সেবা ডেস্ক: ১৯৭১ সাল। ২৩ মার্চ। পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে বাংলার ঘরে ঘরে উঠেছে লাল সবুজের পতাকা। এদিকে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা চলছে। এম এ ওয়াজেদ মিয়া তাঁর শ্বশুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ বইয়ে লিখেছেন, ‘ওই দিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে গম্ভীরভাবে খাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, “এত দিন ধরে যে আলাপ-আলোচনা করলে, তার ফলাফল কী হলো কিছু তো বলছ না। তবে বলে রাখি, তুমি যদি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সমঝোতা করো, তবে একদিকে ইয়াহিয়া খানের সামরিক বাহিনী সুবিধামতো সময়ে তোমাকে হত্যা করবে, অন্যদিকে এ দেশের জনগণও তোমার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হবে।”
এ কথা শুনে বঙ্গবন্ধু রাগান্বিত হয়ে শাশুড়িকে বলেন, “আলোচনা এখনো চলছে, এই মুহূর্তে সবকিছু খুলে বলা সম্ভব না।” এই পর্যায়ে শাশুড়ি রেগে গিয়ে নিজের খাবারে পানি ঢেলে দ্রুত ওপরতলায় চলে যান। তিনি না খেয়ে সারা দিন শুয়ে থাকলেন, কারও সঙ্গে কথা বললেন না।’
এই একটা ঘটনাই তো যথেষ্ট, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বেগম মুজিবের ভূমিকা কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বোঝার জন্য। সহজ কথা—তুমি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে জনগণ তোমার কাছ থেকে সরে যাবে, তখন জান্তা তোমাকে মেরে ফেলতে পারবে। কাজেই আপস কোরো না। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, তোমার চাই স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধুও তা-ই বলেছেন, বারবার, এমনকি নির্বাচনের আগেও, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি বাংলার মানুষের অধিকার চাই। আর গেরিলাযুদ্ধ যে করতে হবে, এটা বঙ্গবন্ধু জানতেন, ঢাকাস্থ আমেরিকান কনস্যুলার কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে সেটা তিনি আগেই বলে রেখেছিলেন।
বেগম মুজিব পান খেতেন। তাঁর পানের বাটায় সুন্দর করে পান-সুপারি-মসলা সাজানো থাকত। আঁচলে নিশ্চয়ই থাকত এক গোছা চাবি। বাংলার নারীর স্নিগ্ধ রূপটিই আমরা তাঁর মধ্যে দেখতে পাই। কিন্তু রাজনৈতিক প্রশ্নে কী রকম দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতার পরিচয় তিনি দিয়েছিলেন, ভেবে ভেবে আশ্চর্য হতে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আর সবার সঙ্গে তাঁকেও হত্যা করা হলো।
শেখ রেহানা আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি তাই আপাকে বলি, আপা, আমরা তো মায়ের চেয়ে বেশি দিন বাঁচলাম।’ মাত্র ৪৪ বছর বয়সে বেগম মুজিব পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।
-