আবদুল জলিল: স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ১৯৭১ সালে গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। নয়মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর আসে বাংলা নামের দেশ, লাল সবুজের পতাকা।এরপর ১৯৭২ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে সদ্য বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারেও মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন সিরাজগঞ্জের নেতারা। কিন্তু স্বাধীনতার পর এবারই মন্ত্রিহীন সিরাজগঞ্জ-পাবনা-বগুড়া।
মন্ত্রিপরিষদে নাম নেই জেলার কোনো সংসদ সদস্যদের (এমপি)। রোববার (০৬ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে নাম ঘোষণার সময় আগ্রহ নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসেছিল সিরাজগঞ্জবাসী। তবে মন্ত্রীর তালিকায় সিরাজগঞ্জের কোনো নেতার নাম না থাকায় হতাশ এখানকার আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকরা।
দিনভর পুরো সিরাজগঞ্জ জুড়ে ছিল এটাই আলোচিত বিষয়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও হতাশা প্রকাশ করেন অনেকে।
জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ বলেন, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী ছিলেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম সিরাজগঞ্জের কৃতি সন্তান শহীদ ক্যাপটেন এম মনসুর আলী। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ও পরে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন তিনি। ওই সময়ে বেলকুচি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন তালুকদারও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর পালাপরিবর্তনের পথ ধরে যমুনার জল অনেকখানি গড়িয়ে জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে মন্ত্রিত্ব পান ডা. এমএ মতিন। পরবর্তীতে এরশাদ আমলেও মন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এরপর ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে সিরাজগঞ্জ-৬ (চৌহালী) আসন থেকে নির্বাচিত আনছার আলী সিদ্দিকী প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
জনগণের রায় আবারও পাল্টে ফেলে সরকার প্রধানকে। প্রথমবারের মতো ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসেন। এসময় মন্ত্রিসভায় প্রথমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং পরে স্বরাষ্ট্র এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন কাজিপুরের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। একই সরকারে শিল্প উপ-মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন হাসিবুর রহমান স্বপন।
এরপর ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
আবারো পালাবদল ঘটে সরকার ব্যবস্থায়। ২০০৮ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। ওই সরকারে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ট উপদেষ্টা নিযুক্ত হন এইচটি ইমাম।
২০১৪ সালে মহাজোট সরকার টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ নাসিম।
আর এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৬টি আসনে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। বিপুল বিজয়ের পুরস্কার হিসেবে অন্তত একজন মন্ত্রী পাবেন এমনটাই আশা ছিল নেতাকর্মী ছাড়াও সিরাজগঞ্জবাসীর।
কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে টেলিভিশনে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্যে। তিনি যে নামের তালিকা পড়ে শোনান সেখানে বৃহত্তর-পাবনা-বগুড়া -সিরাজগঞ্জবাসির জন্যে ছিল শুধই হতাশা আর বিষাদের খোরাক। উৎসুক জনতা দিনভর টিভি সেটের সামনে এবং মোবাইলে অনলাইন নিউজ দেখতে থাকেন। আজকে শপথের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ সদস্য হিসেবে সিরাজগঞ্জের কারও নাম না থাকায় হতাশ হন দলের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তাদের হতাশা ভরিয়ে দিচ্ছে ফেসবুকের পাতাগুলোকে।
⇘সংবাদদাতা: আবদুল জলিল
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।