আব্দুল জলিল, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ: হিমালয়ের হিমেল হাওয়া- একরাশ কুয়াশার চাঁদর গায়ে পরে গুটি গুটি পায়ে আসে শীত। এসময় প্রকৃতিতে আসে এক শূচি-শুভ্র পরিবর্তন। ব্যবসায়ীদের অনেকে তাদের ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করে বাহারি পশরা সাজিয়ে হাটে-বাজারে- ফুটপাতে, রাস্তার গলিতে, নদীর ঘাটে, স্কুল-কলেজের মাঠের ধারে বসে চালিয়ে যায় খন্ডকালিন ব্যবসা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শীতের চাদরে মুড়ে প্রয়োজনের তাগিদে দোকান পেতে বসেছে কাজিপুরের মৌসুমি পিঠা ব্যবসায়ীরা। ভরা শীতে চলছে পিঠা বিক্রির ধূম।
গ্রামের অনেকেই মৌসুমী এই ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। তেমন একটা পুঁজি লাগেনা বলে সহজেই এ ব্যবসা শুরু করা যায়। এ ব্যবসার উপকরণ হলো জ্বালানি হিসেবে খড়ি, কিছু গুড়, আটা, নারিকেল এইসব। শীতের সকালে ও বিকেলে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এই পিঠা খায় গ্রাহকরা। তবে কেউ কেউ আবার তাদের বসার ব্যবস্থাও করে। এ ব্যবসা থেকে তারা বছরে একটা ভালো আয় করে বলে জানায়। উপজেলার ঢেকুরিয়া, সোনামুখি, শিমুলদাইড়, ছালাভরা, চালিতাডাঙ্গা, মেঘাই, উপজেলা সদর, চৌরাস্তা, সিমান্তবাজার, স্থলবাড়ি, হরিনাথপুর, ঢগঢগিয়া বাজার, পরানপুর নানা স্থানে দোকানিরা এসব পিঠার পসরা সাজিয়ে দিনমান বিক্রি করে। তবে সকাল এবং বিকেলেই বিক্রি হয় বেশি বলে জানিয়েছেন ঢেকুরিয়া হাটের পিঠা ব্যবসায়ী আবু বক্কার। কখনও দিনভর কুয়াশা থাকলে এবং সূর্য দেখা না গেলে পুরো দিনই চলে পিঠা বিক্রি।
গ্রামের হাটবারগুলোতেও জমে ওঠে পিঠার ব্যবসা। এবার শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া মাত্রই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহারি পিঠার পসরা সাজিয়ে বিভিন্ন স্থানে বসেছে। প্রায় সব শ্রেণীর মানুষকেই পিঠা খেতে দেখা যায় দোকানগুলোতে। কোথাও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবার কোথাও বসে, আবার কেউ কেউ কিনে নিয়ে যায় বন্ধুদের আড্ডায় বা সপরিবারের খাবার জন্য ঘরে। তবে এসব পিঠা শ্রমিক শ্রেণীর লোকদের কাছে খুবই প্রিয়। তাদের সারা দিনের ঘাম ঝরা পরিশ্রমের পর সন্ধ্যায় পিঠার দোকানে উনুনের পাশে বসে আনন্দের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পিঠা খেতে দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা এসময় ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, তেল পিঠা ও গুলগুলি জাতীয় পিঠা বানিয়ে বিক্রি করে থাকে। ওইসব পিঠার একেকটির দাম নেওয়া হয় প্রকারভেদে তিন টাকা থেকে দশ টাকা।
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের ঢেকুরিয়া বাজারে পিঠা ব্যবসায়ী আলম মিয়া জানান, প্রতি বছর শীত এলেই তারা পিঠার ব্যবসা করে থাকেন। শীত ঘনিয়ে এলে পিঠা ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে। প্রতিদিন পাঁচশ থেকে দেড় হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয়ে থাকে। সব শ্রেণীর মানুষ এসব পিঠা কিনে খায়। বসে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকায় সেখানে বসেই পিঠা খায়। এতে তার প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচশ’ টাকা লাভ হয় বলে জানান।
সোনামুখি বাজারের এক মহিলা পিঠা ব্যবসায়ী আনোয়ারা বেগম জানান, অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাকে সংসার চালাতে হয়। আর শীত এলে সে কাজ ছেড়ে দিয়ে পিঠা তৈরি ও বিক্রির কাজে মন দেয়। এতে হাতে বাড়তি পয়সা জমা হয়। তিনি জানান, আমার এক আত্মীয় এখন ঢাকার কোনাবাড়িতে পিঠা ব্যবসা করে জমি কিনেছে।
⇘সংবাদদাতা: আব্দুল জলিল
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।