সবই তো তোর! আমারে একটু দুই মুঠ খাবার দিস, তাতেই হবে

S M Ashraful Azom
0
সবই তো তোর! আমারে একটু দুই মুঠ খাবার দিস, তাতেই হবে
সেবা ডেস্ক: ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার দশহাজার গ্রামের আজিজ খাঁর বয়স প্রায় ৮০ ছুঁইছুঁই।  সব থাকতেও কিছু নেই আজ তার। সব সম্পত্তি লিখে নিয়েছে মেয়ে আসমা। অথচ দু’বেলা দু’মুঠো খাবারও দেয় না নিজের বাবাকে। তাই আজ পড়ন্ত জীবনে এসে হাত পাততে হয় মানুষের কাছে। শুয়ে থাকতে হয় রাস্তায়।
সদরপুর উপজেলার দশহাজার গ্রামে ৬২ শতাংশ জমির ওপর বাড়ি রয়েছে তার। পাশে আরো দুই একর ফসলি জমি রয়েছে। সম্পত্তির লোভে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন তারই একমাত্র মেয়ে আসমা। এখন ঘরবাড়ি হারিয়ে তার জীবন কাটছে পথে পথে।

আজিজ খাঁ বলেন, ‘মেয়ে আসমা ও তার স্বামী রফিক প্রায় প্রতিদিনই নানা অজুহাতে আমার ওপর নির্যাতন চালাতো। আসমার দ্বিতীয় বিয়ের পর তাকে আমি ২৩ শতাংশ জমি লিখে দেই। সেই জমির ওপরেই ঘর তুলে থাকে আসমা। তবে এখন পুরো জমির দখলের নজর তার। গত বছর আমাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

তিনি আরো বলেন, ‘এলাকার অনেকের কাছে গিয়েও আমি বিচার পাইনি। এরপর বোনের এক মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওরাও সম্পত্তি লিখে দিতে বলে। তাই জীবনের তাগিদে শহরে এসেছি। এক বছর এখানেই আছি। রাতে টয়লেটের পাশে ঘুমাই, দিনের বেলায় ভিক্ষা করি।’’

বর্তমানে আজিজ খাঁর দুটি পা ই অকেজো। বসে বসে চলাচল করতে হয়। ক্ষুধার তাড়নায় এখন দিনের বেলায় ভিক্ষা করেন তিনি। বিভিন্ন কাউন্টার ও চলাচলকারী মানুষের কাছ থেকে যা পান তা দিয়ে কোনোমতে দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে আছেন।

রাতের বেলায় কোনোমতে নিজেকে কাঁথা-কাপড়ে জড়িয়ে ফরিদপুরের পৌর বাস টার্মিনালের পাবলিক টয়লেটের পাশে শুয়ে থাকেন। গত এক বছর যাবত এভাবেই চলছে তার জীবন।


আজিজ খাঁ বলেন, গোন্ডগোলেরও (মুক্তিযুদ্ধ) আগে বিয়ে করেছিলাম। সেই স্ত্রীর ঘরে একটি ছেলে হয়। নাম নজরুল খাঁ। সেই স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই ঘরে আরো একটি ছেলে ও একটি মেয়ে জন্ম নেয়। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রী ঘর ছেড়ে চলে গেলে আবারো বিয়ে করেন তিনি। সেই ঘরে জন্ম নেয় এক মেয়ে। নাম রাখেন আসমা।

তিনি জানান, নজরুল এখন কুষ্টিয়ায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করে। দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে ঢাকায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করে। মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে। তারা কেউ এদিকে আসে না। খোঁজখবরও নেয় না।

ফলে আসমাকে নিয়েই তিনি থাকতেন। আসমা বড় হলে পাশের গ্রামের একটি ছেলেকে পছন্দ করে বিয়ে করে। তার প্রেমিক স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেলে এরপর রফিক খাঁ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

বয়সের ভারে ন্যূজ আজিজ খাঁ কথা বলেন ক্ষীণ স্বরে। ‘মরলেতো আর জায়গাজমি সঙ্গে নিয়ে যাবো না! সবই তো তোর। আমারে একটু দুই মুঠ খাবার দিস, তাতেই হবে।’’ বেঁচে থাকার জন্য এভাবেই আকুতি জানিয়েও কাজ হয়নি বলে জানান তিনি।

আজিজ খাঁ জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে আমার শরীরে এক ধরণের রোগ দেয়া দেয়। এরপর পায়ে হেটে চলার শক্তি হারিয়ে ফেলি। কোনোরকম বসে বসে চলাফেরা করতে হয়। দীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ বছর এভাবেই চলছি। তার এই কষ্টের কথা জেনে একজন তাকে পরামর্শ দেয় লিগ্যাল এইডে যেয়ে সরকারি খরচে মামলা পরিচালনার। সে অনুযায়ী তিনি মেয়ের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আসমাকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা যায়।

এ ব্যাপারে অবশ্য আসমার বক্তব্য জানা যায়নি। সাংবাদিকদের এবাপারে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তবে সদরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বাবুলের মতে, পারিবারিক এ বিষয়টিতে একপাক্ষিকভাবে শুধু আসমাকে দোষ দিলেই হবে না। আজিজ খাঁরও দোষ রয়েছে। একের পর এক বিয়ে করে তিনি অন্য সন্তানদের বঞ্চিত করেছেন। এখন যাকে বেশি ভালবেসেছেন সেই তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এব্যাপারে অবশ্য বিস্তারিত বলতে রাজি হননি তিনি।

⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top