অদ্ভুত জিবন পার করছে বাঁশখালীর শুক্কুর!

S M Ashraful Azom
অদ্ভুত জিবন পার করছে বাঁশখালীর শুক্কুর!
বাঁশখালী: শয্যাশায়ী পঙ্গু আব্দু শুক্কুর

শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:  জিবনের সুখ-সমৃদ্ধি ও পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য স্বদেশের মায়া ত্যাগ করে অন্য দশজনের মতো সুন্দর করে বাঁচতে বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের মিনজিরতলা ৫ নং ওয়ার্ডের মৃত হাজ্বী আনু মিয়ার দ্বিতীয় সন্তান আব্দু শুক্কুর (৪৫), ২০০১ সালে পাড়িজমান সুদূর সৌদিআরবে। দীর্ঘ ১০ বছর প্রবাস জিবনের এক পর্যায়ে নেমে আসে তার জিবনে করুণ চিত্র। তিনি বিদেশে টাইলস শ্রমিকের কাজ করতেন।

কাজ করতে গিয়ে অসতর্কতাবসত এক পর্যায়ে বিল্ডিংয়ের ৩য় তলার ছাদ থেকে পিছনের দিকে পড়ে যান মাটিতে। সেই থেকে আব্দু শুক্কুর জিবনের জন্য পঙ্গু হয়ে পড়েন। তবুও বেঁচে আছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১১ সালের শেষের দিকে ভারতের চেন্নাইয়ে খ্রিষ্টান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসি) দীর্ঘ তিনমাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

কোমরের মেরুদন্ড ভাঙ্গা (স্পাইনালকট ইন্জুরি) রোগে আক্রান্ত হন তিনি। ওই হাসপাতালে তার দেখা শুনা করতেন বিশেষজ্ঞ ডা. জেকাফ জুরী ও ডা. অভিষেক। ইতোমধ্যে তার অর্জিত সব অর্থসম্পদ শেষ। টাকার অভাবে সম্পূর্ণ চিকিৎসা করতে পারেনি আব্দু শুক্কুর। কোন রকমভাবে চলে আসেন স্বদেশে।

এক সময় শুক্কুর মেধাবী একজন ছাত্র ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করেন। পরে সাতকানিয়া সরকারী কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ এস সি পাশ করেন। ২০০১ সালে জীবনের তাগিদে সৌদিআরবে প্রবাস জিবনে চলে যান। ২০০৭ সালে তিনি যুগল জিবনে পদার্পন করেন। 

তাদের পরিবারে একটা কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। তাদের একমাত্র কন্যা জোবাইদা খানম নুরানী ৩য় শ্রেনীতে পড়ে। ইতিহাস এটাই বলে- সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ভালোবাসার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। মুগল সম্রাট শাহজাহান প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলকে ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে ‘তাজমহল’ নির্মাণ করেছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রিয়ার ভালোবাসার জন্য রাজসিংহাসন ত্যাগ করার ঘটনাও রয়েছে। কিন্তু জিবনের কঠিন মুহূর্তে শুক্কুরের পাশে থাকার কথা তার প্রিয়তম স্ত্রীর। 

এসময় স্ত্রী তার পঙ্গুত্ব জীবনের সাথী হতে চাননি। তাকে ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান প্রিয়তমা স্ত্রী। সু-সময়ে সবাই পাশে ছিল কিন্তু এখন কেউ নেই তার শয্যা পাশে। উঠে বসতে পারেনা তিনি। বিছানাই তার নিত্য সঙ্গি। পায়খান-প্রস্রাব বিছানায় করে। তার দেখাশুনায় স্থানীয় এক ছেলে নিযুক্ত।


এদিকে শুক্কুরের পঙ্গুত্ব জিবন থেমে নেই। বিদ্যা অমূল্য সম্পদ। অর্জিত টাকাকড়ি ফুরিয়ে গেলেও বিদ্যাসম্পদ তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। হাঁটা চলাফেরা করতে অক্ষম শুক্কুর দেশের বাড়ীতে কাহারঘোনা লালখান পাড়ায় তার পরিচালিত 'বিসমিল্লাহ কোচিং সেন্টার' নামে একটি কোচিংয়ে ৩য় শ্রেনী থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত কোচিং করান। 

সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত, হিসাব বিজ্ঞান ও ইংরেজীতে সমানভাবে পারদর্শী তিনি। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও তিনি হিসাব বিজ্ঞান পড়ান।বদ্ধঘরে তারাই একমাত্র তার আলোকিত পৃথিবী। নামায কালাম পড়ে জিবনের হায়াৎটুকু পার করছে তিনি। বিছানার পাশে বড় একটা মাটির ঢিলা। 

ওখানেই তায়াম্মুম করে ওযু সেরে নামায ও কোরা-আন তেলাওয়াৎ করে বিছানাকে সঙ্গী করে জিবন পার করছে। উঠে বসতে পারেনা অতচ ছেলে মেয়েদের পড়ান! বিষয়টি জানতে চাইলেন তিনি সেবা হট নিউজের প্রতিবেদককে বলেন- আমি হোয়াইট বোর্ডে লিখতে পারিনা, তবে ভালো লিখতে পারে এমন শিক্ষার্থীকে দিয়ে আমি লেখাই। 

তারপর আমি লম্বা ছিপ (বেত) দিয়ে মার্ক করে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দিই। তারা আমার ক্লাসে বেশ মনযোগী। বিছানায় শুয়ে শুয়ে শিক্ষাসেবায় কষ্টের জীবনকে পার করছে শুক্কুর। অনেকে অভাবের কারণে তাকে মাসিক কোচিং ফি দিতে পারেনা, তাদেরকেও তিনি ফ্রিতে পড়ান। এখন বড় একা তিনি। রাত হলে সবাই যার যার মতো বাড়ী চলে যায়, কিন্তু শুক্কুর ওই কোচিংয়ে একাই বিছানা সঙ্গি হয়ে পড়ে থাকে।

তিনি বলেন, আমি বেঁচে আছি অনেক কষ্টে। কঠিন মুহূর্তে পাশে কেউ নাই। যার থাকার কথা সেও চলে গেছে বাবার বাড়ি। তারা ৪ভাই, ৪ বোনের মধ্যে শুক্কুর দ্বিতীয়। সবাই যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্থ। শুক্কুর সুস্থ হতে চায়। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রফেসর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মো. মুনিরুজ্জমান মিয়া, শুক্কুর উন্নত চিকিৎসা পেলে সুস্থ হবেন বলে জানান। কিন্তু শুক্কুরের হারাতে হারাতে সব শেষ। নিঃস্ব পঙ্গু জিবনে কিভাবে চিকিৎসার খরচ যোগাবে যেখানে দু'বেলা আহার যোগার করতে অক্ষম। 

তিনি বাঁচতে চায়। সমাজের বৃত্তবান লোক তার পাশে দাঁড়ালে হয়তো হয়ে যাবে তার সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা। তিনি সবার সহযোগীতা কামনা করেন। তার সাথে কথা বলার ব্যক্তিগত মুঠো ফোন নং 01781-962476



⦽প্রকাশকাল: ২১-সেপ্টেম্বর-২০১৮-১৫:১০  ⇘সংবাদদাতা: শিব্বির আহমদ রানা

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top