নন্দীগ্রাম প্রতিনিধি: বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার মাঠে মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলের অপরুপ দৃশ্য। পুরো মাঠ যেন ঢেকে আছে অপার সুন্দর এক হলুদ গালিচায়। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে এসব জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌয়ালরা। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে। এই অপরুপ দৃশ্যে মুগ্ধ স্থানীয় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বিজরুল, ভাটগ্রাম, কাথম, জামালপুর, চাঁনপুর, পুনাইলসহ বিভিন্ন ফসলি জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এসব জমিতে সরিষার ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এসব ফুলের মধু আহরণে নেমেছেন পেশাদার মৌয়ালারা। তাদের বাক্স থেকে দলে দলে উড়ে যাচ্ছে পোষ্ ামৌমাছি। ঘুরে বেড়াচ্ছে এ ফুল থেকে ও ফুলে। আর সংগ্রহ করছে মধু। মুখভর্তি মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা ফিরে যাচ্ছে মৌয়ালাদের বাক্সে রাখা মৌচাকে। সেখানে সংগৃহীত মধু জমা করে আবার ফিরে যাচ্ছে সরিষার জমিতে। এভাবে দিনব্যাপী মৌমাছিরা যেমন মধু সংগ্রহ করে, আবার বিভিন্ন ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে পুরো জমির পরাগায়নেও সহায়তা করে। এ মৌসুমে মৌয়ালরা পোষা মৌমাছি দিয়ে প্রচুর মধু উৎপাদন করে যেমন লাভবান হচ্ছেন ঠিক তেমনি মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনায় চাষিরাও বাড়তি আয়ের আশা করছেন।
উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের পুনাইল মাঠে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে আসা পাবনা চাটমোহর থানার গুয়াখারা গ্রামের পেশাদার মৌয়াল আবেদ আলী, সানোয়ার হোসেন জানান, তিনি প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও পোষা মৌমাছির ১০৮টি বাক্স নিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে পুনাইলে এসেছেন। তিনি এ বছর প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ কেজি মধু সংগ্রহ করতে পারছেন।
উপজেলার থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়নের ত্রিমহুনী মাঠে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে আসা রাজশাহীর মতিহারের পেশাদার মৌয়াল জারসিস আলী জানান, তিনি ১২ দিন ধরে পোষা মৌমাছির ১২৩ টি বাক্স নিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করছেন। এখানে সরিষার ফুল থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করে তিনি যেমন লাভবান হচ্ছেন ঠিক তেমনি মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনায় স্থানীয় চাষিরাও খুশি হচ্ছেন।
কৃষি অফিস জানায়, এবার এই উপজেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার মেট্রিকটন সরিষা।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মুহা: মশিদুল হক বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লাভজনক শস্যবিন্যাস পদ্ধতিতে একই জমিতে বছরে অধিকবার ফসল ফলানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এসব উদ্ভাবনী কৌশলে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করানোর ফলে এখন অনেক জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ হচ্ছে।
এছাড়া রোপা আমন কেটে বোরো ধান রোপণের আগে একটি বাড়তি অর্থকরি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আবার ওইসব সরিষার ফুল থেকে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে লাভবান হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পেশাদার মৌয়ালরা।
⇘সংবাদদাতা: নন্দীগ্রাম প্রতিনিধি
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।