শাহরাস্তিতে নিহত জল্পনা ভট্টাচার্য্য |
ষ্টাফ রিপোটার: চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তিতে স্বামী ও পরিবারের নির্যাতনে জল্পনা ভট্টাচার্য্য (৪০) নামে এক গৃহবধু মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় গৃহবধুর ভাই প্রবীর চন্দ্র চক্রবর্তী (৪৫) শাহরাস্তি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
নিহত গৃহবধুর পরিবার, স্থানীয় এলাকাবাসী, মামলার এজাহার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শাহরাস্তি পৌর সদরের ঠাকুর বাজারস্থ নিজমেহার সর্বানন্দ ঠাকুর বাড়ির ধীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্যরে পুত্র বিমল ভট্টাচার্য্য প্রকাশ পিন্টু’র (৪৫) সাথে ২০০৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সনাতন ধর্মানুসারে মানিকগঞ্জ জেলাধিন মানিকগঞ্জ সদর থানার হিজলী গ্রামের শিববাড়ির বিমলেন্দু চক্রবর্তীর কণ্যা জল্পনা চক্রবর্তীর বিবাহ হয়।
তাদের সাংসারিক জীবনে জয়শ্রী ভট্টাচার্য্য (১২) নামে একটি কণ্যা সন্তান রয়েছে। ১৪ বছর সাংসারিক জীবনে কণ্যা সন্তান ব্যতিত কোন পুত্র সন্তান জন্ম দিতে না পারায় বিমল ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রায়শঃ জল্পনাকে মানসিক নির্যাতন করতো। এরই মাঝে বিমল ভট্টাচার্য্য ব্যক্তিগত মুঠোফোনে অজ্ঞাত বিভিন্ন মেয়েদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে। যা তার স্ত্রী জল্পনার দৃষ্টিগোচর হয়।
জল্পনা বিষয়টি নিয়ে বিমলের সাথে ব্যক্তিগত ভাবে ও পরিবারের সদস্যদের অবগত করে। এতেই শুরু হয় তার উপর অমানুষিক নির্যাতন। দিনের পর দিন নির্যাতনের মাত্র বেড়ে যাওয়ায় সে ওই বিষয়গুলো তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে মুঠোফোনে অবগত করে।
ঘটনার দিন গত ২৪ জুলাই ২০১৮ সকালে মুঠোফোনে দীর্ঘসময় কথোপকথনের বিষয়টি নিয়ে বিমলের সাথে জল্পনার বাকবিতন্ডা হয়। সকালে নাস্তার সময় বাকবিতন্ডার কারণে উত্তেজিত বিমল নাস্তা না খেয়েই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। তার খোঁজে স্ত্রী জল্পনা পিছু নিলে তাকে না পেয়ে প্রতিবেশি লেয়াকত হোসেন পাটোয়ারীর নিকট পুরো বিষয়টি অবহিত করে। কিছুক্ষন পর বিমল বাড়িতে ফিরে এসে প্রতিবেশিকে কেন তাদের পারিবারিক বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এ নিয়ে জল্পনাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পুনরায় বাকবিতন্ডা শুরু হয়।
তাদের বাকবিতন্ডায় বিমলের পক্ষ নিয়ে বোন মিনা ভট্টাচার্য্য ও বড় ভাই অমল ভট্টাচার্য্য জল্পনাকে মারধর করে আহত করে। জল্পনাকে গুরুতর আহতাবস্থায় শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হলে তার অবস্থার অবনতি দেখে প্রথমে কুমিল্লায় পরে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে ওইদিন রাত ১০টায় ভর্তি করা হয়।
দীর্ঘ ১ মাস স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় গত ২৪ আগষ্ট ২০১৮ সকাল ১০টা ৪৫মিনিটে মৃত্যুবরণ করে। পরে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ লাশের সুরৎহাল করে সোহরাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬ আগষ্ট নিহতের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়না তদন্ত শেষে ওইদিনই নিহতের স্বামীর পরিবার লাশ গ্রহন করে রাতের আঁধারে পাশবর্তি হাজিগঞ্জ উপজেলার মহাশ্মশানে শেষকৃত সম্পন্ন করে।
পরদিন ২৭ আগষ্ট নিহতের ভাই প্রবীর চন্দ্র চক্রবর্তী বাদি হয়ে শাহরাস্তি মডেল থানায় ভগ্নিপতি বিমল ভট্টাচার্য্য প্রকাশ পিন্টু, পিন্টুর বোন মিনা ভট্টাচার্য্য (৬০) ও ভাই অমল ভট্টাচার্য্যকে (৫২) আসামি করে একটি হত্যা মামলা রুজু করে। যার নং-১৫।
নিহতের ভাই মামলার বাদি প্রবীর চন্দ্র চক্রবর্তী মুঠোফোনে জানান, আমার বোন জল্পনা গুরুতর অসুস্থ্য জানিয়ে ভগ্নিপতি বিমল আমাদের দ্রুত কুমিল্লায় আসতে বলে। আমি ও আমার অন্য ভাই প্রদ্যুৎ চক্রবর্তী, প্রনব চক্রবর্তী ও প্রহল্লাদ চক্রবর্তী কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইলে পুনরায় বিমল আমাদের জানায় তাকে কুমিল্লা মুন হসপিটাল থেকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে আমাদেরকে ঢাকায় অবস্থান করার জন্য বলে।
পরবর্তীতে তাকে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওই সময় আমার বোন জল্পনা সম্পূর্ণ ঘটনার বিস্তারিত আমাদের অবহিত করে। ওই সময় জল্পনা জানায় ঘটনার সময় বিমল ভট্টাচার্য্য তার বোন মিনা ও ভাই অমলের সহযোগিতায় মারধর করে জোরপূর্বক ফ্লোর ক্লিনার ভিক্সল খাইয়ে দেয়। আমরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারিনি।
তিনি আরো জানান, লাশের ময়না তদন্ত শেষে বিমলের পরিবারের লোকজন লাশ গ্রহন করে নিজ এলাকা শাহরাস্তিতে দাহ না করে পাশবর্তি হাজিগঞ্জ উপজেলায় মহাশ্মশানে রাতের আঁধারে দাহ কার্য্য সম্পন্ন করে। বিষয়টি অধিক সন্দেহের সৃষ্টি করে। এছাড়া থানায় মামলা দায়েরের পর আমার মুঠোফোনে বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন করে মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
আমরা বোনের মৃত্যুর সঠিক কারণ ও অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।সরজমিনে বিমলের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে বেশ ক’বার চেষ্টা করেও তাদের কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে ঘটনাটি নিয়ে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকায় কথিত রয়েছে জনৈক নার্সের (সেবিকা) সাথে বিমলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জেরে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলে আসছে।
এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে এলাকার কয়েক ব্যবসায়ি ও প্রভাবশালী মিলে দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানামুখি গালগল্প ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
-
-