গোলাম মোস্তফা রাঙ্গা: কুড়িগ্রাম সদর উপজেলাধীন কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের ঠগরাইহাট গ্রামে মোহাম্মাদ আলী ও হামিদা বেগম-এর দ্বিতীয় সন্তান মমতাজ বেগম।
এক ভাই দুই বোন নিয়ে ছিল মমতাজদের সংসার। নবম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় ২০০১ সালে একই উপজেলাধীন কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সওদাগরপাড়ার সুরুজ্জামানের ছেলে আব্দুর রশিদের সাথে বিবাহ হয়। ফলে আর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
সেই সময় তার স্বামী খুচরা মালামালের ব্যবসায় করলেও তাদের আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যান্ত নাজুক। অভাবের সংসারেই ২০০৪ সালে প্রথম পুত্র সন্তানের জন্ম দেন মমতাজ দম্পতি। বছর না ঘুরতে পুনরায় দ্বিতীয় পুত্র সন্তানের জন্ম দেন মমতাজ বেগম। একই তো অভাবের সংসার তার উপর নতুন মুখের আর্ভিভাব। ফলে সংসার সামলাতে দিশাহারা হয়ে পড়ে মমতাজ বেগম দম্পতি।
মমতাজ এবার বের হয় স্বামীর পাশাপাশি আয়ের উৎস খুঁজতে। ২০০৮ সালের মে মাসে সওদাগর পাড়ায় আনসার-ভিডিপি ১০ দিন মেয়াদী গ্রামভিত্তিক ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হলে উক্ত গ্রামে মমতাজ বেগমও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।
সেখানে বিভিন্ন দপ্তর হতে আগত অতিথি বক্তাগণের আলোচনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মমতাজ বেগম শুরু করে তার সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ এবং সেই কাজ থেকে আসতে থাকে সামান্য কিছু আয়ও। যা সংসারের চাকা ঘুরাতে কিছুটা সহায়তা করেন। ফলে স্বামীও খুশি হয়ে তাকে উৎসাহ যোগাতে থাকে।
নিজ উদ্দ্যেগে এলাকার গর্ভবর্তী মহিলাদের স্বাস্থ্য সচেনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা, তাদের প্রসবকালীন সময় প্রয়োজনমত মাতৃমঙ্গল বা হাসপাতালে আনা-নেওয়া করাসহ এলাকার দুস্থ ও বৃদ্ধদের সমাজ সেবা অধিদপ্তর হতে ভাতা পাওয়ার বিষয়ে সহযোগীতা করেন। এলাকায় অশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত মহিলাদের শিক্ষা দানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন।
আত্মকর্মসংস্থানে বিকল্প রাস্তা বের করতে তিনি ২০১৬ সালে জুলাই মাসে কুড়িগ্রাম জেলা আনসার ও ভিডিপি কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে ৩৫ দিন মেয়াদী মোবাইল ফোন সেট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের এপ্রিল তিনি অস্ত্রসহ ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
একই বছরের তিনি ১৪দিন মেয়াদী দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণের অধিনে বন্যাকালীন সময় করণীয় শীর্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। একই বছরের মে মাসে তিনি নির্বাচন ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণেও অংশগ্রহণ করেন।
তার নিজ এলাকায় জনপ্রিয় সমাজসেবিকা হওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষের অনুরোধে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নমিনেশন দাখিল করলেও ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় তা প্রত্যাহার করে নেন।
আগামী পৌরসভা নির্বাচনে তিনি পুনরায় ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচন করবেন মর্মে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।