যে ৭ কারণে বিএনপির ‘শোচনীয়’ পরাজয়

S M Ashraful Azom
0
যে ৭ কারণে বিএনপির ‘শোচনীয়’ পরাজয়

সেবা ডেস্ক: ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাজোট পেয়েছে ২৮৮টি আসন, যার ২৫৯টি আসনই এককভাবে পেয়েছে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুটি বৃহৎ জোটের ২৭ দল মিলে পেয়েছে মাত্র ৭টি আসন। দেশজুড়ে এত জনমত থাকা সত্ত্বেও বিএনপি পেয়েছে মাত্র ৬টি আসন। শুধু তাই নয়, দলের বাঘা বাঘা নেতারা জামানত খুঁইয়েছেন। বিরোধী দলও হতে পারছে না বিএনপি। এ নিয়ে বিএনপিতে বিরাজ করছে রাজ্যের হতাশা।

কয়েকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দলটির কেন এ ভরাডুবি- তা নিয়ে সর্বত্রই চলছে আলোচনা-গুঞ্জন। দলটির নেতাকর্মীরাও পরাজয়ের কারণ সন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর।

বিএনপির নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, এ নির্বাচনে পরাজয়ের পেছনে সরকার দলীয় প্রভাবকেই দুষছেন। কিন্তু এটাকে পরাজয়ের একমাত্র কারণ মানতে নারাজ দলের নেতারাও।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন- নেতৃত্বে দূরদর্শিতার অভাব, সংকটময় মুহূর্তে কৌশলী সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থতা, লেজেগোবরে সাংগঠনিক হাল, প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল, অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামাল দিতে না পারা, কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে না পারা, জোটসঙ্গীদের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা অন্তত সাতটি কারণে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির বিপর্যয় হয়েছে।

দলের প্রভাবশালী দু’জনের (খালেদা জিয়া-তারেক রহমান) নেতৃত্বশূন্যতায় অনেকটা তালগোল পাকিয়ে ফেলে দলটি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতৃত্ব দেয়ার মত যোগ্য নেতৃত্বের অভাব লক্ষ্য করা যায়। প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে দলের করণীয় নিয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত পায়নি তৃণমূল।

এছাড়া নির্বাচনী প্রচার ও কলাকৌশল নির্ধারণে বিগত সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন খালেদা জিয়া। নির্বাচনী এলাকায় তার গমনাগমন ভিন্নমাত্রা যোগ করে নেতাকর্মীদের মধ্যে। এবারের নির্বাচনে সেটি টের পেয়েছে বিএনপি।

দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা যার যার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে সঠিক সময়ে সঠিক নির্দেশনা পায়নি দলের প্রার্থীরা। হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে কেন্দ্রের নির্দেশনা না পেয়ে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন তৃণমূলের নেতারা। কেন্দ্রের নির্দেশনা না পেয়ে নির্বাচনের কয়েকদিন আগে অনেক প্রার্থী হাল ছেড়ে দেন।

ভোটের মাঠে নেতাদের না পেয়ে কর্মী-সমর্থক ও ভোটাররা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হন। প্রার্থী ও সিনিয়র নেতারা বারবার নেতাকর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মাঠে নামার নির্দেশ দিলেও তারাই মাঠে নামেনি। সবার প্রত্যাশা ছিল অন্তত ভোটের দিন নেতারা মাঠে নামবেন।

কিন্তু নির্বাচনের দিনেও তাদের সেভাবে মাঠে দেখা যায়নি। প্রার্থী ও সিনিয়র নেতাদের মাঠে না পেয়ে সাধারণ ভোটাররা ক্ষুব্ধ হন। তাই অনেকে ভোট কেন্দ্রে যাননি। যার প্রভাব পড়ে ফলাফলে। এতে হতাশ হয়েছে তৃণমূল। তাই তারা মাঠেও নামেনি।

বিএনপি নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই ভুল পথে হেঁটেছে বলে মনে করছেন দলের একটি অংশ। তারা মনে করে, নির্বাচন নিয়ে সরকারের পাতা ফাঁদে না চাইলেও পা দিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের সঙ্গে দুই দফা আলোচনার সময় কৌশলী হতে পারেনি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

অনেকে নির্বাচনেও অংশ নেয়নি। যেমন- দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরাসরি বলে দিয়েছেন খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে তিনি নির্বাচন করবেন না। তার মত আরও কয়েকজন এই অবস্থানে অনড় ছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত তারা নানা দিক বিবেচনায় ভোট করেছেন।

সিদ্ধান্ত প্রণয়নে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা সর্বনাশ ডেকে এনেছে বলে মনে করছে বিএনপির একটি অংশ। তাদের অভিযোগ বিএনপি জনমতহীন কয়েকজন নেতার পেটে ঢুকে পড়েছে। যা থেকে বের হতে পারেনি। এজন্য বারবার ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বিএনপি। যার খেসারত দিতে হয়েছে ভোটে।

নির্বাচনের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে জোটে রাখাকেও দায়ী করছেন অনেকে। বিজয়ের মাসে তাদের হাতে ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেয়াকে নতুন ভোটারদের বড় একটি অংশ ভালোভাবে নেয়নি। সুশীল সমাজসহ সচেতন নাগরিকও বিএনপির এই কৌশলকে গ্রহণ করেননি, যা ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এছাড়া যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে সুবিধাবাদী, কথিত সংস্কারপন্থী ও অন্য দল থেকে এনে অনেককে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েও কোন ফল পায়নি ত্যাগীরা।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top