয়ে

S M Ashraful Azom
0
 বিএনপির দুর্গেই ক্ষোভের তালা ঝুলছে বগুড়ার কার্যালয়ে
প্রদীপ মোহন্ত, বগুড়া : ক্ষোভের তালা ঝুলছে বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে। এ পর্যন্ত ১৬টি তালা পড়েছে জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বিএনপির দুর্গখ্যাত বগুড়ার জেলা কার্যালয়ে। যাদেরকে বহিষ্কার করা হচ্ছে তারাই ক্ষুব্ধ হয়ে তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছে দলীয় কার্যালয়ে।

গত ১২ দিনে ১৬টি তালা দেওয়া হয়েছে কার্যালয়ে। ১২ দিনেও দলীয় কোন্দলের কোনো সুরাহা হয়নি। জেলা কার্যালয় এখন তালাবদ্ধ রয়েছে। এতকিছুর পরেও জেলা বিএনপি কার্যালয় দখলে নিতে পারছে না সদ্য ঘোষিত আহবায়ক কমিটি।

বিদ্রোহীদের একের পর এক তালা আর শিকলে জর্জরিত জেলা বিএনপির কার্যালয়। দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না কোনো পক্ষই। প্রতিদিনই কোনো এক পক্ষ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে যাচ্ছে। এভাবে একে একে ১৬টি তালা ঝুলছে দলীয় কার্যালয়ে। সেইসাথে শিকলও রয়েছে অসংখ্য।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় মেয়াদ উত্তীর্ণ বিএনপির জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে গত ১৫ মে সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে আহবায়ক করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট নয়া আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ ঘটনায়

পদবঞ্চিত নেতা এবং তাদের অনুসারীরা গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে ‘সংস্কারপন্থী’ উল্লেখ করে তার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে ওইদিন থেকেই বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের একাংশের নেতা-কর্মী বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছিল। এমনকি ওইদিন ইফতারের পর পরই তারা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।

ওই ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৪ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তারও আগে জেলা বিএনপির আরও দুই নেতার পদবী স্থগিত করা হয়। তারপরেও আহবায়ক কমিটি বিরোধীদের তৎপরতা থামেনি, বরং ১৬ মে বিকেলে আবারও দলীয় কার্যালয়ে তালা দেওয়া হয়। পরদিন ১৭ মে বিকেলে আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ তালা খুলে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করলেও পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা সন্ধ্যায় আবারও তালা ঝুলিয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে পদবী-স্থগিত এবং বহিস্কৃত ১৬ নেতার পক্ষে ১৬টি তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা প্রতিদিনই আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছেন। তবে সর্বশেষ ঘটনায় পুলিশ কঠোর আবস্থানে রয়েছে। সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত কোনো পক্ষকেই দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশে নিষেধ করেছে পুলিশ।

বুধবার দুপুরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির পর দুই পক্ষকেই দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ নিষেধ করে পুলিশ।

বিএনপির বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দকে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
জেলা বিএনপি যুগ্ম-আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, সমঝোতা বৈঠকের আগেই ছাত্রদল নেতা সৌরভকে মারধর করে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। এ কারণে আমরা সমঝোতা বৈঠকে বসতে রাজি না।

দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত না বসার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা এখন নির্বাচনমুখী, এ কারণে নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে যাওয়া হচ্ছে না।

সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে, বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আলী আজগর হেনা বলেন, আমরা সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে তাদের সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সেটি মানেনি। এখন সময়ই তাদের কর্মকান্ড মূল্যায়ন করবে।

জানতে চাইলে জেলা আহবায়ক জি এম সিরাজ বলেন, বগুড়ায় দলের নেতৃত্ব কীভাবে চলবে, বিএনপির একমাত্র কান্ডারি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন আহ্বায়ক কমিটি করে দিয়েছেন। এই কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানেই তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা। দলের নাম ভাঙিয়ে গুটি কয়েক ব্যক্তি দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তাঁরা আসলে দলের পদ-পদবিধারী কেউ নন।

বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিজেদের মধ্যেকার বিরোধ সহিংসতায় রুপ নিচ্ছে। এ কারণে পুলিশও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করা নিয়ে সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশ সব ধরণের পদক্ষেপ নেবে।

⇘সংবাদদাতা: প্রদীপ মোহন্ত
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top