রোহিঙ্গা হত্যার দায় থেকে বাঁচতে বার্মা সেনাদের ঘৃন পায়তারা

S M Ashraful Azom
রোহিঙ্গা হত্যার দায় থেকে বাঁচতে বার্মা সেনাদের ঘৃন পায়তারা


সেবা ডেস্ক: মায়ানমার এ রোহিঙ্গাদের গণহত্যাকে বৈধতা দিতে এবং আন্তর্জাতিক চাপকে উপেক্ষা করতে এবার মিথ্যাচার এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।

জাতিগত নিধনের দায় নিরুপায় এবং নির্দোষ রোহিঙ্গাদের উপর চাপাতে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের কিছু ছবি ও তথ্য ব্যবহার করে ১১৭ পৃষ্ঠার বই ছাপিয়ে গণহত্যার কলঙ্ক থেকে বাঁচতে চেষ্টা করছে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তের রিপোর্টকে বিতর্কিত করে নিজেদের মিথ্যা ও অনড় অবস্থান ধরে রাখতেই এই মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী বলে আন্তর্জাতিক মহল দাবি করছে।

জানা যায়, জাতিগত ভাবে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাংলাদেশের নাগরিক দাবি করে রাখাইন রাজ্য দখল করার জন্য গণহত্যা চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। এই গণহত্যাকে মৌন সমর্থন দিয়েছেন দেশটির বিতর্কিত নেত্রী অং সাং সুকি। শুধু গণহত্যাই চালায়নি দেশটির সেনাবাহিনী, বরং জীবিত রোহিঙ্গাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতেও সংকোচ বোধ করেনি দেশটির বির্তকিত সেনাবাহিনী।

পালিয়ে আসা প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘ অত্যাচারিত সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে যখন কাজ শুরু করে দেশটির উপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করছে তখন নিজেদের পাপ ঢাকতে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার ছবি এবং তানজানিয়ার একটি ছবিকে ব্যবহার করে একটি বিতর্কিত বই প্রকাশ করেছে মিয়ানমার।

সেখানে দেখানো হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত দুই বাংলাদেশির লাশ বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসছে এবং একজন মানুষ নিড়ানি হাতে সেই লাশগুলো পাড়ে নিয়ে আসছেন। সেই ছবিকে মুসলমানদের হাতে বৌদ্ধ হত্যা হিসেবে দেখিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে বইতে।

মুক্তিযুদ্ধের অনেকগুলি হত্যাকাণ্ডের ছবি ব্যবহার করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দায়ী করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। ছবির ক্যাপশনে দাবি করা হয় যে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে বাঙালিদের হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন বৌদ্ধরা। অথচ সত্য হলো ছবি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত দুজন বাঙালির। শুধু তাই নয়, তানজানিয়ার একটি ছবি ব্যবহার করে তার ক্যাপশনে লেখা হয়েছে যে বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ বাঙালিরা মিয়ানমারে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে।

যেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। গণহত্যার দায় অস্বীকার করতে মিয়ানমারের এমন মিথ্যাচারে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। ১১৭ পৃষ্ঠার ওই বইতে রোহিঙ্গাদের হত্যাকারী এবং বাঙালি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আরো কিছু ভুয়া এবং মিথ্যা ছবি ও তথ্যের ব্যবহার করা হয়েছে।

গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করতে এবং জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তের রিপোর্টকে মিথ্যা প্রমাণ করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং রাজনীতিবিদরা একই সুরে কথা বলছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এ কারণেই মিথ্যা এবং ভুয়া ছবি-তথ্য ব্যবহার করে বই প্রকাশ করে নিজেদের দোষ এড়িয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে দেশটির সেনাবাহিনী।
 -

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top