আমার গরুর গাড়ীতে বউ সাজিয়ে, দুত্বর দুত্বর দুত্বর দু সানাই বাজিয়ে।
প্রিয় পাঠক, গরু হলো নিরব একটি প্রানী,যার কোন শত্রু নেই, ইহা গৃহপালিত পশু, বলদ হলে হাল চাষ আর গাভী হলে দুধপান, আপ্পায়নে যেখানে সেখানে গরু চাই, গরু খাই, গরুর কোন জুড়ি নাই।
প্রিয় পাঠক তেমনি আমিও ১৯৯৬ সালে আমার বড় বোনের কাছ থেকে একটি গরু এনে ছিলাম সখ করে, গুরু যখন এনে ছিলাম তখন সে সিংগেল ছিল , পরে তার কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে লাল রংগের ছেলে সন্তান, তার নাম রেখেছি লালু , সেই লালুকে দীর্ঘ দিন লালন করার পরে মাশাল্লা বেশ মোটা তাজা হয়, এই বাড়ির - ও বাড়ির সবাই লালুকে দিয়ে নানান ধরনের কাজ করাতো বিনিময়ে খৈল, ভুষি দিয়ে যেত।
এই ভাবে দেখতে দেখতে লালু অনেক বড় হয়ে গেছে, এই ফাঁকে আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয় কালির ঘরে, আমি ঢাকা চলে যাই নাটকের কাজে, এই ফাঁকে আমার পরিবারের লোকজন প্রিয় লালুকে কোরবানির হাটে নিয়ে বিক্রি করে দেয়।
আমি বাড়ি এসে লালুকে দেখতে না পেয়ে দু চোখের কোনে পানি ধরে রাখতে পারিনি, জিজ্ঞাসা করলাম লালুকে বিক্রি করা হল কেন, উত্তরে বলা হল লালু যখন যাকে পায় সিং দিয়ে ঢুশ মারে, লালুর সিং এর গুতোয় একজন আহত হয়, তাই তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।
লালুর বিক্রির শোক কাটতে কাটতে কালির ঘরে জন্ম নেয়া কন্যা সন্তান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে দ্রুত ডাক্তার চান মিয়াকে নিয়ে এলাম, তিনি তার অবস্থা দেখে কিছু বনাজী পানিয় জাতীয় দাওয়াই দেন, তা খেয়ে ভুলু সুস্থ হলেও কিছু দিন যেতে না যেতেই সে আবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে আমাদের ছেড়ে চীর বিদায় নেন, সন্তান হারিয়ে প্রিয় কালির চোখে পানি দেখে আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
দীর্ঘ দিন পরে কালির ঘরে আবার আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম নেয়।
তার নাম লাইলি, লাইলে দেখতে বেশ, ওর দুস্টামিতে মাঝে মাঝে নিজেই হাফিয়ে উঠতাম, মায়ের সাথে যখন মাঠে যেত এর জমি ওর জমিতে গিয়ে যা পেত তাই খেয়ে ফেলত, এ নিয়ে আশে পাশের লোকদের সাথে ঝগড়া হত, দেখতে লাইলি বড় হয়ে গেল তার ঘরেও জন্ম নেয় নতুন সন্তানের।
কিছু দিন যেতেই পবিত্র ঈদুল আযহার কোরবানির হাটে কালিনিকে বিক্রি করে দেয়া হয়, আমি বাড়ি ছিলামনা।
দুর প্রবাসে চলে আসার পরেই কালিনিকে বিক্রি করে দেয়া হয়, কালিকে যে দিতাম সে তাই খেতো, মানুষদের কোন ক্ষতি করাতো না,সে ছিল শান্ত স্বভাবের, তাকে সবাই ভালোবাসতো, শুধু একটি অপরাধে তাকে কোরবানির হাটে বিক্রি করা হল কালির বয়স বেড়ে গেছে, সে আগের মতচলতে পারেনা, ঠিক যেমন সন্তান বড় হলে তার বাবা মাকে বৃদ্ধা আশ্রমে দিয়ে আসেন।
আজোও কালি মানে সেই গরুর ভালোবাসা ভুলতে পারিনি, তার রেখে যাওয়া সন্তান রয়েছে, যাকে আমার মেঝো ভাই খোরশেদ আলম লালন পালন করছে। দুর প্রবাসে বসেও একটি দিনের জন্য গরুর ভালোবাসা ভুলতে পারিনি।
লেখক-
মোঃ জাহাঙ্গীর অালম হৃদয়
প্রবাসী সাংবাদিক ও নাট্যকার
প্রবাসী সাংবাদিক ও নাট্যকার