আসমা বাসার আনসার ভিডিপি অর্কেস্ট্রারের সেরা গায়িকাদের একজন

S M Ashraful Azom
আসমা বাসার আনসার ভিডিপি অর্কেস্ট্রারের সেরা গায়িকাদের একজন
গায়িকা আসমা বাসার

গোলাম মোস্তফা রাঙ্গা: গান-আবৃত্তি-অভিনয়সহ শিল্পের সব শাখায় যার দীপ্ত পদচারণা তিনি হলেন নিভৃতচারিণী এক সংস্কৃতিসেবী আনসার ভিডিপি অর্কেস্ট্রারের অন্যতম সেরা শিল্পী আসমা বাসার।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যিনি আসমা দেবযানী নামে ব্যাপক পরিচিত। সংগীতজ্ঞ বাবা কাজী আবুল বাশারের হাত ধরে ছোটবেলা থেকেই তার সঙ্গীতচর্চা শুরু। এরপর কেটে গেছে অনেকটা সময়। এরই মধ্যে তিনি ১৫৮ সিনেমার গানে কণ্ঠ দিলেও রয়ে গেছেন নীরবে-নিভৃতে।

বাবা কাজী আবুল বাসার ছিলেন তার গানের ওস্তাদ, যিনি উত্তর কালিগঞ্জ সংগীত একাডেমি, সাতক্ষীরার প্রতিষ্ঠাতা। গানের জগতে আসা মূলত সেভাবেই। বাবা-মার দুজনেরই অনুপ্রেরণায় তিনি অনুপ্রাণিত। পরিবারে সঙ্গীতের চর্চা দেখতে দেখতে তার বড় হওয়া। ছোটবেলা থেকেই বাবা, বড় বোন, ভাই তাদের দেখে এক সময় সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার ইচ্ছা জাগে আছমা দেবযানীর।

তারপর মায়ের উৎসাহে যশোর মাইকেল সঙ্গীত একাডেমিতে সঙ্গীতে ভর্তি হন। মূলত তিনি গানের হাতেখড়ি নেন তার বাবার কাছে। এরপর ১৯৯৭ সালে ঢাকাতে চলে আসেন এবং জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক মিল্টন খন্দকারের কাছে প্রথম অ্যালবামের কাজ শুরু করেন। 
আসমা বাসারের কবিতা আবৃতি
আসমা বাসারের কবিতা আবৃতি


সব ধরনের গান গাইতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রতি তার আগ্রহীটা একটু বেশি । যখন বাবার সাথে প্রথম মঞ্চে গান করেন ‘আয় খুকু আয়’…, তখন তিনি তিনি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

বেতারে গান শুরু করেন ২০০৪ সালে এবং বিটিভিতে ২০০১ সালে। তবে মঞ্চে বাবার সাথে যেদিন প্রথম গান করেছিলেন সেদিনটি আজও তার মনে ভীষণভাবে ভালোবাসার স্থান দখল করে আছে।

সেদিনের অনুভূতি’র কথা মনের করে তিনি হারিয়ে যান ছোট বেলায়। তিনি ২০০১ সালে ‘যোদ্ধা’ সিনেমাতে ৫টি গান গাওয়ার জন্য ফিল্ম মুভমেন্ট থেকে সেরা গায়িকার পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৩ সালে আনসার ও ভিডিপি থেকে সোনার মেডেল অর্জন করেন। ২০১৭ সালে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত একাডেমি থেকে পুরস্কার পান। 
ষ্টুডিও এ্যামবারে আসমা বাসার
ষ্টুডিও এ্যামবারে আসমা বাসার


শখের বশে তিনি আবৃত্তি শুরু করেন। কিন্তু সবার অনুপ্রেরণায় এখন আবৃত্তি তার ভীষণ ভালোবাসার স্থান দখল করে নিয়েছে।

ইতিমধ্যে তিনি জাগৃতি প্রকাশনী থেকে ২০১৭ সালে একুশে বইমেলায় কবি নিপা লায়লার ‘নৈঃশব্দের গান’ কবিতার বই থেকে ১২টি কবিতা এককভাবে আবৃত্তি করেছেন।

এছাড়া অনলাইন গ্রুপ ‘পেন্সিল’ থেকে একটি কবিতার সিডি বের হয়েছে ঐ জাগৃতি প্রকাশনী থেকে। সেখানেও তার আবৃত্তি আছে। তবে সবার ভালোবাসাই তার কাছে বড় পুরস্কার।

তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘যোদ্ধা’ সিনেমার ৫টি গানই, এরপর ‘ভেজা বেড়াল’, ‘টাকা’, ‘লাল সবুজ’, ‘বকুল ফুলের মালা’ সিনেমার গান। তবে তার বেশি পছন্দ ‘টাকা’ সিনেমার গান- ‘সৃষ্টিকর্তা উপরে নিচে আছো তুমি আর কিছুতো চাই না আমি’। 
লাল নিল পোষাকে আসমা বাসার
লাল নিল পোষাকে আসমা বাসার


তিনি আরো জানান “একজন শিল্পীর কাছে শ্রোতাদের অনেক প্রত্যাশা থাকে, সেই অর্থে তিনি শ্রোতাদের প্রত্যাশা হয়তো পূরণ করতে পারিনি। তবে চেষ্টা করেছি, জানি না কতটুকু সফল হয়েছি”।পর্দার আড়ালে থাকা এই গুণী মানুষ আসমা দেবযানী অন্যদের মত নিজের গান ও কবিতা সংরক্ষণ দিয়ে অত্যান্ত সংকিত।

তিনি জানান, “১৫৮টি সিনেমাতে গান করেছি। কিন্তু যখন তিনি তার গানগুলো সংরক্ষণ করতে চেষ্টা করি, তখন অনেকাংশে বিফল হই”। কোম্পানিগুলো উক্ত গানগুলো সংরক্ষণ করে না। তাই সম্মিলিতভাবে চেষ্টা না করলে কারো একার পক্ষে গান-আবৃত্তি সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় বলে হতাশা প্রকাশ করেন।

জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক মিল্টন খন্দকারের নিকট তার প্রথম এ্যালবাম “মন প্রেমে পরিসনা” কাজ করার সময় বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মনির খান ও কণ্ঠশিল্পী সুজনের সাথে পরিচয় হয়। তাদের কাছে তিনি জানতে পারেন যে আনসার বাহিনীর অর্কেস্ট্রারে শিল্পীদের জন্য কাজ করার উপযোগী ক্ষেত্র। 

কণ্ঠশিল্পী মনির খান ও সুজনের সহযোগীতায় ২০০৮ সালে আনসার বাহিনীর অর্কেস্ট্রারে অডিশনের জন্য ডাক পান। অডিশনে ভালভাবেই উর্ত্তীণ হওয়ার সুবাদে ২০০৯ সালের ৫ মে সংঙ্গীত শিল্পী হিসেবে আনসার বাহিনীর অর্কেস্ট্রারে প্রবেশ করেন। শিল্পী হিসেবে করলেও ২০১৪ সালে চাকরীতে স্থায়ী হয় মহিলা আনসার হিসেবে।

বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মনির খানের সাথে তিনি যে সব সিনেমায় কণ্ঠ দেন তা হলো “মানিক বাদশা, স্বপ্ন পুরণ, জ্বলছে কেন আগুন, বকুল ফুলেল মালা এবং নায়ক মান্নার শেষ সিনেমা দুদিনের দুনিয়া”।
ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিষয়ে ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে আসমা বাসার
ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিষয়ে ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে আসমা বাসার


তিনি একদিকে যেমন সঙ্গীতকে ভালবেসে সকলের মনে আনন্দ দিতে চান, তেমনি তিনি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিয়েও ভাবেন। সেই ভাবনায় ২০১০ সালে যশোরের বিসিএমসি প্রকৌশলী মহাবিদ্যালয় হতে ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিষয়ে ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স্ সম্পন্ন করেন। একজন প্রতিষ্ঠিত প্যাথলিজড হওয়ার ইচ্ছায় এখন ঢাকার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইম এশিয়ায় ৪ বছর মেয়াদী বিএসসি কোর্স্-এ অধ্যায়ণরত আছেন।

প্রত্যেকটি শিল্পীর একটি স্বপ্ন থাকে তিনি একজন প্লেব্যাক সিঙ্গার হবেন। সেক্ষেত্রে আসমা দেবযানী অনেকটাই সফল। ২০০০ সালে প্রথম সিনেমা যোদ্ধাতে তিনি প্লেব্যাক কিং এন্ড্রু কিশোরের সাথে গান করেন। এযাবৎ তিনি এন্ড্রু কিশোরের সাথে প্রায় বিশটি সিনেমায় গান করেছেন। ছাড়াও তার সাথে প্লেব্যাক করা বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পীরা হচ্ছেন আব্দুল হাদি, সুবির নন্দী, কুমার বিশ্বজিত, আগুন, আসিফ আকবর, পলাশ, মনির খান।

তিনি প্রায় ৫০টির বেশি বিজ্ঞাপনেও কন্ঠ দিয়েছেন। তারমধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য বাংলাদেশ মেলামাইন, ক্লাইফোর্ট্ ঘড়ি, শান্তা প্রিন্ট শাড়ী, ডলফিন দেশলাই, আলিবাবা লাচ্ছা সেমাই, শাহাজালাল হাউজিং ইত্যাদি।
উপস্থাপিকা আসমা বাসার
উপস্থাপিকা আসমা বাসার


তিনি সংবাদ পাঠিকা এবং উপস্থাপিকা হিসেবে অন-লাইন টিভি মিলিনিয়াম ইউএস-এ যুক্ত ছিলেন। চাকরী এবং পড়াশনার কারণে আপাতত তিনি এই বিষয়টি হতে বিরত আছেন। তবে ভবিষ্যতে তার ইচ্ছা আছে সংবাদ পাঠিকা এবং উপস্থাপিকা হিসেবে ভাললাগার জায়গাটিতে পুনরায় কাজ করবেন।

আনসার ভিডিপি বাহিনীর অবদান তিনি কখনোই ভুলবেন না বরং সারাজীবন শ্রদ্ধাচিত্রে স্মারণ করবেন। কারণ আনসার বাহিনীর অর্কেস্ট্রা তার সঙ্গীত জীবনে এমন একটি প্লাটফর্ম্ যেখান থেকে তিনি তার সঙ্গীত জীবনকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন।



#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top