অটোরিক্সা চালক রবিউল ইসলামের লাশ |
নিজস্ব প্রতিনিধি: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার সামনে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে রবিউল ইসলাম আপেল (২৬) নামে এক অটৈারিকশা চালকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ ৫০ হাজার টাকা না পেয়ে পুলিশ নির্যাতন করে হত্যা করেছে। পুলিশ বলছে পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান চলার সময় নদে লাফিয়ে পড়ে মারা গেছে আপেল।
দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ওসি তদন্ত লুৎফর রহমান জানান, রোববার সন্ধ্যায় দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার সামনে পুলিশ চেকপোষ্ট বসিয়ে বিভিণœ যানবাহনে তল্লাসী চালায়।
এ সময় একটি অটোরিকশার চালককে থামার সংকেত দিলে অটোরিকশা ফেলে দৌড়ে বাজারের দিকে পালিয়ে যায় চালক। চোর সন্দেহে জনতা ধাওয়া করলে অটোরিকশা চালক আপেল নদের পানিতে লাফ দিয়ে নিখোঁজ হয়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ১২ ঘন্টা চেষ্টার পর সোমবার সকাল ৯ টায় তার লাশ উদ্ধার করে।
মৃত রবিউল ইসলাম পরিবার |
রবিউল ইসলাম আপেল দেওয়ানগঞ্জের চন্দ্রাপাড়া গ্রামের লিয়াকত আলী টনু মিয়ার পুত্র। তার বিরুদ্ধে দেওয়ানগঞ্জ থানায় মাদকের ৩টিসহ মোট ৫টি মামলা আছে। পুলিশ আপেলের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
আপেলের পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ অটোরিকশা চালক আপেলকে পুলিশ নির্যাতন করে। পুলিশের নির্যাতন থেকে বাঁচতে ব্রহ্মপুত্র লাফিয়ে পরে নিখোজ হয়। ঘটনার জন্য পুলিশকে দায়ি করে এবং বিচারের দাবি জানিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা সোমবার দুপুর ১২টায় দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানা ঘেরাও করে।
দেওয়ানগঞ্জ থানা’র সম্মুখে জনতার ভিড় |
নিহতের স্ত্রী সোহাগী বেগমের অভিযোগ, পুলিশ বিভিন্ন সময়ে তার স্বামীকে আসামী ধরে দেওয়ার জন্য চাপ দিত। ধরে না দিলো ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে আটক করে মেরে ফেলার হুমকি দিত। এর জন্য পুলিশ তার কাছ থেকে দুই দফায় ৮০ হাজার টাকাও নিয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় দেওয়ানগঞ্জ থানার এসআই মাসুদ ও পিকআপ চালক কনস্টবল আবু তালেব ফোন করে থানা মোড়ে ডেকে নেয় আপেলকে।
এ সময় তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। না দিলে ৩০০ সি ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখায়। অটোরিকশা চালক আপেল টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়।
পুলিশের নির্যাতনে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে স্থানীয় দোকানদার ও নির্যাতনকারী পুলিশ আপেলকে পানি খাওয়ায়। জ্ঞান ফিরলে পুনরায় নির্যাতন করলে আপেল দৌড়ে পালিয়ে দেওয়ানগঞ্জ বাজারের দিকে যায়। পেছন থেকে পুলিশ চোর চোর বললে বাজারের জনতাও ধাওয়া করে।
এক পর্যায়ে আপেল ব্রহ্মপুত্র নদে লাফ দেয়। পরে পুলিশ বাঁশ দিয়ে খুচিয়ে আঘাত করলে আপেল পানিতে ডুবে নিখোজ হয়। সোমবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল নদ থেকে আপেলের লাশ উদ্ধার করলে শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনে ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়। তার নাক মুখ দিয়ে ব্যাপক রক্ত ক্ষরণ হতে দেখা যায়। আপেলের স্ত্রী ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেন।
আপেলের মা রাহেলা বেগম ঘটনার পর থেকে অর্ধপাগল হয়েছে। তিনি শুধু বিচার চাচ্ছেন।
আপেলের ভাবী আমেনা বেগম অভিযোগ করেন, পুলিশ টাকা না পেয়ে তার দেবরকে ব্যাপক নির্যাতন করে হত্যা করেছে। তিনি ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। ঞটনার জন্য দায়ি পুলিশের শাস্তি দাবি করেন।
দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ওসি তদন্ত লুৎফর রহমান আপেলের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, থানার সামনে সবসময় শতশত মানুষ চলাচল করে। অপেলকে নির্যাতন করা বা তার কাছে টাকা চাওয়ার ঘটনা সঠিক না। তার পরেও পুলিশ ঘটনা তদন্ত করে দেখছে। মৃত্যুর কারন নিশ্চিত হতে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেন।