Cadillacs and Dinosaurs: শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত ভিডিও গেম

S M Ashraful Azom
0
Cadillacs and Dinosaurs
সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশে নব্বই দশকের শিশু-কিশোরদের কাছে ‘মোস্তফা’ নামে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া গেমটির আসল নাম ‘ক্যাডিলাক্স অ্যান্ড ডাইনোসর্স’(Cadillacs and Dinosaurs)। অনেকেই গেমিং জগতে হাতেখড়ি হয়েছে এই ভিডিও গেমের মাধ্যমে। অন্যান্য আর্কেড গেমের মতো এই গেমটিও গেমিং সেন্টারে গিয়ে কয়েন দিয়ে খেলতে হতো। যারা নব্বই দশকে এই গেমটিতে বুঁদ হয়েছিলেন, তাদের জন্য এই আর্টিকেলে গেমটির জানা-অজানা বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো।

‘জিনোজোইক টেলস’(Geneosiac Tales) নামের এক কমিক বুক সিরিজ অবলম্বনে ১৯৯৩ সালে জাপানিজ গেম ডেভলপার কোম্পানী ক্যাপকম(Capcom) এই গেমটি বাজারে আনে। একই বছর টেলিভিশনে প্রচারিত ক্যাডিলাকস্ অ্যান্ড ডাইনোসরস (Cadillacs and Dinosaurs) নামের একটি অ্যানিমেটেড সিরিজের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করার উদ্দেশ্যে মূলত এই গেমটির জন্ম। গেমটির চরিত্রগুলো খেলতে খেলতে স্ক্রিনের বাম দিক থেকে ডান দিকে অগ্রসর হয় বলে এটাকে সাইড স্ক্রলিং (Side Scrolling) গেম বলা হয়ে থাকে। অন্যদিকে খালি হাতে শত্রুদের সাথে মারপিট করতে করতে গেমটি এগিয়ে যায় এবং বসের মুখোমুখি হতে হয়, তাই এই গেমটিকে বিট ‘এম আপ জনরায় ফেলা হয়েছে, যদিও খেলার বিভিন্ন পর্যায়ে গেমার ভিন্ন ভিন্ন কিছু অস্ত্র, যেমন মশাল, মুগুর, ছুরি, পাথর, বাজুকা, উজি, শট গান, পিস্তল, গ্রেনেড, ডিনামাইট ইত্যাদি ব্যবহার করার সুযোগ পায়। এছাড়াও গেমটির কিছু অংশে গাড়ি চালানোর সুযোগও রয়েছে।

বিংশ শতাব্দীর ৫০০ বছর পর থেকে গেমটির কাহিনী শুরু হয়। কাল্পনিক শহর ‘দ্য সিটি ইন দ্য সি’(The City In The Sea) ও তার পাশ্ববর্তী জঙ্গলকে ঘিরে কাহিনীর মূল প্রেক্ষাপট রচিত। ‘ব্ল্যাক মার্কেটার্স’ (Black Marketers) নামের একটি গ্যাং নির্বিচার ডাইনোসর শিকার করে চলেছে। কোনো এক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্টের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সেই ডাইনোসরদের। এদিকে ব্ল্যাক মার্কেটার্সদের আক্রমণের কারণে ডাইনোসরেরা হিংস্র হয়ে উঠেছে। জঙ্গলের পাশে থাকা বিভিন্ন গ্রামের মানুষদের উপর হামলা করছে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেমের হিরোরা মাঠে নামে। গেমারদেরকে সেই হিরোদের ভূমিকায় খেলতে হয়। গেমে হিরো হিসেবে মোট চারটি চরিত্র রয়েছে। তার মধ্যে তিনজন পুরুষ, একজন নারী। একেক জন হিরোর নিজস্ব শক্তি, সামর্থ্য ও দুর্বলতা আছে।

হিরোদের পরিচয়


জ্যাক টেনর‌্যাক

জ্যাক টেনর‌্যাক

১. জ্যাক টেনর‌্যাক

পেশায় মেকানিক হলেও রক্ত গরম জ্যাকের। প্রকৃতির প্রতি তার ভালবাসা কাজ করে। তার পছন্দের গাড়ি ক্যাডিলাক। জ্যাকের পিছলে দেয়া লাথিটা বেশ জোরালো। মারামারি ও দক্ষতার বিচারে জ্যাককে ভারসাম্যধারী হিরো বলা যেতে পারে।

হ্যানা ডান্ডি

হ্যানা ডান্ডি

২. হ্যানা ডান্ডি

গেমের একমাত্র নারী চরিত্র। ঠাণ্ডা মাথার বিজ্ঞানী হলেও হ্যানা পুরুষদের মতো লড়াই করতে পারে। বিভিন্ন অস্ত্রের ব্যবহার ও ত্রিমুখী লাফ দেয়ার ক্ষেত্রে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।

মোস্তফা কায়রো

মোস্তফা কায়রো

৩. মোস্তফা কায়রো

পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তবে তার দারুণ রসবোধ আছে । চিতার মতো ক্ষিপ্রগতির অধিকারী মুস্তাফার সাথে পেরে উঠতে শত্রুদের নাজেহাল অবস্থা হয়। মারপিটের সময় দৃষ্টিনন্দন এবং কার্যকরী কিছু অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায় তাকে। বাংলাদেশে মুস্তাফা চরিত্রটি এতটাই জনপ্রিয় যে, গেমটির আসল নাম বাদ দিয়ে ‘মোস্তফা’ নামেই সবাই গেমটির নামকরণ করে ফেলেছে!

মেস ও’ব্রাডোভিক

মেস ও’ব্রাডোভিক

৪. মেস ও’ব্রাডোভিক

বিশালদেহী, পেশীবহুল দানব সাদৃশ্য একজন মানুষ। মেস অন্য সব হিরোর চেয়ে সবচেয়ে বেশি শক্তি রাখে। মানুষ থেকে শুরু করে বিশালাকৃতির ডাইনোসর পর্যন্ত সবাইকে তুলে আছাড় দিতে পারে সে।

ক্যাডিলাকস্ অ্যান্ড ডাইনোসর
ক্যাডিলাকস্ অ্যান্ড ডাইনোসর

মাল্টিপ্লেয়ার অপশন সম্বলিত ক্যাডিলাকস্ অ্যান্ড ডাইনোসর(Cadillacs and Dinosaurs) গেমটিতে একসাথে সর্বোচ্চ তিনজন গেমার খেলতে পারে। উপরোক্ত চারটি চরিত্র থেকে যেকোনো তিনটি চরিত্র বেছে নিতে হবে গেমারদের। অবশ্য চাইলে একা বা দুজন মিলেও খেলা যাবে গেমটি।মোট আটটি স্টেজ নিয়ে গেমটি সাজানো হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের শত্রু ও বসদের ঘায়েল করে গেমারকে স্টেজগুলো পার করে এগিয়ে যেতে হবে।

গেমারকে খেলা শুরু করতে হয় এমন একটি স্থান থেকে যেখানে বস ভাইস টেরহিউনের পাঠানো একদল গুণ্ডা তার চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের সাথে মারপিট করে গেমারকে এগোতে হয়। সব গুণ্ডাকে খতম করার পর বস ভাইসের সামনে গিয়ে হাজির হয় গেমার। গেমার কর্তৃক আচ্ছামতো ধোলাই হওয়ার পর বিশালদেহী বস ভাইস জানায়, উত্তরদিকের জঙ্গলে বুচার নামের এক কসাই ডাইনোসর শিকার করে যাচ্ছে।
বস ভাইস টেরহিউনের পাঠানো একদল গুণ্ডা ও হিরো


তথ্য অনুসারে জঙ্গলে যাওয়ার পর গেমার এক পর্যায়ে দেখতে পায় বুচার তার দুটো ম্যাচেটি দিয়ে একটি ডাইনোসরকে নির্মমভাবে টুকরো টুকরো করছে। অবধারিতভাবে বুচারের সাথে এক ভয়ংকর লড়াইয়ে নামতে হয় গেমারকে। অনেক পরিশ্রমের পর বুচার কাবু হয়।

এরপর তৃতীয় স্টেজে গেমার হাজির হয় ডেজার্ট অব ডেথ নামের এক মরুভূমিতে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই মরুভূমিতে গুণ্ডা-পাণ্ডার পরিমাণ এতই বেশি যে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে একটি গাড়িতে চড়ে এগোতে হয়। গেমার গাড়িটিকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। ডাইনোসর শিকার চক্রের আরেক রাঘব-বোয়াল হগ, মেকানিক জ্যাকের গ্যারেজ নিজের দখলে নেয়ার পরিকল্পনা করে। গেমারকে সেদিকে এগোতে দেখে নিজের ক্রুজার বাইক নিয়ে এসে গাড়িতে গ্রেনেড হামলা করতে শুরু করে হগ। বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশলের আশ্রয় নিয়ে হগকে পরাস্ত করতে হয়।
জ্যাকের গ্যারেজ দখল করে নেয় গ্যাংস্টাররা

এই সুযোগে জ্যাকের গ্যারেজ দখল করে নেয় গ্যাংস্টাররা। তাদেরকে পিটিয়ে গেমারকে গ্যারেজটা পুনরুদ্ধার করতে হয়। অতঃপর স্লাইস নামের দ্রুতগতিতে নড়তে সক্ষম ধারালো বুমেরাংধারী এক বসের মুখোমুখি হতে হয় গেমারকে। স্লাইসকে খতম করার পর পাশ্ববর্তী গ্রাম থেকে এক বৃদ্ধ সাহায্য চেয়ে খবর পাঠায়, ডাইনোসররা তাদের গ্রামে এসে অস্বাভাবিক আচরণ করছে।

গেমার গ্রামে উপস্থিত হয়ে দেখতে পায় গ্রামবাসীদের উপর আক্রমণ করে চলেছে। গুণ্ডার পাশাপাশি ডাইনোসরদেরও শায়েস্তা করতে হয় গেমারকে। গ্রামের আরও ভেতরে ঢোকার পর দেখা যায়, কে বা কারা যেন গ্রামের ঘর-বাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এক বৃদ্ধ গ্রামবাসী এসবের পিছনে কারা দায়ী সে বিষয়ে তথ্য দিতে এগিয়ে আসামাত্র তাকে মরগ্যান নামের এক বামন উজি দিয়ে গুলি করে হত্যা করে। দেখতে বামন হলেও খুব ধুরন্ধর এই বামনকে ঘায়েল করতে গেমারকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কিন্তু বামন মরগ্যান তখনও কাবু হয়নি। প্রচণ্ড মার খাওয়ার পর সে জানায় এক ‘ডক্টর’ তাকে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী করেছে। সেই ক্ষমতার বলে মরগ্যান ডাইনোসর সদৃশ এক জানোয়ারে (যার নাম মর্গ) রূপান্তরিত হয়ে গেমারের উপর আরও নৃশংসভাবে আক্রমণ করতে শুরু করে। এই পর্যায়ে গেমার জানতে পারে, কিছু ডক্টর গবেষণা করে নতুন ধরনের প্রাণী তৈরির চেষ্টা করছে।
ডাইনোসর ও গুন্ডাদের কাছ গ্রামবাসীদের রক্ষা করছে হিরো
ডাইনোসর ও গুন্ডাদের কাছ গ্রামবাসীদের রক্ষা করছে হিরো

এভাবে গেমারকে বিভিন্ন সাই-ফাই হাইব্রিড প্রাণী ও গ্যাংস্টারদেরকে পিটিয়ে সামনের আরও চারটি স্টেজ পার হতে হবে। লাইব্রেরি, বায়ো-ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব সহ বিভিন্ন বিচিত্র সব লোকেশনের দেখা পাবে গেমার। সর্বশেষ বসের দেখা পাওয়া যাবে ডক্টর ফেসেডেনের ল্যাবে।

৩৮৪ X ২২৪ পিক্সেলের ছোট্ট এই গেমটি বর্তমান সময়ের দুর্দান্ত গ্রাফিক্স ও হাই ডেফিনেশন গেমগুলোর কাছে নিতান্ত হাস্যকর বস্তু বলে মনে হতে পারে। কিন্তু যারা এই গেম খেলে শৈশব-কৈশোর পার করে এসেছেন, শত শত বিকেল আর অবসর কাটিয়েছেন মোস্তফার সাথে, তাদের কাছে গেমটি নিঃসন্দেহে আজীবন বিশেষ একটি স্থান দখল করে থাকবে।- তথ্য:রোয়ারবাংলা
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top